আফগানিস্তানে ৩৯ নিরস্ত্র কারাবন্দি ও বেসামরিক লোককে পরিকল্পিত ভাবে ঠান্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করেছে অস্ট্রেলীয় সেনারা। গত চার বছর ধরে চলা তদন্তের পর এক প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর এ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।
ওই নির্দেশনা ঘেটে দেখা গেছে, ‘রক্তপাতে’ অভ্যস্থ অস্ট্রেলীয় সেনাদের দিয়ে প্রথমে নিরাপরাধ কাউকে হত্যা করানো হতো। এরপর পরিকল্পিত ভাবে চালানো হতো হত্যাকাণ্ড।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, যুদ্ধের জন্য ‘রক্ত’ ঝরাতে প্রতিরক্ষাহীন বন্দিদের হত্যা করতে অস্ট্রেলীয় সেনাদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছিলেন দেশটির সিনিয়র কমান্ডররা।
বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) অস্ট্রেলিয়ার তৈরি করা এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ২০০৫ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে আফগানিস্তানে অস্ট্রেলীয় বাহিনীর ফৌজদারী অপরাধ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে এসব তথ্য প্রকাশ পেয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
অস্ট্রেলীয় সেনাবাহিনীর জেনারেল অ্যাঙ্গুস জন ক্যাম্পবেল বলেছেন, ২৩টি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনায় অস্ট্রেলীয় বিশেষ বাহিনীর সেনাদের হাতে আফগানিস্তানে ৩৯ জন বেসামরিক ও নিরস্ত্র মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে।
ক্যাম্পবেল আরও বলেন, ‘যুদ্ধের উত্তাপের’ বাইরে গিয়ে এসব হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে। সামরিক আচরণ ও পেশাগত মূল্যবোধ লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে অস্ট্রেলীয় সেনাদের বিরুদ্ধে।
এদিকে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অস্ট্রেলীয় বাহিনীর হাতে হত্যার শিকার আফগান নিরস্ত্র ও বেসামরিক লোকদের নানা অজুহাতে ধরে আনা হতো। এরপর ঠান্ডা মাথায় তাদের প্রত্যেককে গুলি করে হত্যা করা হতো। অস্ট্রেলীয় সেনাদের এধরণের বর্বরতা ও সামরিক শিষ্ঠাচার বহিঃর্ভূত আচরণের শিকার হয়েছেন আফগানিস্তানের নিরীহ বন্দি, কৃষক, শিশুরা।
অবশ্য এই প্রতিবেদন প্রকাশের আগেই অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেছিলেন, এই তদস্ত প্রতিবেদন অস্ট্রেলীয় সেনাদের জন্য শক্ত ও কঠিন সংবাদ নিয়ে আসতে পারে।
এদিকে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অস্ট্রেলীয় বাহিনী নিরস্ত্র ও বেসামরিক লোকদের হত্যার পর একটি কৃত্রিম যুদ্ধ সাজাতেন। যে যুদ্ধে বিদেশী অস্ত্র ও সরঞ্জাম দিয়ে একটি কৃত্রিম লড়াইয়ের ময়দান তৈরি করতেন। এরপর নিজেদের কৃতকর্মকে বৈধ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতেন।
প্রসঙ্গত, তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের অংশ হিসেবে ২০০২ সাল থেকে আফগানিস্তানে অস্ট্রেলিয়ান সেনারা অবস্থান করছেন। দেশটিতে এখনও দেড় হাজার অস্ট্রেলীয় সেনা নিয়োজিত রয়েছে।
টাইমস/এসএন