নতুন বছরে কাজ শুরু হবে আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রোরেলের

২০২০ সালের প্রথম দিকেই শুরু হবে দেশের প্রথম আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রোরেল প্রকল্প এমআরটি-১ এর কাজ। বর্তমানে এর নকশা চলছে। ইতোমধ্যে ভূমি জরিপ ও সম্ভাব্যতা যাচাই কাজ শেষ করেছে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে এ প্রকল্পটির কাজ।

প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৫১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা-জাইকার ঋণ ৩৩ হাজার ৯১৪ কোটি ১১ লাখ টাকা। ২০২৬ সালের ডিসেম্বর নাগাদ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, মেট্রোরেল প্রকল্প এমআরটি-১ এর আওতায় রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর  ও নতুনবাজার থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত মোট ২৭ দশমিক ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এলাইনমেন্ট ঠিক করা হয়েছে।

আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রোরেল প্রকল্পের (এমআরটি লাইন-১) কারিগরি সহায়তায় পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহায়তায় প্রকল্প পরামর্শকের দায়িত্ব পালন করছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।

এমআরটি লাইন-১ এর আওতায় যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে দিয়ে বিমানবন্দর ও পূর্বাচল এ দুটি রুটে মেট্রোরেল নির্মাণ করা হবে। বিমানবন্দর রুটটি আন্ডারগ্রাউন্ড ও পূর্বাচল রুটটি এলিভেটেড হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এমআরটি-১ এর আওতায় বিমানবন্দর ও পূর্বাচল নামে দুটি রুটে মোট ২৬ দশমিক ৬০ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে আন্ডারগ্রাউন্ড ১৬ দশমিক ৪০ কিলোমিটার ও এলিভেটেড ১০ দশমিক ২০ কিলোমিটার।

বিমানবন্দর রুটটি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হতে শুরু করে বিমানবন্দর টার্মিনাল ৩, খিলক্ষেত, যমুনা ফিউচার পার্ক, নতুন বাজার, উত্তর বাড্ডা, বাড্ডা, হাতিরঝিল, রামপুরা, মালিবাগ, রাজারবাগ হয়ে কমলাপুর যাবে। এ রুটে স্টেশন থাকবে ১২টি। এর মধ্যে নতুন বাজার স্টেশনে এমআরটি-৫ এর সঙ্গে আন্তঃসংযোগ থাকবে।

অপরদিকে পূর্বাচলগামী রুটটি নতুন বাজার থেকে যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা হয়ে পুলিশ অফিসার্স হাউজিং সোসাইটি, মাস্তুল, পূর্বাচল পশ্চিম, পূর্বাচল সেন্টার, পূর্বাচল সেক্টর-৭ হয়ে পূর্বাচল টার্মিনাল পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।

১০ কিলোমিটার দীর্ঘ পূর্বাচল রুটে বিমানবন্দর রুটের অন্তর্ভুক্ত নতুন বাজার ও যমুনা ফিউচার পার্কের আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশন দুটিসহ মোট ৯টি স্টেশন থাকবে। এর মধ্যে বসুন্ধরা থেকে পূর্বাচল টার্মিনাল পর্যন্ত ৭টি স্টেশন হবে এলিভেটেড।

এ বিষয়ে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক (সিভিল, ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানিং এন্ড ইউটিলিটি) মো. মাহবুব উল আলম বাংলাদেশ টাইমসকে বলেন, চলতি বছরের শুরুতে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগে এমআরটি লাইন-১ এর ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। এমআরটি-১ এর জন্য রিভাইস স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানে (আরএসটিপি) রুট নির্ধারিত ছিল ৫২ কিলোমিটার।

মো. মাহবুবুল আলম আরো জানান, গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি)পৃথক লেন করার পরিকল্পনা থাকায় পিইসিও ওই সভায় বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত ২০ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার রুট বাতিল করা হয়। ফলে এ রুটে মেট্রোরেল নির্মাণ করা হবে না।

