রুক্মিনি রানসিংহ ও মঙ্গেশ রানসিংহ। মাত্র মাস ছয়েক আগে মঙ্গেশকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন তারা। কিন্তু মঙ্গেশের জাত ছিল আলাদা, তাই রুক্মিণীর(১৯) পরিবার ওই বিয়ে মেনে নেয়নি।
রুক্মিনি-মঙ্গেশের সেই ভালোবাসার পরিসমাপ্তি ঘটল গত রবিবার রাতে। যখন রুক্মিনির বাবা ও দুই কাকা মিলে পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে মারল তাকে। মৃত্যুর সময় রুক্মিনি দু’মাসের গর্ভবতী ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। মঙ্গেশ এখন পুনার হাসপাতালের বিছানায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।
ভয়ঙ্কর এই ‘অনার কিলিং’-এর ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের মহারাষ্ট্র প্রদেশের আহমেদনগর শহর থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরে পারনার থানার অন্তর্গত নিঘোজ গ্রামে। এই ঘটনায় পুলিশ রুক্মিনির দুই কাকা সুরেন্দ্র ভারতি ও ঘনশ্যাম ভারতিকে গ্রেপ্তার করেছে। যদিও রুক্মিনির বাবা রাম ভারতি এখনও পলাতক।
পারনার থানার উপপরিদর্শক বিজয়কুমার বোরগদে বলেন, ‘রুক্মিনির পরিবার আদতে উত্তর প্রদেশের লোক। তারা পাসি সম্প্রদায়ের। অন্যদিকে পেশায় রাজমিস্ত্রি মঙ্গেশ ছিলেন লোহার সম্প্রদায়ের। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্ককে পরিণতি দিতে গত বছর দীপাবলিতে পুনায় গিয়ে বিয়ে করেন তারা। সেই বিয়েতে অবশ্য মঙ্গেশের বাড়ির লোকের সায় ছিল। রুক্মিনির পরিবারের তরফে উপস্থিত ছিলেন কেবল তার মা। রুক্মিনির পরিবারের আপত্তির জন্য এই বিয়ে হয়েছিল পুনার আলান্দিতে।’ অভিযোগ,তারপর থেকেই ওই যুগলকে হুমকি দিতে থাকে রুক্মিনির পরিবার।
রুক্মিণীর দেবর মহেশ রণসিংহে বলেন, 'বিয়েতে রুক্মিণীর বাড়ি থেকে শুধু তার মা এসেছিলেন। রুক্মিণী বা মঙ্গেশের সঙ্গে রাস্তায় ওদের বাড়ির কারোর সঙ্গে দেখা হলেই হুমকি দেয়া হত। ফেব্রুয়ারি মাসে এই হুমকির ব্যাপারটা জানিয়ে রুক্মিণী আর মঙ্গেশ থানায় অভিযোগও জানিয়েছিল।’
গত ৩০ এপ্রিল রাতে পারিবারিক একটি বিষয় নিয়ে রুক্মিনি ও মঙ্গেশের মধ্যে মনোমালিন্য হয়। রাগে বাপের বাড়ি চলে আসেন রুক্মিনি। দু’দিন পর রাগ ভেঙে যাওয়ায় মঙ্গেশকে তার বাপের বাড়ি থেকে তাকে নিয়ে যেতে বলেন তিনি। গত রোববার রুক্মিনিকে আনতে তার বাড়ি নিঘোজ গ্রামে যায় মঙ্গেশ। সেখানে তিনি যাওয়ার পর তাকে অপমান করতে থাকে রুক্মিনির পরিবারের সদস্যরা। শুরু হয় উত্তপ্ত বাদানুবাদ। সে সময় রুক্মিনির দুই কাকা তাদের গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।
দগ্ধ অবস্থায় তাদের নিয়ে যাওয়া হয় পুণের স্যাসুন জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে রবিবার রাতেই মারা যান রুক্মিনি। তার দেহের ৭০ শতাংশই পুড়ে গিয়েছিল বলে জানিয়েছেন চিকিত্সকেরা। তিনি দু’মাসের গর্ভবতী ছিলেন বলেও জানিয়েছেন তারা। অন্যদিকে দেহের প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ পুড়ে গিয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন মঙ্গেশ।
হাসপাতালের চিকিৎসক অজয় তাবড়ে জানান, মঙ্গেশ এখনও আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে।
রুক্মিণীদের প্রতিবেশী সঞ্জয় বেদী জানান, ‘ঘর থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছিল। চিৎকার শুনতে পাচ্ছিলাম ভেতর থেকে। শেষমেশ আমরা দরজা ভেঙে ফেলে ওদের উদ্ধার করি।’
রুক্মিণীর পরিবারের সম্পর্কে খুব একটা ভালো করে জানেন না প্রতিবেশীরা। শুধু এটুকুই জানা গেছে যে ওই পরিবারটি প্রায় আট মাস আগে উত্তর প্রদেশ থেকে এখানে এসেছিল।
টাইমস/এসআই