মাটির বিস্কুট তাদের ক্ষুধা মেটায়

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার একটি লাইন- ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি। এই ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে মানুষ কত কিছু না খেয়ে ফেলেন।

ক্ষুধার তাড়নায় মানুষ ডাস্টবিন থেকে খাবার তুলে খাওয়ার দৃশ্য আমাদের কাছে নতুন নয়। কিন্তু কখনো কি শুনেছেন বা দেখেন ক্ষুধার জ্বালায় মানুষকে মাটি খেতে? তেমনি একটি মধ্য আমেরিকার দেশ হলো হাইতি। দেশটিতে উল্লেখসংখ্যক মানুষ মাটির তৈরি বিস্কুট খেয়ে তাদের ক্ষুধা মেটায়।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি অধিদপ্তরের মতে, প্রতিবছর খাদ্য অপচয়ের পরিমাণ প্রায় ১.৩ বিলিয়ন টন, যা ৭৫০ মিলিয়ন ইউএস ডলারের সমপরিমাণ। অন্যদিকে হাইতির মত দেশের দরিদ্র লোকেরা খাবারের অভাবে ক্ষুধার জ্বালা মেটাচ্ছেন মাটির তৈরি বিস্কুট খেয়ে।

তেলের মূল্যবৃদ্ধিসহ সার, সেঁচের ও পরিবহন প্রভৃতি কারণে বিশ্বজুড়ে খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য সমূহের মূল্যবৃদ্ধির ফলে দরিদ্র লোকের জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ।

তবে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ অঞ্চলে এই অবস্থা খুবই ভয়াবহ, কারণ তাদেরকে খাদ্য আমদানির উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকতে হয়। ফলে স্থানভেদে খাবারের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে গড়ে ৪০ শতাংশের মত। এছাড়াও ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মতো বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রায়শই তাদের শস্য নষ্ট হয়ে যায়।

হাইতির এমন একটি দেশ, যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকের আয় দিনে ২ ডলারের কম; সেখানে স্বাস্থ্যকর খাবার স্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই নয়। আর তাই বাধ্য হয়েই পুষ্টিকর খাবারের পরিবর্তে মাটি খেয়েই খালি পেট ভরাতে হয় তাদের। মাটি দিয়ে পেট হয়তো ভরানো যায় কিন্তু তাতে পুষ্টির চাহিদা মেটানো কখনো সম্ভব হয় না।

এবিষয়ে হাইতির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক ড. গাব্রিয়াল থিমোথী বলেন, “আমাকে বিশ্বাস করুন, যদি কাউকে ওইসব বিস্কুট খেতে দেখি আমি সেটা খেতে মানা করব।”

ষোল বছর বয়স্ক চারলেনে, যিনি হাইতির দরিদ্রতর একটি বস্তিতে বসবাস করেন। মাটির বিস্কুট সম্পর্কে তিনি বলেন, “যখন আমার মা কিছু রান্না করেন না তখন আমি দিনে তিন বেলাই মাটির বিস্কুট খেয়ে থাকি।”

মারিয়া নোয়েল নামের একজন ব্যবসায়ী মাটির বিস্কুট বিক্রি করেন। এই অর্থ দিয়ে তার সাত সদস্যের সংসার চলে। তিনি এবিষয়ে বলেন, “আমি আশা করছি এক সময় আমার কাছে পর্যাপ্ত খাবার থাকবে, ফলে তখন আমাকে আর এসব খেতে হবে না।”

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
কোনো শক্তি তারেক রহমানকে ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না : প্রিন্স Oct 22, 2025
img
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়াতে ৬ শর্তে সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয় Oct 22, 2025
img
‘বাংলাদেশি কর্মীদের ভিসা দিচ্ছে না কাতার’ শীর্ষক প্রচারণাটি গুজব Oct 22, 2025
img
আওয়ামী লীগের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি মানা সম্ভব নয়: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা Oct 22, 2025
img
চিকিৎসার পাশাপাশি সুরের ভুবনে ঝংকার তুলছেন আনিসুর রহমান রানা Oct 22, 2025
কখন শুরু হয় জুমুয়ার নামায Oct 21, 2025
টানাপোড়ন এর সেটে গান গাইলেন তাসনুভা তিশা ও জাহের আলভি Oct 21, 2025
সালমান শাহর মৃত্যু তদন্তে নতুন অধ্যায়, আসামির তালিকায় স্ত্রী সামিরা Oct 21, 2025
‘জুলাই সনদ’ ইস্যুতে জামায়াত-এনসিপির দূরত্ব Oct 21, 2025
সচিবালয়ে সিদ্ধান্ত, শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা ১৫% Oct 21, 2025
‘ফাইল ছেড়ে দিন প্লিজ’ প্রধান উপদেষ্টাকে সারজিস আলম Oct 21, 2025
নবীন শিক্ষার্থীদের কুরআন উপহার দিয়ে সংবর্ধনা জানাল ছাত্রশিবির Oct 21, 2025
হাঁসই বদলে দিয়েছে ভাগ্য, স্বপ্ন এখন বাস্তব! Oct 21, 2025
পুরোদমে নির্বাচনী মেজাজে বিএনপি, প্রার্থী চূড়ান্তে নির্দেশ তারেক রহমানের Oct 21, 2025
img
কোনো চাঁদাবাজ-গডফাদারকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না : মোস্তফা জামান Oct 21, 2025
img
বিএনপি ক্ষমতায় এলে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি হবে : আফরোজা Oct 21, 2025
img
চট্টগ্রামে আ.লীগ কার্যালয় ভাঙচুরের পর দখলে নিল এনসিপি Oct 21, 2025
img
ঋতুপর্ণারা ব্যাংককে, কুয়েতে তপুরা Oct 21, 2025
img
এক বছর পর দীপাবলিতে মেয়ের ছবি শেয়ার করলেন দীপবীর Oct 21, 2025
img
শিক্ষকদের অবহেলা করে কোনো দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয় : মুজিবুর রহমান Oct 21, 2025