আসন্ন ভারতের লোকসভা নির্বাচনে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়া খবর ছড়িয়ে যাতে জনমতে প্রভাব ফেলা না যায়, তার জন্য পৃথিবী জুড়ে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে নজর রাখছে ফেসবুক।
যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর এবং আয়ারল্যান্ডের তিনটি অফিস থেকে ২৪ ঘণ্টা এই নজর রাখার কাজ করছে মোট ৪০টি দল, কাজ করছেন প্রায় ৩০ হাজার কর্মী।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় ফেসবুক অফিসের মধ্যে এ রকমই একটি ওয়ার রুম দেখে এসে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, শুধু ভারতের নির্বাচন নিয়েই পৃথিবীর তিনটি শহরে খোলা হয়েছে তিনটি নজরদারি কেন্দ্র। মূল কেন্দ্রটি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায়। অন্য দু’টি কেন্দ্র হলো সিঙ্গাপুর এবং আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন। তিনটি শহর থেকে প্রতি মুহূর্তে ভারতের নির্বাচনের ওপর নজর রাখছে মোট ৪০টি দল। এ ছাড়া এই দলের সঙ্গে রাখা হয়েছে ফেসবুকের তথ্যসুরক্ষা দলের অন্তত ৩০ হাজার কর্মীকে। দরকার পড়লেই যে কোনো মুহূর্তে এই কর্মীদের তলব করতে পারে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।
২০১৫, ২০১৬ এবং ২০১৮। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, ব্রেক্সিট গণভোট এবং মেক্সিকোর সাধারণ নির্বাচন, এই তিনটি ক্ষেত্রেই ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে জনমত প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠেছিল। এই কেলেঙ্কারির কথা স্বীকার করে নিয়েছিলেন ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গও।
কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা নামের একটি সংস্থা ফেসবুকের কাছ থেকে এই তথ্য হাতিয়ে তা ব্যবহার করেছিল অবৈধভাবে— এই তথ্য সামনে আসার পর প্রশ্ন উঠেছিল ফেসবুকে ব্যবহারকারীদের তথ্য কতটা সুরক্ষিত, তা নিয়েও। আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ফেসবুক। এরপরই ব্যবহারকারীদের তথ্যসুরক্ষায় বিপুল পরিমাণ টাকা বরাদ্দ করার কথা জানায় ফেসবুক।
প্রকাশিত রিপোর্টে ফেসবুকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৌশিক আইয়ার বলেছেন, ‘আমরা অনেক আগেই বুঝতে পারি, ভারতের ক্ষেত্রে আমাদের সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে ভাষার বৈচিত্র। তাই আমাদের বিভিন্ন যন্ত্র যাতে ভারতের বিভিন্ন ভাষা পড়তে পারে, সেই প্রযুক্তির খাতে আমরা সব থেকে বেশি টাকা বরাদ্দ করেছিলাম। স্বয়ংক্রিয় অনুবাদ পদ্ধতি এবং তার মাধ্যমে কোনো পোস্টের ভুয়া বা আপত্তিকর অংশ চিহ্নিত করার ক্ষেত্রেও আমরা অনেক বেশি শক্তিশালী এখন। কোথাও কোনও সংকট দেখা দিলে এখন আমরা অনেক তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নিতে পারছি।’
নতুন ব্যবস্থা কতটা সফল হচ্ছে, তার একটা প্রাথমিক ধারণা পাওয়া গেছে ব্রাজিলের সাধারণ নির্বাচন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনে। কিন্তু আসল লড়াই যে ভারতই, তা স্বীকার করে নিয়েছেন ফেসবুক কর্মকর্তারাই। কারণ পৃথিবীর সব থেকে বড় নির্বাচন হয় বহু ভাষাভাষির দেশ ভারতেই। তথ্যসুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে গত ১৮ মাসে এই বিভাগে নিজেদের কর্মীসংখ্যা ১০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার করেছে ফেসবুক। পাশাপাশি প্রতি মুহূর্তে নজর রাখা হচ্ছে বিভিন্ন ভাষায় ভারতের সবক’টি প্রধান সংবাদমাধ্যমের ওপরও।
ফেসবুকের নয়াদিল্লি অফিসের পাশাপাশি ২৪ ঘণ্টা তারা যোগাযোগ রাখছেন নির্বাচন কমিশনের সঙ্গেও। কোথাও কোনো ভুয়া খবর পোস্ট করা হলে তিন ঘণ্টার মধ্যেই তা সরিয়ে দেয়ার লক্ষ্য এখন ফেসবুকের। ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে এই সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল ভারতের নির্বাচন কমিশনই।
ফেসবুক কর্মকর্তা কৌশিক আইয়ারের দাবি, ‘আমাদের একটা বড় কাজ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি করা। ওখান থেকে কিছু জানালেই আমরা যত দ্রুত সম্ভব তা সরিয়ে দিচ্ছি। ব্রাজিলের সাধারণ নির্বাচনের সময়ও এই পদ্ধতিতে কাজ করে আমরা সাফল্য পেয়েছিলাম।’
তাহলে কি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়া খবরের গ্রাস থেকে মুক্ত করা যাবে পৃথিবীর বৃহত্তম নির্বাচনকে?
এই প্রশ্নের উত্তরে অবশ্য কৌশিক বলছেন, ‘আমরা প্রস্তুত। আমরা যা করেছি, তার পিছনে আছে গত কয়েক মাসের নিরলস গবেষণা, প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং ভুয়া খবরকে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করার ক্ষমতা। পর্যাপ্ত টাকা বরাদ্দ থাকায় আমরা খোলা মনে কাজ করতে পেরেছি, অনেক জলদি সিদ্ধান্তও নিতে পেরেছি। যদিও প্রতি মুহূর্তে প্রযুক্তির পরিবর্তন করতে হচ্ছে। এটাই স্বাভাবিক আজকের পৃথিবীতে। এই নির্বাচন হয়ে গেলে আমরা বুঝতে পারব, কতটা সফল হলাম আমরা। কোথায় ঘাটতি থাকছে, তাও বুঝতে পারবো আমরা। সেই মত ঠিক করা হবে আগামী দিনের পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ।’
টাইমস/এসআই