ধানের তিনশ জাতের ৩৮ রকম ব্যবহার

বাংলাদেশে এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন জাতের ধান আবাদের প্রচলন রয়েছে। ধান থেকে চাল সংগ্রহের পর ভাত, পোলাও, বিরিয়ানি রান্নাসহ পিঠা তৈরি করা হয়। ধানের প্রধান ও সবচেয়ে বেশি ব্যবহার বলতে কেবল এটুকই সবার জানা। কিন্তু, আরও অসংখ্য কাজেও যে ধানের ব্যবহার হয়ে থাকে তা অনেকেরই অজানা।

ধানের বিভিন্ন জাতের অনেক অজানা তথ্য সংগ্রহ করেছেন প্রতিবেশ ও প্রাণবৈচত্র্য সংরক্ষণ গবেষক পাভেল পার্থ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময় থেকেই তিনি জন উদ্ভিদ নিয়ে কাজ করেছেন। দেশে তিন’শ জাতের ধানের ৩৮ রকমের ব্যবহার দেখতে পেয়েছেন তিনি। ‘বাংলাদেশের স্থানীয় ধান জাতের জন-উদ্ভিদ সমীক্ষা’ নামে তিন বছর মেয়াদী এক গবেষণায় এসব তথ্য তুলে ধরেছেন এ গবেষক।

পাভেল পার্থ বলেন, ৫৩টি জেলার বিভিন্ন জায়গায় ১৮টি জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকে একক ও দলীয় সাক্ষাতের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে অধিকাংশ তথ্যই প্রবীণ কৃষক ও নারীদের কাছ থেকে নেয়া। এই গবেষণার প্রায় সব তথ্যই নতুন।

তিন’শ জাতের ধানের মধ্য রয়েছে আমন মৌসুমের ২১২টি, আউশ মৌসুমের ৩৫টি, বোরো মৌসুমের ২৩টি ও ৩০টি ঝুম ধান। এই তিন’শ জাতের ধানের মধ্য ২৯৮টি জাতের ধান সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। একটি মাত্র বোনো ধানের দুটি জাত পাওয়া গেছে। এর ব্যবহার দুই রকমের।

গবেষণায় বলা হয়েছে, ১৫ রকমের ধান চিকিৎসায় (গ্রাম অঞ্চলে বেশি ব্যবহার হয়), ৩৩ রকমের ধান বিভিন্ন খাবার তৈরিতে, ২০ রকমের ধান ৩০ ধরণের পিঠা তৈরিতে, ২৬ রকমের ধান মুড়ি তৈরিতে, ১০ রকমের ধান খই তৈরিতে, ৯ রকমের ধান চিড়া তৈরিতে, ২৯ রকমের ধান শুধু প্রতিদিনের খাবার ভাত হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

৩১ রকমের ধান ৫৩টি জায়গার ১৮টি কমিউনিটির ভেতরে ৩০ রকমের পূজা পার্বণে এবং ১৯ রকমের ধান নবান্ন উৎসবে ব্যবহার করা হয়।

২০ রকমের সুগন্ধি ধান রয়েছে, যা ৭ রকমের খাবার তৈরিতে এবং ১৬ রকমের ধান বিভিন্ন আদিবাসীরা মদ তৈরিতে ব্যবহার করে থাকেন। ৭ রকমের ধান থেকে যে ছাই তৈরি করা হয় তার ৫ রকমের ব্যবহার আছে।

১২ রকমের ধানের সঙ্গে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর প্রতিবেশিক জ্ঞান আছে। ১৩ রকমের ধান শুধু পান্তা ভাত তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। ৮ রকমের ধান বাদরিক, কড়া আদিবাসীরা ইঁদুরের গর্ত থেকে সংগ্রহ করেন। ১৪ রকমের ধানের বর্ণনা রয়েছে, যেখানে কোনো ধানের ভাত কীসের সঙ্গে খেতে ভালো তার সবিস্তার উল্লেখ আছে।

চার রকমের ধান খুদ হিসেবে, ১৫ রকমের ধানের খড় ও তুষ ঘরবাড়ি তৈরিতে (ঘরের চাল না হয় দেয়াল), ১২ রকমের ধান খড় ও তুষ গরু, ছাগল, কুকুরের খাবার হিসেবে, পাঁচ রকমের ধানের খড় ও তুষ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

পাঁচ রকমের ধান মাজনি হিসেবে, ২০ রকমের ধান দড়ি তৈরিতে, নয় রকমের ধানের তুষ ফল পাকানোর জন্য, পাঁচ রকমের ধান ডেকেরোশনের কাজে, ছয় রকমের ধানের মাড় খাবার হিসেবে, চার রকমের ধানের তুষ হাঁস মুরগির ডিম ফোটানোতে ব্যবহার করা হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে যে, সাত রকমের ধানের সঙ্গে পৌরাণিক কাহিনী জড়িত। দুই রকমের ধানের ব্যবহারের ক্ষেত্রে সামাজিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আর চারটি ধানের জাতের কথা গানে-গীতে ব্যবহার করা হয়। চার রকমের ধানের তুষের আগুন দিয়ে চোখের কাজল তৈরি হয় আর চার রকম ধানের মাথা থেকে পাকা চুল আনার জন্য ব্যবহার হয়।

গবেষণার পদ্ধতি সম্পর্কে পাভেল পার্থ জানান, পৃথিবীতে জন উদ্ভিদ সমীক্ষার কয়েকটি স্বীকৃত পদ্ধতি আছে। সেগুলো অনুসরণ করেই এ গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। এ গবেষণার তথ্য সংরক্ষণ করা জরুরি বলেও মত প্রকাশ করেন এ গবেষক।

গবেষণা বিষয়ে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক ড. জীবনকৃষ্ণ বিশ্বাস সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, স্থানীয় ধানের জাত নিয়ে কাজ করায় গবেষকের প্রশংসা করেছেন।

 

টাইমস/জেএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
চলমান তাপপ্রবাহ রেকর্ড ভেঙেছে ৭৬ বছরের Apr 26, 2024
img
অলসতা কাটিয়ে সকালে ঘুম থেকে উঠতে করণীয় Apr 26, 2024
img
বাংলাদেশে চিকিৎসা সুবিধায় থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী Apr 26, 2024
img
চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি Apr 26, 2024
img
সেন্সর বোর্ডে আটকে গেল রায়হান রাফীর নতুন সিনেমা ‘অমীমাংসিত’ Apr 26, 2024
img
বাংলাদেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে অথচ বিরোধী দল দেখে না: কাদের Apr 26, 2024
img
চলতি বছরই থাইল্যান্ডের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি হতে পারে : প্রধানমন্ত্রী Apr 26, 2024
img
দিনাজপুরে দুই ট্রাকের সংঘর্ষে নিহত ২ Apr 26, 2024
img
পাটগ্রাম সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত Apr 26, 2024
img
নতুন করে বেড়েছে সবজি-মাংসের দাম Apr 26, 2024