একজন ব্যাকবেঞ্চারের স্বপ্নজয়, মাকে দেয়া কথা রেখেছেন রুয়েটের অভি!

রাশেদ যখন বয়লায় ল্যাবে ডিউটি করতে ঢুকলো তখন আমি রুয়েট লাইফে প্রথমবারের মত বাস্তবতার সম্মুখীন হলাম। রাশেদ আমার ক্লাসমেট, ল্যাবমেইট আর আজকে রাশেদ আমার লগ এক্সামের টিচার। পরের পাঁচ মিনিট কলমটা পাশে রেখে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিলাম। অনুভূতিটা ছিল বিশেষণহীন।

সিক্সথ সেমেস্টারে বোর্ড ভাইভা দিতে বসেছি, তিনজন স্যার ছিলেন। জিজ্ঞাসা করলেন "তোমার সিজি কত?"। বললাম ২.৬০। শুনার পর স্বাভাবিক স্যাররা ভালোভাবে নিতে পারেননি, তাচ্ছিল্যটাই চোখে পড়েছিল। আবার এক বোর্ড ভাইভায় যখন সব ঠিকঠাক আন্সার দিতে পারলাম তখনই আমার থিসিস সুপারভাইজার এসে বললেন "স্যার এইটা ৬৬ (আমার রোল), কিচ্ছু পারে না, রিপিট দেন।" এমনও হয়েছিল যে আমাকে রিপিটতো দেয়া হয়েছিলই সাথে দরজায় দাড়িয়ে ৬০ জনকে কি কি প্রশ্ন করা হয়েছে শুনে নিয়ে পরদিন আন্সারসহ রিপোর্ট আকারে জমা দিতে বললেন। প্রত্যেককে ১০ টা করে প্রশ্ন করা হলেও ৬০ জনকে করা ৬০০ প্রশ্ন আমাকে আন্সারসহ জমা দিতে হয়েছিল পরদিন। কিন্ত শেষ রক্ষা হয়নি, আত্মসম্মানবোধর কারণে ম্যাট ল্যাবে লগ দিয়ে দিয়েছিলেন সেবার।

কিছু স্যার বার বার মনে করিয়ে দিয়েছেন হয়ত পাশ করে বের হওয়া হবে না আমার, কেউ হয়তোবা বলেছেন পাশ করলেও চাকরি হয়ত পাওয়া হবে না। (স্পেসিফিকালি সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত) প্রথমদিকে সবাই ক্লাসমেট বা বন্ধু থাকলেও শেষে সিজিভিত্তিক বৈষম্য তৈরি হয়েছিল, শ্রেণিবিভাজন করা হতো সিজির ভিত্তিতে। একবার এক হাইসিজিধারীর কাছে গিয়েছিলাম ম্যাথ বুঝতে, বন্ধু উপহাস করে বলে দিয়েছিল This Math is outta your League!

যাই হোক অনেক স্যার শেষদিকে হেল্প করেছেন অনেক, অনেক ছোট ভাই হেল্প করায় পাশ করি কোনরকম। সব সময় বিলিভ করে গেছি ৭০ এ যদি ৫০ পেয়ে পাশ করতে পারি সিজি কোন ব্যাপার না। আমার সিজি আমার চয়েস। ব্যাচ বের হয়ে যাওয়ার পর ১০ টা লগ ছিল সাথে একটা ল্যাবে লগ, জব করেছি, এসে এসে লগ ক্লিয়ার করেছি। পাশ করার পর মাকে বলে জবটা ছেড়ে দেই, বলেছিলাম Put some faith for the last time, I will not fail you. (বাসায় সবাই তখন আমার উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে)
পাশ করার পর দুই মাস ছিল প্রিলির, ১৫০ টা আন্সার করেছিলাম যেখানে ১১০ সেইফ স্কোর। তারপর রিটেনে মেকানিক্যালে প্রথমবারের মত ফুল আন্সার করেছিলাম। ভালো এক্সাম দিয়েও সব সময় একটা খারাপ লাগা কাজ করতো যে জেনারেল ক্যাডারে আসলে ইঞ্জিনিয়ারিংটা ছেড়ে দিতে হবে। রেজাল্ট শিটে যখন দেখলাম সড়ক ও জনপথ (Mechanical) অনেকেই হয়তো খুশি হয়নি but I was the happiest person alive. It was a relief that i was able to keep my promise to my mother & I will still be an Mechanical Engineer. হেরে যাযইনি Low CGPA এর কাছে। আমার সিজি ২.৬০ & I’m proud of it.

(এইগুলা কখনো কারো কাছে বলার ইচ্ছে ছিল না, শুধু লো সিজি আর ব্যাকলগারদের জন্য লিখলাম, ওরা ছাড়া কেউ জানে না নিজ ব্যাচ চলে যাওয়ার পর কিসের মধ্য দিয়ে যেতে হয়)

কিন্ত শেষ কথা হল আগে আর পরে, পরিশ্রমটা ঠিকই করতে হবে। আর স্যাররা সবসময় আমাদের ভালো চান। ভালো চান বলেই বিভিন্নভাবে আমাদের ভেতর থেকে ভালোটা বের করে আনার চেষ্টা করে যান। প্রথমদিকে না বুঝলেও পরে বুঝতে পেরেছি। বাবা মায়ের পর উনারাই সর্বাপেক্ষা শুভাকাঙ্ক্ষী। Let not your cgpa to define you.

Anind Avi
Department of Mechanical Engineering, ’10 series
Assistant Engineer (Mechanical)
Roads & Highway
Merit order : Sixth 38th BCS

 

টাইমস/জেকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
আ.লীগ নেতাকর্মীদের দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর Apr 26, 2024
img
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ চুয়েট, খোলা থাকবে হল Apr 26, 2024
img
প্রথমবার এশিয়া কাপে আম্পায়ারিং করবেন বাংলাদেশের জেসি Apr 26, 2024
img
গাজায় ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কারে লাগতে পারে ১৪ বছর : জাতিসংঘ Apr 26, 2024
img
বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী Apr 26, 2024
img
চলমান তাপপ্রবাহ রেকর্ড ভেঙেছে ৭৬ বছরের Apr 26, 2024
img
অলসতা কাটিয়ে সকালে ঘুম থেকে উঠতে করণীয় Apr 26, 2024
img
বাংলাদেশে চিকিৎসা সুবিধায় থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী Apr 26, 2024
img
চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি Apr 26, 2024
img
সেন্সর বোর্ডে আটকে গেল রায়হান রাফীর নতুন সিনেমা ‘অমীমাংসিত’ Apr 26, 2024