জানা গেছে, বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর ও পূর্বাঞ্চল থেকে নতুনবাজার এই পথটির প্রস্থে কোথাও ২০ মিটার আবার কোথাও ৩০ মিটার পর্যন্ত ভূমির প্রয়োজন হবে। রেলপথটি মাটির নিচ দিয়ে হলেও খিলগাঁও ও মালিবাগে তা মাটির উপর দিয়ে যাবে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, এ প্রকল্পের আওতায় ৭৮টি যানবাহন কেনা হবে। এর মধ্যে ২৬টি জিপ, ২৪টি ডাবল কেবিন পিকআপ ও ২৮টি মোটরসাইকেল। এ বাবদ মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় যানবাহন রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ২ কোটি, ইউটিলিটি স্থানান্তর বাবদ ৭০০ কোটি, ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন খাতে ২ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

এছাড়া প্রকল্পের আওতায় বৈদেশিক ঋণে সুদ দিতে হবে ১ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা। পরামর্শক খাতে ৫ কোটি ও প্রশিক্ষণ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় সেমিনার, কর্মশালা ও সম্মেলনে দেড় কোটি টাকা রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয় ৫১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এরমধ্যে জাইকা ঋণ ৩৩ হাজার ৯১৪ কোটি ১১ লাখ টাকা। প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ চলতি সময় থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত পাতাল মেট্রোরেল নির্মিত হবে। এই রুটে টিকিট কাটা থেকে শুরু করে সবকিছুই হবে আন্ডারগ্রাউন্ডে। তবে নতুনবাজার থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত মাটির উপর দিয়ে মেট্রোরেল নির্মিত হবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকার ও জাইকার মধ্যে প্রকল্পের আওতায় ঋণ চুক্তিসই হয়েছে। এ ঋণে সুদের হার শূন্য দশমিক ৯০ শতাংশ। যা ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩০ বছরে পরিশোধযোগ্য।

এদিকে মেট্রোরেল নির্মাণ হলে রাজধানীর যানজট অনেকটাই কমে আসবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ঢাকা নগরীর যানজট প্রকট আকার ধারণ করেছে। পাতাল রেল হলে যানজট কিছুটা কমে আসবে, যাত্রীদের সময় বাঁচবে। এমআরটি-১ এর আওতায় ১৬ দশমিক ৪০ কিলোমিটার রেলপথ আন্ডারগ্রাউন্ডে নির্মিত হবে।

সূত্র জানায়, জাপানের নিপ্পন কোই কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে সাতটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কারিগরি সহায়তায় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর মধ্যে জাপানের দুটি, ভারতের তিনটি, ফ্রান্সের একটি ও বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এমআরটি-১ এর বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন ও টেন্ডার কাজে সহায়তা করবে। ৫৭৮ কোটি টাকার এ প্রকল্পের চুক্তি মূল্য ৫১৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।


টাইমস/টিআর/এমএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
আ.লীগ নেতাকর্মীদের দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর Apr 26, 2024
img
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ চুয়েট, খোলা থাকবে হল Apr 26, 2024
img
প্রথমবার এশিয়া কাপে আম্পায়ারিং করবেন বাংলাদেশের জেসি Apr 26, 2024
img
গাজায় ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কারে লাগতে পারে ১৪ বছর : জাতিসংঘ Apr 26, 2024
img
বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী Apr 26, 2024
img
চলমান তাপপ্রবাহ রেকর্ড ভেঙেছে ৭৬ বছরের Apr 26, 2024
img
অলসতা কাটিয়ে সকালে ঘুম থেকে উঠতে করণীয় Apr 26, 2024
img
বাংলাদেশে চিকিৎসা সুবিধায় থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী Apr 26, 2024
img
চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি Apr 26, 2024
img
সেন্সর বোর্ডে আটকে গেল রায়হান রাফীর নতুন সিনেমা ‘অমীমাংসিত’ Apr 26, 2024