গোপনে বিয়ে করেও রক্ষা হয়নি ভোলার আলোচিত সেই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (৩৬তম বিসিএস) নাদির হোসেন শামীমের। গোপন বিয়ের খবর পেয়ে তাকে বিয়ে করতে চাওয়া ৩ নরীর মধ্যে দুইজন তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন। এদের মধ্যে একজন শিক্ষক ও অপরজন আনন্দমোহন কলেজে পড়াশোনা করেন। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি নাকি তাদের ধর্ষণ করেছেন এমন অভিযোগ উঠেছে। এর বাইরেও ওই বিসিএস ক্যাডার একাধিক নারীর সঙ্গে সম্পর্ক করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা অবস্থায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর সঙ্গে বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্কে জড়ান তিনি। এছাড়াও চট্টগ্রামে আরেক এয়ারফোর্স কর্মকর্তার সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এসব অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নাদির হোসেন শামীমকে ক্লোজড (ওএসডি) করা হয়েছে। বিষয়টি রোববার নিশ্চিত করেন ভোলা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুম আলম ছিদ্দিক।
জেলা প্রশাসক জানান, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে। নাদির হোসেন শামীমের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।
এদিকে নাদির হোসেন শামীমের বিরুদ্ধে ইমেইলযোগে ভোলা জেলা প্রশাসক বরাবরে দুই ছাত্রী লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এর বাইরে আরো দুইজনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে বলেও দাবি করা হয়। এত অভিযোগের মাঝেও নাদির হোসেন শামীম গত ৫ জুলাই বিয়ে করেছেন অন্য এক নারীকে। বিয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেন তার বড় ভাই কবীর হোসেন সুজন।
অভিযোগকারী এক ভিকটিম জানায়, প্রায় ৮ মাস আগে হবিগঞ্জের এনডিসি নাদির হোসেন শামীমের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট শামীমের সঙ্গে এক পর্যায়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এরপর এ ভিকটিমকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সিলেটের একটি হোটেলে নিয়ে রাতভর ধর্ষণ করেন। এরপর বিয়ের কথা বললে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে আসছে ওই ম্যাজিস্ট্রেট।
তিনি আরো জানান, পারিবারিকভাবে বিয়ের বিষয়টি মেনে নেয়ার জন্য এরপর তিনি নাদির হোসেন শামীমের ময়মনসিংহের গৌরীপুরস্থ বাসায় যান। সেখানে শামীমের পরিবারের লোকজন তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেন। মোবাইলে থাকা প্রমাণগুলো ডিলেট করে দেন। ভিকটিম সিলেটের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক।
তিনি আরো জানান, হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের নিকট নারী নির্যাতনের শিকার ওই নারী নালিশ নিয়ে সরাসরি গিয়েছিলেন। সেখানে বিচারের বদলে তিনি পেয়েছেন ভয়ভীতি আর হুমকি। তিনি আক্ষেপ করে আরো বলেন, তার সঙ্গে আমার বিয়ে বা অপকর্মের জন্য বিচার না করেই রাতের আঁধারে নাদির হোসেন শামীমকে ভোলা জেলা প্রশাসনে বদলি করা হয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া মামলা নেয়া সম্ভব নয় বলে পুলিশও মামলা নিচ্ছে না।
এদিকে গৌরীপুরের আরও একটি মেয়ে বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্কের বিষয়ে ভোলা জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগ করেছেন। নাদির হোসেন শামীম ৩৬ তম বিসিএস উত্তীর্ণ হন। তিনি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ২নং গৌরীপুর ইউনিয়নের পশ্চিম শালীহর গ্রামের আব্দুল কদ্দুসের ছেলে। এ ভিকটিম আরো জানায়, ২০০৭ সালে শামীম গৌরীপুর সরকারি কলেজ হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া করাকালীন তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। ভিকটিম তখন ৮ম শ্রেণির ছাত্রী। বর্তমানে বাংলা বিষয়ে অনার্স করছে। মুঠোফোনে ডেকে নিয়ে সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ আগস্ট তার সঙ্গে শারীরিক মেলামেশা করে।
অপরদিকে ওই ম্যাজিস্ট্রেটের বিয়ের খবরে চট্টগ্রামের আরেক নারীও শামীমের স্ত্রী দাবি করেন। ওই নারী জানান, তার সঙ্গে মুনশী দিয়ে ধর্মীয় শরীয়া মোতাবেক বিয়ে করে আড়াই বছর ঘরসংসারও করেছেন। ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতিকালীন সময়ে তার সঙ্গে এ সম্পর্ক গড়ে উঠে। তিনি এ অভিযোগটি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও থানা প্রশাসকেও অবহিত করেছেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে নাদির হোসেন শামীমের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য তার মোবাইলে ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
টাইমস/জেকে/এইচইউ