বাবরি মসজিদের জায়গায় হবে রামমন্দির: ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

আইনি লড়াইটা শুরু হয়েছিল ১৩৪ বছর আগে। হিন্দু  ও মুসলমানদের মধ্যে টানাপোড়েনটা চলছিল তারও অনেক আগে থেকে। পাঁচ শতাব্দী ধরে চলতে থাকা এই জটিলতার সমাপ্তি ঘটুক- এবার চাইছিল সব পক্ষই। সম্প্রতি ভারতের প্রধান বিচারপতিও স্পষ্ট বার্তা দিয়েছিলেন— আর চলতে দেওয়া যায় না এই দড়ি টানাটানি। অবশেষে ইতি পড়ল সে দড়ি টানাটানিতে।

অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ তৈরি হওয়ার ৪৯১ বছর পরে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের বিচারকরা জানালেন সেখানে রামমন্দির নির্মাণ করা হবে। আর মসজিদ নির্মাণ করা হব অন্যত্র।

শনিবার সকালে দেওয়া এই রায়ে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত ওয়াকফ বোর্ডের আর্জি এবং নির্মোহী আখড়ার বিতর্কিত জমির ওপর দাবি দুটোই খারিজ করে দেন।

আদালত রায়ে বলা হয়েছে, পৌনে ৩ একরের ওই স্থানে মন্দির হবে, তবে তা হবে একটি ট্রাস্টের অধীনে। ওই জমিতেই বাবরি মসজিদ ছিল। আর মসজিদের জন্য কাছাকাছি অন্য স্থানে ৫ একর জমি দিতে হবে সরকারকে।

আদালতের রায়ে বলা হয়, মসজিদের নিচে স্থাপনা থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে এটি মন্দির কি না, তা নিশ্চিত নয়।

শনিবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ভারতের বহুল আলোচিত এই মামলার রায় পড়া শুরু করেন ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈর নেতৃত্বে গড়া পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ। এ রায় ঘোষণাকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ২০ অক্টোবর থেকে অযোধ্যা শহরে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে।

রায়ের শুরুতেই প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ ওয়াকফ বোর্ডের আর্জি এবং নির্মোহী আখড়ার বিতর্কিত জমির ওপর দাবি খারিজ করে দেন।

তারপর তিনি বলেন, ‘আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার (এএসআই) তথ্যনুযায়ী ফাঁকা জায়গায় বাবরি মসজিদ নির্মাণ হয়নি। তবে মাটির নিচে থাকা স্থাপনাটি ঠিক কী ছিল, তা এএসআই সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেনি।

‘যেহেতু বিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়ে জমির মালিকানা ঠিক করা সম্ভব নয়, তাই আইনের ভিত্তিতেই জমির মালিকানা ঠিক করা উচিৎ। আপাতত কেন্দ্রীয় সরকার ওই জমির মালিকানা পাবে। কেন্দ্রকে তিন মাসের মধ্যে বোর্ড অব ট্রাস্ট গঠন করে তাদের হাতে বিতর্কিত জমি তুলে দিতে হবে। ট্রাস্টের তত্ত্বাবধানেই বিতর্কিত ২.৭৭ একর জমিতে মন্দির নির্মাণ হবে।’

‘সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড ওই জমিতে অধিকার দাবি করতে পারবে না। তবে তারা মসজিদ নির্মাণের জন্য বিকল্প জমি পাবে। অযোধ্যার কেন্দ্রের কোথাও তাদের পাঁচ একর জমি দেওয়া হবে এবং সেখানে তারা মসজিদ নির্মাণ করতে পারবে।’

কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের বিশ্বাস, উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় ভগবান রামচন্দ্র জন্মেছিলেন। তার জন্মস্থান বলে চিহ্নিত জায়গায় ষোড়শ শতকে মোগল সম্রাট বাবরের আমলে একটি মসজিদ তৈরি হয়। নাম দেওয়া হয় বাবরি মসজিদ। মন্দির ভেঙে মসজিদ তৈরি নিয়ে সেই থেকে হিন্দু-মুসলিম যে বিরোধ চলছিল, ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর তা অন্যদিকে বাঁক নেয়। ওই দিন কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা বাবরি মসজিদ ধ্বংস করেন। এ নিয়ে সৃষ্ট সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় অন্তত দুই হাজার লোক নিহত হয়। সেই থেকে বাবরি মসজিদের ২ দশমিক ৭৭ একর জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধিতা শুরু হয়। এলাহাবাদ হাইকোর্ট ওই জমি বিবদমান তিন পক্ষ রাম লালা, সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড ও নির্মোহী আখড়ার মধ্যে সমানভাবে ভাগ করার নির্দেশ দেন। তবে সেই নির্দেশ চ্যালেঞ্জ হয় সুপ্রিম কোর্টে।

আগামী ১৭ নভেম্বর দেশের প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসর নিচ্ছেন রঞ্জন গগৈ। তিনি আগেই জানিয়েছিলেন, অবসর নেওয়ার আগেই তিনি অযোধ্যার বিতর্কিত জমি মামলার রায় দিয়ে যেতে চান। সেই অনুযায়ী তার নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ গঠন করা হয়।

 

টাইমস/এসআই

Share this news on:

সর্বশেষ

img

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায়

হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে তৃতীয় দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ আজ Dec 07, 2025
img
ছোটপর্দায় কাজ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম: অলিভিয়া সরকার Dec 07, 2025
img
ঠাকুরগাঁও-২ আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ Dec 07, 2025
img
নেতানিয়াহুর দেশকে সতর্কবার্তা সিরিয়া প্রেসিডেন্টের Dec 07, 2025
img

২০২৬ বিশ্বকাপ

কখন হতে পারে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ম্যাচ? Dec 07, 2025
img
লা লিগায় আজ রাতে মাঠে নামছে রিয়াল মাদ্রিদ ও সেল্তা ভিগো Dec 07, 2025
img
ভারতে নাইটক্লাবে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে পর্যটকসহ নিহত ২৩ Dec 07, 2025
img
আজ পরীক্ষায় ফিরছেন প্রাথমিক শিক্ষকরা Dec 07, 2025
img
রাসায়নিক দিয়ে পাকানো কলা চেনার উপায় Dec 07, 2025
img
এক দফা দাবিতে আজ সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের পদযাত্রা Dec 07, 2025
img
সেন্ট মার্টিনে পরিবেশ রক্ষায় অভিযান, অপসারিত ১৮৫০ কেজি বর্জ্য Dec 07, 2025
img
অবশেষে ফুরোচ্ছে তানজিকা আমিনের দীর্ঘ অপেক্ষা Dec 07, 2025
img
নরসিংদীতে স্পিনিং মিলের তুলার গোডাউনে ভয়াবহ আগুন Dec 07, 2025
হাসিনাকে নিয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান ভারতের সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে হবে: জয়শঙ্কর Dec 07, 2025
ভিভিআইপি ফ্লাইট CL-604 পেলো ঢাকায় নামার অনুমতি Dec 07, 2025
ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধ্বসে ইন্দোনেশিয়া-শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডে প্রানহানি প্রায় ১৮০০ Dec 07, 2025
পোষ্য কোটা ইস্যুতে যা বললেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা Dec 07, 2025
জাকসুর বাজেট বিতর্ক: বরাদ্দ আর প্রাপ্তিতে বড় ফারাক Dec 07, 2025
১০ মিনিটে গোটা বিশ্বের সারাদিনের সর্বশেষ আলোচিত সব খবর Dec 07, 2025
img
নির্বাচনের তফসিল নিয়ে সভা আজ Dec 07, 2025