স্কুলশিক্ষিকা এত নির্মম, সৎ মায়ের নির্যাতনে মানসিক রোগী তিথি!

সবেমাত্র অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছে ইসরাত জাহান তিথি। আর দশটা ছাত্রীর মতই স্বাভাবিক জীবনযাপন করছিল সে। মেধাবী ছাত্রী হওয়ার পাশাপাশি খেলাধুলা ও নাচগানেও বেশ পারদর্শী ছিল তিথি। তবে বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করায় পাল্টে গেছে তার জীবন। সৎমায়ের অত্যাচারে তিনি এখন মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন। একজন স্কুলশিক্ষক হয়েও তিথিকে নিয়মিত খুন্তির ছ্যাকা দিতেন সৎমা। ঘটনাটি কুমিল্লা দেবিদ্বার উপজেলার। তিথি এখন চান্দিনায় উপজেলায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। তিথি দেবীদ্বারের বরকামতা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য জামাল হোসেনের মেয়ে।
এদিকে নির্যাতনের ঘটনায় তিথির খালু সামছুল হক ভ‚ইয়া বাদী হয়ে সোমবার রাতে চান্দিনা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। খবর পেয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন সৎ মা মাহমুদা সুলতানা লাভলী। তিনি দেবীদ্বার উপজেলার প্রেমু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়- দেবিদ্বার উপজেলার বরকমতা গ্রামের জামাল হোসেন (৪৫) সেনাবাহিনীতে চাকরির সময় দেবিদ্বার উপজেলার জাফরাবাদ (সীমারগুড়ি) গ্রামের আমেনা খাতুন তিন্নিকে বিয়ে করেন। দাম্পত্য জীবনে তিথি ও আবু মুছা নামে দুই সন্তান জন্ম নেওয়ার পর ২০১৫ সালে প্রথম স্ত্রী তিন্নি মারা যান। মা মারা যাওয়ার পর তিথি ও মুছা বাড়িতে চাচির কাছে বড় হতে থাকে। এদিকে সেনা বাহিনী থেকে অবসর নেওয়া জামাল হোসেন ২০১৭ সালে স্কুল শিক্ষিকা লাভলীকে বিয়ে করে চান্দিনায় ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করেন। সৎ মা লাভলী কোন ভাবেই মেনে নিতে পারেনি তিথি ও মুছাকে।

চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি জামাল হোসেন পুলিশের হাতে আটক হন। কারাগারে থাকায় তিন্নি ও মুছা সৎ মায়ের সাথেই বসবাস করছিল। বাবার অবর্তমানে তিথিকে তুচ্ছ বিষয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতে থাকে সৎ মা লাভলী। কথায় কথায় মারধর, দেয়ালের সাথে ধাক্কা, খুন্তির ছ্যাঁকাসহ নানা শারীরিক, মানসিক ও অমানবিক নির্যাতন চলে তার উপর। চলতি মাসের ১ অক্টোবর কাজ করতে না পারার অযুহাতে তিথিকে বেধরক পিটিয়ে গায়ে খুন্তি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাঁকা দেয় লাভলী। এতে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে দেবীদ্বার উপজেলার বাগমারা ইসলামীয়া আলিম মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া তিথি।

গত ২ অক্টোবর খালু সামছুল হক ভূঁইয়া এসে চান্দিনার রূপনগরের ভাড়া বাসা থেকে তিথিকে নিয়ে যান ময়নামতি সেনানিবাস সংলগ্ন ঘোষনগর উদয়নবাগ এলাকার নিজ বাসায়। সেখানে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করান খালু সামছুল হক। কিন্তু তখনও তিনি জানতেন না তিথির সারা শরীরে ক্ষত! মানসিক ভারসাম্যহীন থাকায় তিথিও কিছু বলতে পারছিল না। গত ১২ অক্টোবর তিথি বাথরুমে গোসল করার সময় খালাতো বোনের চোখে পড়ে তার সারা শরীরের ক্ষতের চিহ্ন।

তিথির চাচী বরকামতা জাগরনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা রওশন আরা আক্তার জানান, তিথি ছোট বেলা থেকে খুব মেধাবী ছাত্রী ছিল। পড়াখেলার পাশাপাশি খেলাধুলা ও নাচ-গাণেও বেশি পারদর্শী ছিল। একাধিকবার উপজেলা পর্যায়ে পুরস্কৃত হয়। আমার কাছে থাকা অবস্থায়ও সে সুস্থ ছিল। কিন্তু গত ৮-৯ মাসের নির্যাতনে সে সম্পূর্ণ মানসিন ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে।

চান্দিনা থানার ওসি শামসউদ্দিন মোহাম্মদ ইলিয়াছ জানান, আহত তিথিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় শিশু নির্যাতন দমন আইনে চান্দিনা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

 

টাইমস/জেকে/এসএন

Share this news on: