শয়তান ভর করায় ভাই ভাবি ভাতিজিকে গলাকেটে হত্যা

সাতক্ষীরার কলারোয়ায় একই পরিবারের চারজনকে গলাকেটে হত্যার ঘটনার রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। গত ১৪ অক্টোবর উপজেলার খলসি গ্রামে হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনা ঘটে। পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডে জড়িত নিহত শাহিনুর রহমানের ছোট ভাই রায়হানুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বুধবার বিকেল ৫টায় হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচন নিয়ে সিআইডি সাতক্ষীরা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন সিআইডির খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি ওমর ফারুক।

ডিআইজ ওমর ফারুক বলেন, পারিবারিক বিরোধের জেরে পরিকল্পিতভাবে বড় ভাই, ভাবি ও দুই ভাতিজা-ভাতিজিকে গলাকেটে হত্যা করার কথা স্বীকার করেছেন রায়হান। রায়হানুল বলেছেন, ‘শয়তান আমার ওপর ভর করেছিল। তাই আমি এটা করেছি।’

সিআইডির এই কর্মকর্তা আরও জানান, সন্দেহজনক হিসেবে নিহত শাহিনুর রহমানের ছোট ভাই রায়হানুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। দোষ স্বীকার করে হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন রায়হানুল।

ডিআইজি জানান, শাহিনুর রহমানের ছোট ভাই রায়হানুল ইসলাম বেকার ঘুরে বেড়াতো। তার কোনো রোজগার ছিল না। ৯-১০ মাস আগে তার স্ত্রীও তাকে ছেড়ে চলে গেছে। এরপর থেকে বড় ভাই শাহিনুর রহমানের সংসারেই সে থাকতো। কাজ-কর্ম না করে বেকার ঘুরে বেড়ানো নিয়ে ভাই-ভাবি তাকে মাঝে মাঝে বকাঝকা করত।

গত ১৪ অক্টোবর বুধবার রায়হানুলের ভাবি তাকে গালমন্দ করে। গালমন্দ শুনে ভাবিকে হত্যার পরিকল্পনা করে রায়হান। এরপর ওইদিন সন্ধ্যায় পার্শ্ববর্তী দোকান থেকে ঘুমের ওষুধ ও কোমলপানীয় কিনে আনে সে। আর সেই কোমলপানীয়র মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে ভাই-ভাবিসহ বাড়ির সবাইকে খাওয়ায় রায়হান। এরপর রাত দেড়টার দিকে বড় ভাই শাহিনুর রহমান মাছের ঘের থেকে বাড়ি আসে। তখন রায়হানুল টিভি দেখছিল। তখন শাহিনুর ছোট ভাই রায়হানুলকে বকাবকি করে। এর একটু পরে আরেকটি কোমল পানীয়র মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে শাহিনুরকে খাওয়ায় রায়হানুল।

ছবি- ঘাতক রায়হানুল ইসলাম

পরে রাত ৩-৪টার দিকে একটি তোয়ালে নিয়ে গায়ে বাড়ির ছাদ দিয়ে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে রায়হানুল। ঘরে ঢুকেই বড় ভাই শাহিনুর রহমানকে ঘুমন্ত অবস্থায় চাপাতি দিয়ে কোপ দেয় সে। এরপর গামছা দিয়ে গলায় চেপে ধরে। মৃত্যু নিশ্চিত করার পর শাহিনুরের হাতের ও পায়ের রগ কেটে দেয় রায়হানুল।

এরপর ভাবির ঘরে গিয়ে তাকেও একই ভাবে কোপ দেয় সে। ভাবিকে কোপ দেয়ার পর তিনি চিৎকার দিলে ছেলে মেয়েরা জেগে যায়। তখন অনিচ্ছা সত্ত্বেও দুই ভাতিজা ও ভাতিজিকে হত্যা করে রায়হানুল।

জিজ্ঞাসবাদে রায়হানুল ইসলাম বলেছেন, ‘শয়তান আমার ওপর ভর করেছিল, তাই আমি এটা করেছি। এরপর তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী হত্যার কাজে ব্যবহৃত চাপাতি উদ্ধার করা হয়।

প্রসঙ্গত, ১৫ অক্টোবর ভোরে কলারোয়া উপজেলার খলসি গ্রামের শাহাজান আলীর ছেলে মাছের ঘের ব্যবসায়ী শাহিনুর রহমান (৪০), তার স্ত্রী সাবিনা খাতুন (৩০), ছেলে সিয়াম হোসেন মাহি (৯) ও মেয়ে তাসনিমকে (৬) ঘরের মধ্যে গলাকেটে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় ছয় মাস বয়সী শিশু মারিয়া সুলতানাকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।

 

টাইমস/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