অস্বীকার করার উপায় নেই যে আমরা যখন বৃদ্ধ হয়ে যাই, সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেহও বার্ধক্যে উপনীত হয়। তবে, আনন্দের খবর হলো একটু হিসেব করে দৈনন্দিন জীবনের খাদ্যাভাস নির্বাচন করলে আমরা নিজেদের মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে পারি।
মানুষের মস্তিষ্ক সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য প্রয়োজন পুষ্টির, যা পাওয়া সম্ভব পুষ্টিকর খাবার থেকে। কিছু খাবার আছে, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে মনোযোগ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।
আসুন জেনে নেই মনোযোগ বৃদ্ধি করে এমন খাবার সম্পর্কে-
ক্যাফেইন
আপনাকে স্মার্ট করে তোলা বা আপনার আইকিউ বাড়িয়ে দেয়ার মতো জাদুকরী কোনো উপায় অবশ্য নেই। তবে কিছু কিছু জিনিস, যেমন ক্যাফেইন আপনাকে কর্মোদ্দীপ্ত করে তোলে এবং মনোযোগী হতে সাহায্য করে। কফি, চকোলেট, এনার্জি ড্রিংক প্রভৃতি উৎস হতে পাওয়া ক্যাফেইন সন্দেহাতীতভাবে আপনাকে চাঙ্গা করে তোলে। তবে অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণের কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে।
ব্লু-বেরি
এক গবেষণায় দেখা গেছে ব্লু-বেরি মস্তিষ্কের ক্ষয়রোগে সাহায্য করে এবং অ্যালহেইমার বা ডেমেশিয়ার মতো বয়সের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সমস্যা থেকে মুক্ত রাখার পাশাপাশি মনোযোগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ইঁদুরের উপর পরীক্ষা করে দেখা গেছে, অধিক মাত্রায় ব্লু-বেরি খেলে মস্তিষ্কের শিক্ষা গ্রহণ ক্ষমতা ও পেশির কার্যক্ষমতা বাড়ে।
চিনি
চিনি মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ শক্তির উৎস। তবে সেটা চায়ে দেয়ার চিনি নয় বরং এটি বিভিন্ন ফলমূল হতে প্রাপ্ত চিনি। সে কারণেই এক গ্লাস কমলার রস বা অন্য ফলের রস সাময়িকভাবে আমাদের স্মৃতিশক্তি, চিন্তা করার ক্ষমতা ও মানসিক সক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়।
সকালের নাস্তা
প্রায়শই সকালের নাস্তা করতে ভুলে যান? সকালের নাস্তা আমাদের মস্তিষ্ক সতেজ রাখতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, সকালের নাস্তা আপনার মনোযোগ ও স্বল্প সময়ের স্মৃতির জন্য ইতিবাচক। যেসব শিক্ষার্থী সকালে নাস্তা করে, তারা সকালে নাস্তা না করা শিক্ষার্থীদের থেকে ভালো ফলাফল করে।
গবেষকদের মতে, যেসব খাবার মস্তিষ্ক কর্মোদ্দীপ্ত ও মনোযোগী করে তোলে তার মধ্যে রয়েছে অধিক আঁশযুক্ত খাবার যেমন শস্যদানা, দুধের তৈরি খাদ্যদ্রব্য এবং বিভিন্ন ফলমূল। তবে সকালের নাস্তায় অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করবেন না। গবেষকরা এটাও বলেছেন যে, খুব বেশি পরিমাণে সকালের নাস্তা আপনার কর্মোদ্দীপনা নষ্ট করে দিতে পারে।
মাছ
আমিষের উৎস আর মস্তিষ্কের জন্য উপকারী খাবার হলো মাছ। মাছে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্যের জন্য একটি প্রয়োজনীয় উপাদান। প্রচুর পরিমাণ মাছ খেলে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে ও বয়সের সঙ্গে বাড়তে থাকা মস্তিষ্কের অকেজো হয়ে পড়ার সম্ভাবনা কম হয়। সপ্তাহে অন্তত দুইদিন মাছ খাওয়া উচিৎ। প্রতিদিনের কাজে মনোযোগী হতে হলে সুস্থ ও সবল মস্তিষ্ক অপরিহার্য।
বাদাম ও চকোলেট
এন্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন-ই এর গুরুত্বপূর্ণ উৎস হলো বাদাম আর শস্যদানা, যা বয়সের সঙ্গে বাড়তে থাকা জ্ঞান লোপ পাবার সম্ভাবনা কমায়। ডার্ক চকোলেট এন্টিঅক্সিডেন্টের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস এবং এতে ক্যাফেইনের মত প্রাকৃতিক উদ্দীপক সঞ্চিত থাকে, যা মনোযোগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
অন্যান্য
গবেষকরা বলেছেন, দিনভর মনোযোগ ধরে রাখার জন্য রাতের ঘুম খুব গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে দিনে এমনিতেই মনোযোগ থাকবে না। প্রতিদিন পরিমাণ মতো পানি পান করতে হবে, কারণ পানি স্বল্পতা মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটায়। এছাড়াও প্রতিদিনের নিয়মিত শরীরচর্চা আমাদেরকে মনোযোগী হতে সাহায্য করে।
টাইমস/এনজে/জিএস