গর্ভবতী অবস্থায় মায়েরা লিপস্টিক বা এই জাতীয় ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে, তাদের শিশুর মোটর ফাংশনের ওপর দীর্ঘমেয়াদে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। সম্প্রতি ‘এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ’ জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য ওঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, লিপস্টিক এবং এজাতীয় ময়েশ্চারাইজারে প্রচুর পরিমাণে ‘পিএইচথ্যালেট’ নামক এক ধরনের প্লাস্টিক রাসায়নিক রয়েছে। তাই গর্ভকালে মা লিপস্টিক বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে পরবর্তীতে তার শিশুর মোটর স্কিলের (অঙ্গ সঞ্চালন) ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
মোটর স্কিল হলো ব্যক্তির এক ধরনের অর্জিত সামর্থ্য, যা সর্বোচ্চ নিশ্চয়তার সঙ্গে ব্যক্তির পূর্বনির্ধারিত গতিবিধি ও সক্রিয়তা নিয়ন্ত্রণ করে।
এই গবেষণায় কিছু গর্ভবতী নারী ও তাদের শিশুদের (তিন, পাঁচ ও সাত বছর বয়সে) প্রস্রাবের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এই নমুনায় থাকা ‘পিএইচথ্যালেট’ এবং এজাতীয় পদার্থের মাত্রা পরিমাপ করা হয়েছে।
অতঃপর শিশুদের মোটর স্কিল নির্ণয় করতে তাদের এগারো বছর বয়সে ‘BOT-2’ পরীক্ষা করা হয়েছে। ‘BOT-2’ হলো মোটর ফাংশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সমস্যা নির্ণয়ের একটি স্ক্রিনিং টেস্ট।
গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, যেসব মায়েরা গর্ভবতী অবস্থায় লিপস্টিক এবং ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করেন তাদের শিশুদের বিশেষ করে মেয়েদের কিশোর বয়সে মোটর ফাংশনের উপর দীর্ঘমেয়াদে বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
এছাড়া দেখা গেছে যে, যেসব ছেলে শৈশবে পিএইচথ্যালেট বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করেছেন তাদের মোটর ফাংশনের ওপর বিরূপ প্রভাব আরও বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্যাম ফ্যাক্টর-লিটভ্যাক বলেন, গবেষণায় অংশ নেয়া এক-তৃতীয়াংশ শিশুর মোটর স্কিল গড়পড়তা থেকেও অনেক কম। এমনকি যেসব শিশুদের সূক্ষ্ম পরিমাণে মোটর জটিলতা আছে, তারা শৈশবে দৈনন্দিন কার্যক্রমে বিশেষ করে খেলাধুলায় অংশ নিতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে।
এছাড়া যেসব শিশুর মোটর জটিলতা রয়েছে, তাদের আত্ম-উপলব্ধি ও আত্মমর্যাদাবোধ ছিল কম, উদ্বেগ ও হতাশা ছিল বেশি এবং বিভিন্ন ধরণের আচরণগত সমস্যা ছিল বলে গবেষক ফ্যাক্টর-লিটভ্যাক মন্তব্য করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, লিপস্টিক, খাবারের জন্য প্লাস্টিক কন্টেইনার, প্যাকেট ইত্যাদি অসচেতনভাবে ব্যবহারের কারণে মা ও শিশুরা প্লাস্টিক জাতীয় রাসায়নিক ‘পিএইচথ্যালেট’ ভোগ করে থাকে। এছাড়া ত্বকের মাধ্যমেও এসব বস্তু মানব দেহে প্রবেশ করতে পারে।
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক জুলি হার্বসম্যান বলেন, এই গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, রাসায়নিক প্লাস্টিক ‘পিএইচথ্যালেট’ ভোগ করার ফলে অ্যাজমা, জ্ঞানসম্বন্ধীয় জটিলতাসহ বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিতে পারে।
এজন্য যেসব লিপস্টিক ও ময়েশ্চারাইজারে রাসায়নিক ‘পিএইচথ্যালেট’ থাকে তা ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি এ ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে নীতি নির্ধারণকারী ও উৎপাদনকারী কর্তৃপক্ষকেও উদ্যোগ নেয়ার আহবান জানান গবেষক জুলি হার্বসম্যান।
টাইমস/এএইচ/জিএস