বহুল প্রচলিত প্রবাদ ‘মোটা মাইনসের বুদ্ধি থাকে হাটুর নিচে’! মোটা বলতে যাকে বলা হয় স্থুল। প্রচলিত এসব প্রবাদের বাস্তবতাও একেবারে অস্বীকার করা জো নেই। স্থুল মানুষের বুদ্ধি হাটুর নিচে থাকে, তার মানে তাদের হয়তো বুদ্ধি একটু কম থাকে। কথাটি ঠিক, আবার ভুল।
প্রথমত, স্থুল মানুষগুলো একটু অলস প্রকৃতির হয়। যে কারণে তারা শুয়ে বসে আরাম আয়েশে সময় পার করেন। যে কোনো কিছু তারা সিরিয়াসলি না নিয়ে গুরুত্বহীন করে ফেলেন। ভালো করে মাথা ঘামান না কোন কাজ নিয়ে। ফল স্বরুপ, মস্তিষ্ক না ব্যবহার করায় তারা কর্মক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়ে যান। আর দোষ গিয়ে পড়ে শুধু তার শরীরের ওপর। সবাই বলে, মোটা মানসের বুদ্ধি থাকে হাটুতে। তাই সে কোনো কাজেই সফল না।
ভাবতে পারেন, শিরোনামের সঙ্গে প্রবাদের প্রাসঙ্গিকতা কোথায়? প্রাসঙ্গিকতা আছে। বহুল আলোচিত সমালোচিত প্রতারণা জগতের ডন সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম গ্রেপ্তার হয়েছেন। সাহেদ একজন আপাদমস্তক ভদ্রলোক। বলা যেতে পারে, তিনি সফল প্রতারক। প্রতারণার নিয়তে তিনি যে কাজেই হাত দিয়েছেন তাতেই সফল হয়েছেন।
টিভি টকশো থেকে শুরু করে নিশীরাতের কালো আড্ডার টেবিলে সাহেদ ছিলেন এক দূর্দান্ত ব্যক্তিত্ব। শরীরের ভাঁজে ভাঁজে তার অলসতার উপাদান থাকলেও তিনি বাংলা প্রবাদ ‘স্থুল মানসের বুদ্ধি থাকে হাঁটুর নিচে’ মিথ্যে প্রমাণ করেছেন। দেশের চিকিৎসা, শিক্ষা, রাজনীতি, গণমাধ্যমসহ বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রগুলোতে তিনি আরামসে প্রতারণার জাল বিছিয়ে গেছেন। কেউ টু শব্দটুকুও বোঝে নি।
নাদুস নুদুস গোলগাল চেহারার সাহেদকে দেখে বুঝার উপায় নেই তিনি কতটা ধুরন্ধর প্রকৃতির। টিভি টকশোতে তার নীতিবাক্য দেখে কেউ ধারণাও করতে পারবে না, সাহেদ প্রতারক সম্রাট।
আসুন প্রমাণ করি, স্থুল সাহেদের বুদ্ধিমত্তা স্থুল নয়। দেখুন, তিনি বিশেষ বিশেষ রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যক্তিদের আশেপাশে ঘেঁষে কৌশলে সেলফি তুলে রেখেছেন। সেই সব ছবি নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করেছেন। এতে তার সামাজিক স্ট্যাটাসের উচ্চতা ছড়িয়ে পড়েছে।
দেশের স্বাস্থ্য বিভাগসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের যার যা লাগবে তাকে তাই দিয়ে ম্যানেজ করার কৌশল জানা ছিল সাহেদের। ক’জন পারে বলুন? স্থুল মাথায় যে এত বুদ্ধি তা কি এখনও প্রমাণ করতে হবে?
আচ্ছা, দেখুন। তিন দিন আগে মৌলভীবাজার সীমান্তে হুলুস্থুল পড়ে গেল যে, সাহেদ ওই সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু বাস্তবে তাকে আবিষ্কার করা হলো সাতক্ষীরার শেষ সীমান্তে। তিনি সরকারের গোয়েন্দা বিভাগের তথ্য প্রযুক্তির সিস্টেম সম্পর্কে অবগত ছিলেন। তাই হয়তো তিনি তার স্মার্ট ডিভাইস মৌলভীবাজারে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। আর সাহেদ নিজে দৌড়েছেন সাতক্ষীরার পথে। কত চতুর বুদ্ধি থাকলে একজন মানুষ এতটা খেলা খেলতে পারে?
সাতক্ষীরায় গিয়ে সাহেদ তার সখের শাহী গোফ কেটে ফেলেন। মাথার চুল কেটে ছোট করেন। চুলে লাগানো সখের সাদা রং কালো করেন। এরপর ক্রয় করেন বোরকা। ফেরারী একজন মানুষ এমন কঠিন সময়েও যে চুল, গোফ নিয়ে ভাবতে পারেন তা সত্যিই অবাক করার মত। সাহেদ স্থুল হলে হবে কি, তার বুদ্ধি মোটইে স্থুল নয়।
আসলেই সাহেদের বুদ্ধি স্থুল নয়, সাহেদদের বুদ্ধি স্থুল হয়না। আমাদের আশেপাশে এরকম অনেক সাহেদ আছে। যাদের পেশীশক্তি আর জুজুর ভয়ে তটস্থ অনেকেই। অধরা এসব সাহেদরা দেখতে স্থুল হলেও তাদের বুদ্ধি ও অপকর্ম মোটেই স্থুল নয়।
টাইমস/এসএন