ফেনীর সোনাগাজীর অগ্নিদগ্ধ মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে (১৮) সোমবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে।
তবে লাইফ সাপোর্টে নেয়ার আগে ওই মাদ্রাসা ছাত্রী 'ডাইং ডিক্লারেশন' (মৃত্যুশয্যায় দেয়া বক্তব্য) দিয়েছেন। তিনি তার বক্তব্যে বলেছেন, নেকাব, বোরকা, হাতমোজা পরিহিত চারজন তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। ওই চারজনের একজনের নাম ছিল শম্পা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট সূত্র তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। দুজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে ওই ছাত্রী একজন চিকিৎসকের কাছে বক্তব্য দেন। মুমূর্ষু রোগীদের কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্য নেওয়া হয়ে থাকে, যা পরবর্তী সময়ে আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে।
ছাত্রীকে উদ্ধৃত করে সূত্রটি জানাচ্ছে, কয়েক বছর ধরে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ নারী শিক্ষার্থীদের হয়রানি করে আসছেন। তিনি পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র দিয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখাতেন। তার কথায় রাজি না হলে তিনি হেনস্থা করতেন। আগে এ বিষয়ে পরিবারকে না জানালেও, গত ২৭ মার্চ তার সঙ্গে অধ্যক্ষ অশোভন আচরণ করেন। এ বিষয়টি ওই শিক্ষার্থী পরিবারকে জানান, মাদ্রাসার অন্য শিক্ষার্থীদেরও জানান। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর থেকে তিনি ভাইয়ের সঙ্গে মাদ্রাসায় যাচ্ছিলেন। ঘটনার দিন তার ভাইকে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি।
ওই ছাত্রী বলেন, কেন্দ্রে ঢোকার পর একটা সময় তাকে ছাদে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি নেকাব বোরকা হাত মোজা পরিহিত চারজনকে দেখতে পান। তাদের মধ্যে মূলত কথা বলছিলেন একজন। তিনি মামলা প্রত্যাহার করে নিতে বলেন এবং অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ অসত্য এ কথা বলতে চাপ দেন। মাদ্রাসা ছাত্রী এতে অস্বীকৃতি জানালে ওই চারজন ওড়না দিয়ে তার হাত বেঁধে ফেলেন। তার গায়ে ওরা কিছু একটা ছুড়ে দেয়। তারপর বলে, ‘যা এবার পালা।’ গায়ে আগুন লাগা অবস্থাতেই তিনি দৌঁড়ে পালান।
চারজনের কেউ কারও নাম উচ্চারণ না করলেও কোনো এক পর্যায়ে একজন শম্পা বলে একজনকে ডাকেন। তিনি যে কণ্ঠ শুনেছেন, তা নারীকণ্ঠ। তবে মুখ ঢাকা থাকায় কাউকে চিনতে পারেননি বলে জানিয়েছেন।
অগ্নিদগ্ধ ওই ছাত্রী বলেন, ওড়নাটা ছাই হয়ে যাওয়ার পর হাতের বাঁধন খুলে যায়।
গত শনিবার সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে কৌশলে মেয়েটিকে ছাদে ডেকে নিয়ে গিয়ে মেয়েটির গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। গত ২৭ মার্চ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে মামলা করেন মেয়েটির মা। মামলা প্রত্যাহারে রাজি না হওয়ায় ছাত্রীটির গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ওই দিনই গুরুতর আহত অবস্থায় ওই মাদ্রাসা ছাত্রীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়।
টাইমস/এসআই