উদ্বেগজনিত ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে বোঝার উপায়

বলা হয়ে থাকে, স্বাভাবিক মাত্রার উদ্বেগ আমাদের জন্য ভালো বা এটি স্বাভাবিক ঘটনা। তবে কখনো কখনো মাত্রাতিরিক্ত উদ্বেগ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যাঘাত ঘটায়। বিশেষ মুহূর্তে ভয় বা উদ্বেগ হতেই পারে, কিন্তু তা যদি স্থায়ী ভাবে আপনাকে তাড়া করে ফেরে কিংবা কোনো কারণ ছাড়াই বারবার ফিরে আসে তাহলে তা মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করে।

উদ্বেগ ও ভয় যখন স্বাভাবিকতার মাত্রা ছাড়িয়ে প্রাত্যহিক জীবনকে প্রভাবিত করতে শুরু করে তখন তা রোগ হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এটি অ্যানজাইটি ডিজঅর্ডার নামে পরিচিত।

আসুন জেনে নিই অ্যানজাইটি ডিজঅর্ডারের লক্ষণগুলি-

উদ্বেগ জনিত ব্যাধি বা অ্যানজাইটি ডিজঅর্ডারের বিভিন্ন ধরণের উপসর্গ বা লক্ষণ রয়েছে। যেহেতু উদ্বেগ জনিত ব্যাধির একাধিক ধরণ রয়েছে তাই এর উপসর্গগুলিও আলাদা। সাধারণ উদ্বেগ জনিত ব্যাধি, ভয় সংক্রান্ত ব্যাধি, প্যানিক ডিজঅর্ডার প্রভৃতি নানা ধরনের অ্যানজাইটি ডিজঅর্ডার রয়েছে।

তবে বেশ কয়েকটি সাধারণ লক্ষণ বা উপসর্গ দ্বারা রোগটিকে চিহ্নিত করা যেতে পারে।

ভয় বা উদ্বেগ যদি স্বাভাবিকতার মাত্রা ছাড়িয়ে যায়

ভয় বা উদ্বেগের কিছু ইতিবাচক দিক অবশ্যই রয়েছে। ভয় বা উদ্বেগ আমাদেরকে কার্য সম্পাদন করতে চালিত করে। উদাহরণ স্বরূপ একটি কাজ নির্দিষ্ট সময়ে সম্পন্ন না করতে পারার উদ্বেগ আপনাকে কাজটি করতে অনুপ্রাণিত করতে পারে।

মনোবিজ্ঞানের গবেষক অ্যারোন ফিশারের মতে, পরীক্ষায় ফেল করার ভয় যদি আপনাকে পড়তে অনুপ্রাণিত করে তাহলে সেটি ইতিবাচক। তবে এই ভয় বা উদ্বেগ যদি মাত্রাতিরিক্ত হয় এবং এর ফলে যদি কোনো ইতিবাচক ফলাফল না আসে তাহলে সেটি উদ্বেগ জনিত ব্যাধির লক্ষণ হতে পারে।

যদি ভয় আপনার জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে

ভয় কখনো কখনো আমাদের অজান্তেই আমাদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে। ভয়ের কারণে আমরা অনেক কিছু এড়িয়ে চলতে শুরু করি যার প্রভাবে আমাদের সাধারণ জীবন বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

ইউসি বারকেলির মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক অ্যান ক্রিংয়ের মতে, ভয় যখন আপনার সামর্থ্য বা ইচ্ছা অনুযায়ী জীবনকে উপভোগ করার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে, তখন আপনার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।

সামাজিক অনুষ্ঠান থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে বাধ্য হলে

মানুষের সামনে কোনো বক্তৃতা দিতে যাওয়ার আগে কিছুটা নার্ভাস লাগা স্বাভাবিক। তবে চারপাশে মানুষের উপস্থিতি যদি সব সময় আপনাকে উদ্বিগ্ন করে তোলে, এর ফলে আপনি যদি সামাজিক অনুষ্ঠানগুলি থেকে দূরে থাকতে শুরু করেন। তাহলে তা সোশ্যাল অ্যানজাইটির লক্ষণ।

যদি শারীরিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে শুরু করে

ভয় বা উদ্বেগ জনিত ব্যাধির ফলে শারীরিক উপসর্গ দেখা দেয়াও অস্বাভাবিক কিছু নয়। এর ফলে নিয়মিত মাথা ব্যথা, পিঠে ব্যথা, পেটে ব্যথা, অতিরিক্ত খিদে প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

ঘুমে ব্যাঘাত ঘটলে

অ্যানজাইটি ডিজঅর্ডারের ফলে ঘুমে ব্যাঘাত দেখা দেয়। ড. কেনান মিলারের মতে, যদি কোনো প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের আগের রাতে দুশ্চিন্তায় ঘুম না আসে তাহলে সেটা স্বাভাবিক বলা যায়। কিন্তু এর জন্য যদি সপ্তাহ জুড়ে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে তাহলে সেটা অস্বাভাবিক।

যদি তা প্রাত্যহিক জীবনে ব্যাঘাত ঘটায়

ভয় বা উদ্বেগের ফলে সৃষ্ট মানসিক চাপ এবং অন্যান্য কারণে আমদের দৈনন্দিন জীবনের নানা কাজ কর্মে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এর ফলে যদি আপনার প্রতিদিনের দায়িত্ব পালনে বা কর্ম সম্পাদনে ব্যাঘাত ঘটে তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।

তথ্যসূত্র: দ্যা হেলদি

 

টাইমস/এনজ/এসএন

Share this news on: