মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার নিয়ে তৈরি বৈশ্বিক তালিকার শীর্ষ ২০ এ ঢুকে পড়েছে বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত দেশে করোনা সংক্রমণের হার আশঙ্কাজনক না হলেও তা দিনদিন বাড়ছেই। করোনা মোকাবিলায় সরকারের প্রথম দফা সাধারণ ছুটি (অঘোষিত লকডাউন) শেষে দেশে গত সপ্তাহব্যাপী সংক্রমণের হার ব্যাপক ভাবে বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে প্রতিদিনই বাড়ছে লাশের সারি।
এমন পরিস্থিতিতে এবার নতুন করে করোনা সংক্রমণের ‘হটস্পট’ বা এলাকা ভিত্তিক লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। জানা গেছে, আনুষ্ঠানিক এই লকডাউন রাজধানী ঢাকা দিয়েই শুরু করা হবে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকায় ‘পাইলট ভিত্তিতে’ লকডাউন কার্যকর করা হতে পারে। একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে শনিবার দুপুরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও কোভিড-১৯ বিষয়ক মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান খান বলেছেন, ‘হটস্পট বা ক্লাস্টার এরিয়া’ বিবেচনায় প্রথম দিকে রাজধানীর বিভিন্ন পাড়া, মহল্লা বা ওয়ার্ড এলাকা লকডাউন করা হবে। শুরুতে সীমিত পরিসরে ঢাকার মধ্যেই লকডাউন কার্যকরের চেষ্টা চলবে। কারণ এখন পর্যন্ত ঢাকাতেই কোভিড-১৯ এর রোগী সব থেকে বেশি। পরে পরিস্থিতি বিবেচনা করে অন্যান্য জেলা শহরকেও লকডাউন করা হবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, কোন কোন এলাকা লকডাউন করা হবে, তা চিহ্নিত করার জন্য আমরা আইসিটি বিভাগের সহায়তায় এরই মধ্যে ম্যাপিং এর কাজ শুরু করেছি। এই কাজে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও যোগ দিয়েছেন। কয়েকদিনের মধ্যেই সব কাজ শেষ হয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এনএম জিয়াউল আলম বলেন, জোন ভাগের খসড়া সম্পন্ন হয়েছে। ম্যাপিং তৈরির কাজও শুরু হয়েছে। চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাতে দু’একদিন সময় লাগবে। করোনা আক্রান্তের হারের ওপর ভিত্তি করে সারাদেশ ও বিভিন্ন এলাকাকে তিনটি স্তরে ভাগ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
জোন ভাগ হবে যেভাবে
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কোনও এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে প্রতি লাখে অন্তত ৩০ থেকে ৪০ জন করোনা আক্রান্ত হলে ওই এলাকাকে ‘রেড জোন’ ঘোষণা করা হবে। রোগীর সংখ্যা ৩০ থেকে ৪০ জনের কম হলে ওই এলাকাকে ‘ইয়োলো জোন’ হিসেবে বিবেচিত করা হবে। আর যে এলাকায় কোন আক্রান্ত ব্যক্তি থাকবে না, সেই এলাকা ‘গ্রীণ জোন’ হিসেবে ঘোষণা করা হবে।
‘রেড জোন’ এলাকায় এবার কঠোর ভাবে লকডাউন নিশ্চিত করা হবে। সাধারণ ছুটি চলাকালীন মানুষ যেভাবে চলাফেরা করেছে, লকডাউনে তা কোনো ভাবেই সহ্য করবে না সরকার। তবে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে সম্পূর্ণ দীর্ঘমেয়াদে ইয়োলো জোনকেও লকডাউনের আওতায় আনা। সেক্ষেত্রে ‘ইয়েলো জোন’-এ কিছুটা শিথিলতা থাকতে পারে। যেমন- ইয়েলো জোনের বাসিন্দারা জরুরি প্রয়োজনে কাগজ দেখিয়ে সীমিত পরিসরে ইয়েলো জোন এলাকা থেকে বের হতে পারবেন।
এর আগে মহামারি করোনার সংক্রমণ রোধে দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা সাধারণ ছুটি শেষ হয় গত ১৩ মে। এরপর থেকে দেশে করোনা সংক্রমণের মাত্রা ও মৃত্যুর হার বাড়তে শুরু করে।
এরই মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় শুক্রবার প্রথম কক্সবাজার পৌরসভাকে ‘রেড জোন’ হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। আগামী ২০ জুন পর্যন্ত কক্সবাজার পৌর এলাকা লকডাউনের আওতায় থাকবে বলে জানা গেছে।
এদিকে আগামী এক সপ্তাহে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের হার ও মৃত্যু হার আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির একাধিক সদস্য। তাই এলাকা বা ক্লাস্টারভিত্তিক লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার।
টাইমস/এসএন