গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষের আচরণে ক্ষুব্ধ হাইকোর্ট

গ্রিনলাইন পরিবহনের বাসের ধাক্কায় পা হারানো  প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধে তালবাহানা করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট।

গত বছরের ২৮ এপ্রিল যাত্রাবাড়ীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে গ্রিনলাইন পরিবহনের একটি বাস চাপা দেয় প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারকে। তাকে বাঁচাতে একটি পা কেটে ফেলতে বাধ্য হন চিকিৎসকরা।

রাসেল সরকারের জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে সাবেক সাংসদ উম্মে কুলসুমের করা এক রিট আবেদনে চিকিৎসা খরচ বাদেও ৫০ লাখ টাকা দিতে গ্রিনলাইনকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। পরে আপিল বিভাগেও ওই আদেশ বহাল থাকে।

এরপর গত ১০ এপ্রিল রাসেল সরকারকে ৫ লাখ টাকা পরিশোধ করে গ্রিনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষ বাকি ৪৫ লাখ টাকা পরিশোধের জন্য এক মাস সময় পায়।

ওই সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও আর কোনো অর্থ তারা পরিশোধ না করায় গত ১৫ মে আদালত আরও সাত দিন সময় দিয়ে ওই সময়ের মধ্যে পুরো অর্থ পরিশোধের বিষয়ে কড়া হুঁশিয়ারি দেয়।

সে অনুযায়ী বুধবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এই বিষয়ে শুনানি হয়।

বিচারক প্রথমেই গ্রিনলাইন পরিবহনের আইনজীবী অজি উল্লাহর কাছে জানতে চান- আদেশ বাস্তবায়ন করা হয়েছে কি না।

আইনজীবী অজি উল্লাহ তখন বলেন, ‘গত ২০ তারিখ থেকে গ্রিনলাইন পরিবহন আমার সাথে কোনো যোগাযোগ করেনি। তাই আমি নিজেকে এই মামলা থেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি তাদের আচরণে খুবই অখুশি।’

এরপর আদালত রাসেলের চিকিৎসার খোঁজখবর জানতে চান। জবাবে রিট আবেদনকারী আইনজীবী খন্দকার শামসুল হক রেজা বলেন, ‘চিকিৎসা চলছে। গত তারিখের পর গ্রিন লাইন আর যোগাযোগ করেনি। বনানীর একটি ক্লিনিকে তার পায়ে অস্ত্রোপচার হয়েছে, যেখানে তিন লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। এই অর্থ গ্রিন লাইন দিয়েছে। এর আগে ৫ লাখ টাকার চেক দিয়েছে।

আদালত এ সময় জানতে চায়, রাসেল এখন হাঁটাচলা করতে পারেন কি না। আইনজীবী রেজা তখন বলেন, ‘রাসেল পুরোপুরি হাঁটতে পারেন না, ক্রাচে ভর দিয়েই হাঁটতে হয়।’

আদালত কক্ষের পেছনের সারিতে বসা রাসেল তখন ক্র্যাচে ভর করে ডায়াসের কাছাকাছি আসেন।

রাসেলের আইনজীবী বলেন, ‘আমার যা মনে হয় তারা (গ্রিন লাইন) অর্থ না দেয়ার প্রক্রিয়া খুঁজছে। গণমাধ্যমে সেরকমই খবর এসেছে।’

বিচারক তখন বলেন, ‘যারা ব্যবসা করবে তাদের মানবীয় মূল্যবোধ থাকা উচিৎ। আমাদের সব উদ্বেগ সামগ্রিকভাবে আদেশে প্রতিফলিত হয় না। সবকিছু তো আর আদালতের আদেশ দিয়ে হয় না। আমরা শপথ নিয়েছি, আমাদের কারো প্রতি কোনো রাগ, অনুরাগ, বিরাগ নেই। কিন্তু আমাদের কাছে গ্রিনলাইনের আচরণ ভাল লাগেনি।'

এরপর আইনজীবী অজিউল্লাহকে উদ্দেশ করে বিচারক বলেন, ‘আপনি তো এখনও আইনজীবী আছেন। যোগাযোগ করেন। নমনীয়তাকে দুর্বলতা মনে করার কোনো কারণ নেই। আমাদের কঠোর হতে বাধ্য করবেন না।’

পরে এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য ২৫ জুন দিন রেখে শুনানি স্থগিত করে আদালত।

 

 

টাইমস/এসআই

 

 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
নারায়ণগঞ্জে দুর্বৃত্তদের হামলায় এনসিপির ৩ কর্মী আহত Dec 11, 2025
img
পোশাক থেকে কুটিরশিল্প, দেশ ৬০% উৎপাদন সক্ষমতা ফিরে পেয়েছে : এম সাখাওয়াত হোসেন Dec 11, 2025
img
জাতীয় পোস্টাল ব্যালট অ্যাপে প্রবাসীদের নিবন্ধন ছাড়ালো ৩ লাখ Dec 11, 2025
img
আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সদর দপ্তরে পুলিশের অভিযান! Dec 11, 2025
img
বেগম রোকেয়া নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য সরিয়ে নিলেন রাবি শিক্ষক, কারণও ব্যাখ্যা করলেন Dec 11, 2025
img
এ মাসেই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান: ইশরাক হোসেন Dec 11, 2025
img
অস্ট্রেলিয়াকে ওয়ার্ক-হলিডে ভিসা পুনরায় চালু করতে আহ্বান বাংলাদেশের Dec 11, 2025
img
কঠোর হচ্ছে ইউরোপের অভিবাসন নীতি Dec 11, 2025
img

কক্সবাজার-১ আসন

সালাহউদ্দিনের প্রতিদ্বন্দ্বি হলেন তারই শিক্ষক অধ্যাপক মাইমুল Dec 11, 2025
img

হান্নান মাসউদ

ইউনূস স্যারকে দিয়ে হাতিয়ার ব্লকবাঁধের জন্য ২১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করিয়েছি Dec 11, 2025
img
বাংলাদেশের বাজেটের সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয় ঋণের সুদ পরিশোধে : বিডা চেয়ারম্যান Dec 11, 2025
img
১২ ডিসেম্বর থেকে কর্মবিরতির ঘোষণা ডিএমটিসিএলের কর্মচারীদের Dec 11, 2025
img
অর্থ পাচারের বিষয়ে সায়মন ওভারসীজের কাছে ব্যাখ্যা চাইল মন্ত্রণালয় Dec 11, 2025
img
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেতা শোয়াইব হোসেন আটক Dec 11, 2025
img
দলে দলে লড়াই নয়, ঐক্যবদ্ধ হয়ে হাতিয়া বদলাই: হান্নান মাসউদ Dec 11, 2025
img
আসন্ন নির্বাচনে সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক ভোট হবে : শামা ওবায়েদ Dec 11, 2025
img
বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার পেলেন আমিরুল Dec 11, 2025
img
গাজা পিস বোর্ডে রাখা হচ্ছে না টনি ব্লেয়ারকে Dec 10, 2025
img

মানবতাবিরোধী অপরাধ

বিদেশি আইনজীবী আনতে চান সালমান ও আনিসুল Dec 10, 2025
img
৭ ঘণ্টায়ও উদ্ধার হয়নি গভীর নলকূপে পড়ে যাওয়া শিশুটি, সরবরাহ করা হচ্ছে অক্সিজেন Dec 10, 2025