মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ কোনো রোগ নয়, বরং এটি জিনজিটিভিটি বা পেরিওডোন্টাল ডিজিজের মতো কোনো রোগের উপসর্গ। জিনজিটিভিটির প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে মাড়ি ফোলা এবং রক্তক্ষরণ দেখা দিতে পারে। চিকিৎসা করা না হলে এর ফলে মাড়ি আলগা হয়ে যাওয়া এবং দাঁত পড়ে যাওয়ার মত ঘটনাও ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।
ডায়াবেটিস ও অটোইমিউন ডিজিজের মতো দুরারোগ্য ব্যাধি জিনজিটিভিটি রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। এছাড়াও ধুমপানের ফলেও এটি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
মাড়িতে রক্তক্ষরণ দেখা দিলে সাধারণত আমরা বারবার দাঁত ব্রাশ করা ও কুলি করার দ্বারা দাঁতের বাড়তি যত্ন নেয়ার চেষ্টা করি। এর মধ্য দিয়ে জিনজিটিভিটির অন্তর্নিহিত কারনের দিকে আর নজর দেয়া হয় না। যার ফল মারাত্মক নেতিবাচক হতে পারে, সুতরাং এক্ষত্রে সাবধানতা অবলম্বন করাই শ্রেয়।
সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেহে ভিটামিন সি (অ্যাসকরবিক এসিড) এর অপ্রতুল্যতার ফলে মাড়িতে রক্তক্ষরণ ঘটতে পারে। এ সংক্রান্ত গবেষণাপত্রটি ইউনিভার্সিটি অব ওয়াসিংটন কর্তৃক নিউট্রিশন রিভিউ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণায় ৬টি দেশে পরিচালিত ১৫টি ট্রায়ালের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা হয়েছে। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হেলথ এন্ড নিউট্রিশন এক্সামিনেশন সার্ভের তথ্যভান্ডার থেকে ৮,২১০ জন ব্যক্তির তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়।
এতে দেখা যায়, যে সব ব্যক্তি সিটামিন সি স্বল্পতায় ভুগছেন তাদের মধ্যে মাড়িতে রক্তপাত দেখা দেয়ায় প্রবনতা বেশি। এছাড়াও এদের মধ্যে চোখে রক্তপাত বা হেমোরহেগিংয়ে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
এছাড়াও গবেষকগণ দেখতে পেয়েছেন, ভিটামিন সি স্বল্পতায় ভোগা ব্যক্তিদের রক্তে ভিটামিন সি এর মাত্রা বৃদ্ধি করা হলে তা মাড়ি বা চোখের রক্তপাত বন্ধ করতে সহায়তা করে।
এই গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক ড. ফিলিস হুজোয়েল ইউনিভার্সিটি অব ওয়াসিংটন স্কুল অব ডেনটিস্ট্রির অ্যাডজুডেন্ট প্রফেসর। তিনি বলেন, “আপনার মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হলে বেশি বেশি ব্রাশ করার কথা না ভেবে এর পেছনে কি কারণ থাকতে পারে তা নিয়ে ভাবতে হবে। ভিটামিন সি এর স্বল্পতা এইসব কারণগুলির একটি।”
এর আগে ওয়ান প্লাস জার্নালে প্রকাশিত একটি কোরিয়ান গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছিল যে ভিটামিন সি স্বল্পতার সাথে মাড়ির রোগের সম্পর্ক রয়েছে। সেখানে বলা হয়, ভিটামিন সি স্বল্পতা পেরিওডোন্টিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবন ১.১৬ গুণ বাড়িয়ে দেয়।
প্রতিদিন গড়ে কতটুকু ভিটামিন সি প্রয়োজন?
সাধারণত প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে পুরুষের জন্য প্রতিদিন ৯০ মিলিগ্রাম এবং নারীদের জন্য ৭৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি প্রয়োজন হয়।
তবে ড. হুজোয়েল বলেন, যারা প্রতিদিন খাবারের মাধ্যমে পর্যাপ্ত ভিটামিন সি গ্রহণ করেন না, তারা সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ১০০-২০০ এমজি ভিটামিন সি গ্রহণ করতে পারেন।
তবে মাড়ি বা দাঁত সংক্রান্ত যেকোনো জটিলতা দেখা দিলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করাই শ্রেয়। তথ্যসূত্র: মেডিকেল নিউজ টুডে
টাইমস/এনজে/এসএন