মানব সৃষ্ট নানা বর্জ্য পদার্থে প্রতিনিয়তই দূষিত হচ্ছে সমুদ্রের পানি। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র। বিশ্বব্যাপী সামুদ্রিক দূষণের ফলে মানব স্বাস্থ্যও নানা ভাবে হুমকির মুখে পড়ছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
‘অ্যানালস অব গ্লোবাল হেলথ’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী সমুদ্র দূষণের ফলে পরোক্ষভাবে মানুষ তার স্বজাতির স্বাস্থ্যের ক্ষতিসাধনই করছে।
গবেষকদের মতে, প্রাণীজগৎ এবং পরিবেশ রক্ষায় সমুদ্র বিশেষ ভূমিকা পালন করে। বাতাসে অক্সিজেন যোগ করা এবং তা থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার মধ্য দিয়ে সমুদ্র বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি হ্রাসেও অবদান রেখে আসছে।
এছাড়াও সমুদ্র থেকে সংগ্রহীত হয় প্রচুর পরিমাণে খাদ্য উপাদান, যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সমুদ্রকে কেন্দ্র করে কোটি কোটি লোকের কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা হয় এবং সমুদ্রে প্রাপ্ত নানা উপাদান ওষুধ তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়। সমুদ্রকে ঘিরে প্রাচীনকাল থেকেই গড়ে উঠেছে নানা বসতি, গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি।
কিন্তু দিন দিন বেড়ে যাওয়া বর্জ্য পদার্থের ফলে সামুদ্রিক পরিবেশ বর্তমানে মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন। সামুদ্রিক পরিবেশের এই অবনমন মানব স্বাস্থ্যের জন্যও বিপদজনক। বিশেষত যারা সমুদ্রকে কেন্দ্র করে জীবন নির্বাহ করে ও সমুদ্রের পাড়ে বসবাস করে তাদের জন্য।
এছাড়াও পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন অঞ্চলের সামুদ্রিক বরফ আশঙ্কাজনক হারে গলতে শুরু করেছে। দীর্ঘকাল আগে সৃষ্ট এসব বরফের নিচে আটকে আছে বিভিন্ন জীবাণু, ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া। বরফ গলে যাওয়ার ফলে এসব ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া পরিবেশে মিশে যাবে। যা মানব সম্প্রদায়ের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয়ের কারণ হয়ে উঠতে পারে।
এছাড়াও এর ফলে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে, যা সমুদ্র পাড়ে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এর ফলে জলোচ্ছ্বাস, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় বৃদ্ধি পেতে পারে।
গবেষক প্রফেসর ফিলিপ ল্যন্ড্রিগান বলেন, ‘সামুদ্রিক খাবার গ্রহণের মাধ্যমে সমুদ্রের দূষণের দ্বারা মানব স্বাস্থ্য সরাসরি ভাবে প্রভাবিত হয়। এছাড়াও নানা ভাবে এটি হতে পারে। আমরা সবাই ঝুঁকিতে রয়েছি, তবে সমুদ্র পাড়ে বসবাসকারী জনগোষ্ঠী সব থেকে বেশি প্রভাবিত হবে।’
বিশেষত প্লাস্টিক দূষণ মানব স্বাস্থ্যকে সরাসরি প্রভাবিত করছে। মাইক্রোপ্লাস্টিক হিসেবে পরিচিত ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা খুব সহজে সমুদ্রের পানিতে মিশে যাচ্ছে এবং সামুদ্রিক প্রাণীর দেহে তা চলে আসছে। ফলে সামুদ্রিক খাবার গ্রহণের ফলে মানব দেহে ঢুকে যাচ্ছে এসব ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা।
গবেষণায় দেখা যায় সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণ এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, মানুষের পাওয়া প্রতি ৩টি সামুদ্রিক প্রাণীর একটিতে প্লাস্টিক জড়িয়ে ছিল এবং প্রায় ৯০ শতাংশ পাখির পাকস্থলীতে প্লাস্টিক কণা পাওয়া গেছে।
গবেষকদের মতে, খুব বেশি দেরী হয়ে যাওয়ার আগেই সমুদ্র দূষণ তথা পরিবেশ দূষণ রোধে আমাদেরকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে। অন্যথায় এর ফলে সৃষ্ট দুর্ভোগ থেকে পালিয়ে বাঁচার অন্য কোনো পথ খোলা নেই।
তথ্যসূত্র: মেডিকেল নিউজ টুডে
টাইমস/এনজে/এসএন