দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসিসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসিসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে চাকরিজীবী এক নারীকে অপহরণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। মামলার আসামিরা হলেন- কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন (৫৫), ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তুহিন রেজা (৪০), রাহাত ওরফে ডাকাত রাহাত (৩৫), জি এম সারোয়ার (৫৫), দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) শাহাদাত হোসেন, ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আশিকুজ্জামান ও অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহ জামান। মামলায় আরও চার-পাঁচজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

বুধবার ঢাকার চার নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক তাবাসুম ইসলামের আদালতে এ মামলা করেন কেরানীগঞ্জের এক নারী। তিনি পার্লারে চাকরি করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পুলিশকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

মামলার অভিযোগে বাদী উল্লেখ করেন, কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা ইউনিয়নের মীরেরবাগে দুই কন্যাসন্তান নিয়ে তিনি বসবাস করেন। চলতি বছরের ৩০ জুন তিনি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে গণধর্ষণের শিকার হন। এ ঘটনায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(৩) ধারায় একটি মামলা চলমান রয়েছে। গত ৫ জুলাই গণধর্ষণ মামলার এক নম্বর আসামি ইকবাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গণধর্ষণ মামলার অপর আসামিরা তিন পুলিশের সহায়তা নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং তাকে ও সাক্ষীদের মামলা তুলে নেয়ার জন্য চাপ দেয়।

অভিযোগে আরও বলেন, ২১ জুলাই তাকে অস্ত্রের মুখে হত্যার হুমকি প্রদান করে তার দুই সন্তানকে রুমে তালাবদ্ধ করে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। তিনি তাদের নগদ দশ হাজার টাকা দেন। বিষয়টি তিনি মোবাইলে তিন পুলিশ সদস্যকে জানান। এরপর তাকে মামলার আসামি ডাকাত রাহাতসহ আরও চার-পাঁচজন অপহরণ করে ইকবাল চেয়ারম্যানের তেলঘাটের অফিসে নিয়ে যায়। এরপর তারা তাকে একটি গাড়িতে তুলে পল্টন থানাধীন বিজয়নগর সাইমন স্কাইভিউ টাওয়ারের সাততলায় একটি কক্ষে তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। ইকবাল চেয়ারম্যান, জি এম সারোয়ার ও তুহিন রেজাসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন ওই রুমে প্রবেশ করে। তাদের শেখানো কথা তার মুখ দিয়ে বলিয়ে তা রেকর্ড করে নেয়। এরপর তাকে হুমকি দেয় ধর্ষণ মামলা তুলে না নিলে তার নামে ও সাক্ষীদের নামে অনেক মিথ্যা মামলা দেয়া হবে।

অভিযোগে বাদী বলেন, ২৩ জুলাই ইকবাল চেয়ারম্যান, তুহিন রেজা ও জি এম সারোয়ারের হুকুমে রাহাত ডাকাত তাকে আবারও অপহরণ করে নিয়ে যায়। তিনি মামলার আসামি তিন পুলিশকে অবগত করেন। পুলিশ তাকে নিরাপত্তা না দিয়ে উল্টো তাদের সাথে চলে যেতে বলেন। এরপর তারা তাকে নজরুল ইসলাম সরণির আক্রাম টাওয়ারের লিফটের সাততলার একটি রুমে বসায়। তারপর সেখান থেকে নিয়ে রমনা থানা এলাকার একটি মদের বারে নিয়ে বসায়। ইকবাল চেয়ারম্যান, তুহিন রেজা ও জি এম সারোয়ার তাকে বলে ২৬ জুলাই কোর্টে গিয়ে ২২ ধারায় জবানবন্দি দিতে নয়তো অবৈধ মাদকদ্রব্য দিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেবে। এরপর তারা তিন পুলিশকে তাকে ২২ ধারায় জবানবন্দি করোনার কথা বলে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয়।

অভিযোগে বাদী আরও বলেন, ২৬ জুলাই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন তার বাসায় এসে রাহাত ডাকাতসহ অজ্ঞাতনামা চার-পাঁচজনের হাতে তুলে দিয়ে বলে যে, ‘ওকে কোর্টে নিয়া যাবি। ও যেন পালাতে না পারে।’ এরপর কড়া পাহারার মধ্যে তাকে কোর্টে নিয়ে সাত-আটটি কাগজে স্বাক্ষর নেয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বেলা ১২টার দিকে কোর্টে এসে তাকে বলে যে, ‘যদি চালাকি করিস তবে তোর মেয়ে দুটোকে জীবনের তরে হারাতে হবে। ইকবাল চেয়ারম্যানের লোক দিয়ে তোর মেয়েদের হত্যা করে ফেলব।’ তিনি নিরুপায় হয়ে তাদের শেখানো কথা আদালতের কাছে বলেন। এরপর মামলা তদন্ত কর্মকর্তা তাকে গেন্ডারিয়া ফাঁড়িতে নিয়ে বেশকিছু কাগজপত্রে স্বাক্ষর নিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেয়।

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ১৬০০ মিটার দৌড় : দুই তারকা ক্রিকেটারসহ অনুপস্থিত পাঁচ Apr 20, 2024
img
তীব্র তাপদাহে পুড়ছে দেশ, যশোরে রেকর্ড তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি Apr 20, 2024
img
লেবুপানি খাবেন যে কারণে Apr 20, 2024
img
চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪২.৩, হিট স্ট্রোকে একজনের মৃত্যু Apr 20, 2024
img
সর্বোচ্চ বাড়িয়ে কমল স্বর্ণের দাম Apr 20, 2024
img
উপজেলা নির্বাচনকালে আ.লীগের সব রকম কমিটি গঠন ও সম্মেলন বন্ধ : কাদের Apr 20, 2024
img
যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদন : ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪০৭ Apr 20, 2024
img
পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার রেকর্ড ২৭ বস্তা টাকা Apr 20, 2024
img
মালয়েশিয়ায় শোষণের শিকার বাংলাদেশি শ্রমিকরা : জাতিসংঘ Apr 20, 2024
img
শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর, সাধারণ সম্পাদক ডিপজল Apr 20, 2024