বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ‘আদুভাই’ অ্যামাজনের মস্ত ইঞ্জিনিয়ার!

মারুফ মনিরুজ্জামান মুনির। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন ব্যাকবেঞ্চারের কাতারে। নবম শ্রেণিতে গণিতে তিনি ১০০ এর মধ্যে পেয়েছিলেন ২৫। একারণে শিক্ষকরা তাকে আর্টসে পড়াশোনার প্রস্তাব করেছিলেন। তবে মুনিরের স্বপ্ন ছিল সাইন্স নিয়ে পড়াশোনা করার। শিক্ষকদের অবজ্ঞায় মনে জেদ চেপে যায় মুনিরের। পড়াশোনায় মন দেন। প্রবল ইচ্ছাশক্তির জোরে তিনি চান্স পান সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্সে। এখানে এসেও তিনি ফেলের খাতায় নাম লেখান।

সিএসইর ৯৮ ব্যাচের এই ছাত্র একের পর এক পরীক্ষায় ফেল করতে করতে হতাশায় পড়ে যান। জুনিয়র ব্যাচের সঙ্গে ক্লাস করে অপমানিত হয়েছেন। চারবার ডাটাবেস পরীক্ষায় ফেল করে ত্যাক্ত বিরক্ত হয়ে সিলেটের ওই বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে আসেন ঢাকায়। এখানে এসে তার জীবনের মোড় ঘুরে যায়। সার্টিফিকেট নেই তবুও এক্সট্রা ট্যালেন্টের জোরে তিনি চাকরি পান ওরাকলে। যদিও সেটা তার করা হয়নি। পরে তিনি মাইক্রোসফটে যোগ দেন সেখানে তিনি ১০ বছর চাকরি করেছেন। ফেল করা সেই ছেলেটিই এখন আছেন অ্যামাজনে রোবোটিক্স ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। বলে রাখা ভালো প্রফেসর ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের বদান্যতায় চাকরির মাঝখানেই তিনি সিলেটে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নিয়েছেন। পঞ্চমবার পরীক্ষা দিয়ে তিনি ডাটাবেজে উত্তীর্ণ হন। তবে ক্লাসের পরীক্ষায় বারবার ফেল করলেও জীবনের পরীক্ষায় মুনির একজন সফল ইঞ্জিনিয়ার। তিনি মাইক্রোসফটে চাকরি করেছেন ১০ বছর। এখন আছেন অ্যামাজনে রোবোটিক্স ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে।

মুনির বলেন, আমি সিএসই ডিপার্টমেন্টের ৯৮ ব্যাচের ‘আদুভাই’। আমার পাশের চেয়ে ফেলের সংখ্যা কোন অংশে কম থাকত না। ৯৮, ৯৯, ২০০০, ২০০১ সব ব্যাচের সাথে ক্লাস করেছি এবং ৩ সেমিস্টার অতিরিক্ত লাগিয়ে মোট ১১ সেমিস্টারে পাশ করেছি (মোট ১৬১.৫ ক্রেডিট)। জুনিয়র ব্যাচের মেয়েদের সামনে ইজ্জত একেবারে চলে গিয়েছিল। চারবার ডাটাবেস পরীক্ষায় ফেল করার পর মনের দুঃখে সিলেট ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম। জাফর ইকবাল স্যার সরকারের এত টাকাপয়সা নষ্ট করে পড়াশোনা শেষ না করে বাড়ি চলে যাওয়ায় বিরাট ঝাড়ি দিয়েছেন। সেই কারণে দান দান ৫ দানে ডাটাবেজ পাশ করেছি। ওরাকলে চাকরি হয়েছিল। ডাটাবেজ স্যার হার্টফেল করতে পারেন ভেবে চাকরিটা করিনি। মাইক্রোসফটে বছর দশেক ছিলাম অফিস টিমে, যেই টিম Word, Excel, Powerpoint, Exchange, Outlook এগুলো বানায়। বর্তমানে অ্যামাজনে রোবোটিক্স ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আছি স্কাউট টিমে (সেলফ ড্রাইভিং কার বানায় যে টিম)। কেউ কেউ সান্তনা দেন তুমি তো আগে ভাল ছাত্র ছিলে, কথাটা সত্য না। ক্লাস নাইনে উচ্চতর গণিতে ১০০ তে ২৫ পাওয়ায় স্যার পরামর্শ দিয়েছিলেন আর্টসে পড়ার। আরেকটা পরিচয় আছে ৯৮ ব্যাচের শামস আর নাসিরের সাথে মিলে iferi.com বানিয়েছি। যদিও এটাতে এখনও পাশ মার্ক ওঠেনি।

[বি:দ্র: মুনিরের বক্তব্যের অংশটুকু তার ফেইসবুক থেকে নেয়া]

টাইমস/জেকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
আ.লীগ নেতাকর্মীদের দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর Apr 26, 2024
img
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ চুয়েট, খোলা থাকবে হল Apr 26, 2024
img
প্রথমবার এশিয়া কাপে আম্পায়ারিং করবেন বাংলাদেশের জেসি Apr 26, 2024
img
গাজায় ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কারে লাগতে পারে ১৪ বছর : জাতিসংঘ Apr 26, 2024
img
বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী Apr 26, 2024
img
চলমান তাপপ্রবাহ রেকর্ড ভেঙেছে ৭৬ বছরের Apr 26, 2024
img
অলসতা কাটিয়ে সকালে ঘুম থেকে উঠতে করণীয় Apr 26, 2024
img
বাংলাদেশে চিকিৎসা সুবিধায় থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী Apr 26, 2024
img
চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি Apr 26, 2024
img
সেন্সর বোর্ডে আটকে গেল রায়হান রাফীর নতুন সিনেমা ‘অমীমাংসিত’ Apr 26, 2024