একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নরসিংদী-৩ (শিবপুর) আসনে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এদিন ওই আসনে কুন্দারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের মো. মিলন মিয়া নামের এক এজেন্টকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। পাহাড় ঘেরা ওই ভোট কেন্দ্রের চারদিকে এখন শুধু সুনসান নীরবতা। এছাড়াও ওইদিনকার সংঘর্ষের জ্বলন্ত প্রমাণ হয়ে সবুজ ঘাসে ছড়িয়ে আছে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ।
বুধবার দুপুরে কুন্দারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে।
সরেজমিনে ভোট কেন্দ্র ও আশেপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক থেকে কয়েকশ গজ ভেতরে ভোট কেন্দ্রেটির অবস্থান। পাহাড় ঘেরা ওই ভোট কেন্দ্রের আশেপাশে রয়েছে জনবসতিও। ভোট কেন্দ্রে দু’টি ভবন রয়েছে। ভয় আর আতঙ্কের মধ্যে ওই ভবনগুলোতে চলছে লেখাপড়া। স্কুলের শিক্ষার্থীরা ক্লাস রুমে ও বারান্দায় বসে আছে। এক পর্যায়ে কথা হয় কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে।
ছোট কোমলমতি শিক্ষার্থীরা নিয়ে যায় যেখান থেকে নিহত মিলন মিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয় সেই স্থানে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, রশি দিয়ে ঘটনাস্থল বেরিকেট দেওয়া রয়েছে। এছাড়াও সবুজ ঘাসে এখনো রক্তের ছোপ ছোপ দাগ রয়েছে। নিহতের শরীর থেকে ঝরা রক্ত শুকিয়ে গেলেও মুছে যায়নি। শুকিয়ে যাওয়া ছোপ ছোপ রক্ত কোথাও নরম ঘাসকে লাল করে রেখেছে।
স্কুলের শিক্ষার্থীরা জানান, এ ঘটনার পর থেকে তারা ও তাদের সহপাঠিদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকেই ভয়ে স্কুলে আসতে চাচ্ছে না। কিন্তু নতুন বই নেওয়ার জন্য অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্কুলে আসছেন।
এক পর্যায়ে কথা হয় জলিল নামের এক প্রত্যক্ষদর্শীর সাথে। ৬০ উর্ধ্ব ওই বৃদ্ধা স্কুলের পাশেই বসবাস করেন। তিনি জানান, ঘটনার দিন তিনি বাড়িতেই ছিলেন। সকাল থেকে ওই কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু বিকেলে হঠাৎ করে ওই কেন্দ্রে গণ্ডগোল দেখা দেয়। এ সময় আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের লোকজনের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়াও হয়েছে। তবে ওই সংঘর্ষে জড়িত কাউকে তিনি চিনতে পারেন নাই।
তিনি জানান, ভোট কেন্দ্রের মধ্যেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয় মিলনকে। পরে ভোট কেন্দ্র থেকে দৌড়ে বের হয়ে আসে সে। এক পর্যায়ে মাটিতে ঢলে পড়ে এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশে যতগুলো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সবগুলো নির্বাচনে ওই ভোট কেন্দ্র শান্তিপূর্ণভাবেই হয়েছে। কিন্তু এবার প্রথম বারের মতো এত বড় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে গেল। এতে এলাকার মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
উল্লেখ্য, গত রোববার বিকেলে কুন্দারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী জহিরুল হক ভূঞা মোহন ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লার সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপর মো. মিলন মিয়ার গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত মিলন মিয়া উপজেলার বাঘাব ইউনিয়নের বংপুর গ্রামের হযরত আলীর ছেলে। তিনি আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের দিন আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষে তিনি নিহত হন। পরে তার লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্ত শেষে দাফন করা হয়।
এ সম্পর্কে আরও জানতে পড়ুন...
ছেলের কবরের পাশে বসে বাবার কান্না
মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে মিলনের পরিবার
শিবপুরে ভোট কেন্দ্রে এজেন্ট খুনের ঘটনায় মামলা হয়নি এখনও
টাইমস/ কেআরএস/এইচইউ