আমাদের দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির মধ্যে অন্যতম হলো লিভার বা যকৃৎ। শর্করা, আমিষ, চর্বিজাতীয় পদার্থ, খনিজদ্রব্য ইত্যাদি যা আমরা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করি, তা ভেঙ্গে প্রক্রিয়াজাত করে লিভার। আর এই প্রক্রিয়াজাত খাদ্য উপাদানগুলোকে ব্যবহার উপযোগী করে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে সরবরাহের কাজটিও সম্পাদন করে লিভার। লিভারকে বলা হয় কেমিক্যাল ফ্যাক্টরি।
তাই শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখতে হলে লিভারের সুস্থতা নিশ্চিত করতে হবে। লিভার অকার্যকর হয়ে পড়লে সেটা মৃত্যু ঝুঁকির কারণ হতে পারে। আমরা প্রাত্যহিক অনেক কাজ করে থাকি, যা লিভারের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।
আসুন জেনে নিই সেসব বিষয় সম্পর্কে, যা লিভারের স্বাস্থ্যের জন্য নেতিবাচক-
চিনি
অতিরিক্ত চিনি শুধু দাঁতের জন্যই ক্ষতিকর নয়, একইসঙ্গে এটি লিভারকেও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত করে। আমাদের শরীরের এই অংশটি ফ্রুকটোজ (Fructose) নামক এক প্রকার চিনি ব্যবহার করে চর্বি উৎপন্ন করে। খুব বেশি পরিশোধিত চিনি আর উচ্চ মাত্রার ফ্রুকটোজ সিরাপের ফলে যকৃতে এক ধরনের চর্বি উৎপন্ন হয় এবং সেখানেই তা জমা হতে থাকে। ফলে যকৃৎ আক্রান্ত হতে পারে।
কোনো কোনো গবেষণায় দেখা গেছে, চিনি লিভারের জন্য অ্যালকোহলের মতোই ক্ষতিকর। তাই চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিৎ।
ভেষজ সাপ্লিমেন্ট
শুধু প্রাকৃতিক, ন্যাচারাল বা ভেষজ লেখা থাকলেই সব কিছু মানুষের দেহের জন্যে ইতিবাচক হবে এমন কোনো কথা নেই। অনেক সময় এমনও হতে পারে যে, কোনো ভেষজ উপাদান আমাদের দেহের জন্য হুমকি স্বরূপ। অনেকে রজঃস্রাব নিঃসরণের সময় উপশমের জন্য কাভা কাভা নামক এক ধরনের ভেষজ গ্রহণ করে। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, এটি যকৃৎকে কাজ করতে বাধা প্রদান করে। এটি ব্যবহারের ফলে হেপাটাইটিস বা লিভার ফেইল্যুরের ঝুঁকি রয়েছে। কোনো কোনো দেশ ইতিমধ্যে এই ভেষজটিকে নিষিদ্ধ করেছে।
অতিরিক্ত চর্বি
দেহের অতিরিক্ত চর্বির ফলে লিভারেও অতিরিক্ত চর্বি জমতে পারে, ফলে ‘নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ’ নামক রোগের সৃষ্টি হয়। সময়ের সঙ্গে লিভার শক্ত হয়ে যেতে পারে এবং লিভারের টিস্যুতে ঘা সৃষ্টি হতে পারে। লিভারের এই অসুখটি লিভার সিরোসিস নামে পরিচিত। খাদ্যাভাস নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মিত শরীরচর্চা মানুষকে এই রোগ থেকে মুক্ত রাখতে পারে।
সাপ্লিমেন্ট থেকে গ্রহণ করা অতিরিক্ত ভিটামিন এ
মানব দেহে ‘ভিটামিন-এ’র প্রয়োজন আছে, বিভিন্ন ফলমূল ও শাক-সবজি থেকেই এই ‘ভিটামিন-এ’ পাওয়া যায়। বিশেষত লাল, কমলা ও হলুদ রঙের ফল-মূলে ‘ভিটামিন-এ’ বেশি থাকে। কিন্ত আপনি যদি এমন কোনো সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করেন, যেখানে উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন-এ রয়েছে, তাহলে তা আপনার লিভারের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। অতিরিক্ত ভিটামিন-এ গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলতে হবে। কারণ হয়ত আপনার দেহে ‘ভিটামিন-এ’র কোন ঘাটতি নেই।
কোমলপানীয়
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রচুর পরিমাণে কোমলপানীয় পান করেন তাদের নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ হবার সম্ভাবনা বেশি। আপনি যদি প্রচুর পরিমাণে সোডা পান করে অভ্যস্ত থাকেন, তাহলে এই অভ্যাসটি এখনি কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
অ্যালকোহল
অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় পান করলে লিভার ড্যামেজ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। লিভার সংক্রান্ত যত জটিলতা আছে তার প্রায় এক তৃতীয়াংশের জন্য অ্যালকোহল দায়ী। অতিরিক্ত অ্যালকোহল পানের ফলে লিভারে চর্বি জমে, একে অ্যালকোহল রিলেটেড ফ্যাটি লিভার ডিজিজ বলা হয়।
ব্যথার ওষুধ
মাথা ব্যথা, ঠাণ্ডা বা যে কোনো যন্ত্রণাতেই আমরা ওষুধ খেয়ে নিই। কিন্তু কতটা ব্যথার ওষুধ খাচ্ছেন, সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন। কারণ অধিকাংশ ব্যথানাশকে অ্যাসিটামাইনোফেকের উপস্থিতি থাকে বেশি। ব্যথা কিংবা জ্বরের জন্য সে ওষুধ বেশি গ্রহণ করলে তা আপনার লিভারের জন্য হুমকি হয়ে যাবে। ঠিক কতটা অ্যাসিটামাইনোফেন শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়, তা জানতে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
কৃত্রিম চর্বি
দিন দিন আমরা প্যাকেটজাত খাবার আর কৃত্রিম চর্বিযুক্ত খাবারের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পরছি। এসব খাবার লিভারে চর্বি তৈরি করে, যা লিভারের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তথ্যসূত্র: ওয়েবএমডিডটকম।
টাইমস/এনজে/জিএস