ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল প্যানেলের সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান। প্রতিবাদে তিনি ভোট দেননি বলেও জানান।
সোমবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে সুফিয়া কামাল হলের সামনে বাংলাদেশ টাইমস-কে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় একটি প্রহসনের নির্বাচন হচ্ছে। গোটা নির্বাচন ক্ষমতাসীন দলের সংগঠনের নিয়ন্ত্রণে। ভোটকেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে, জালভোট, রাতেই ভোটদান, হামলা যা করা দরকার, সবই তারা করছে। আর আমাদের সুর্যসেন হলের এক প্রার্থীকে ধাওয়া দিয়ে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা বের করে দিয়েছে। এসব কারণে এর প্রতিবাদে ভোট দেয়া থেকে বিরত থেকেছি। অন্যান্য হল পরিদর্শন করে ভোট গ্রহণ দেখবো।
ছাত্রদল ভোট বর্জন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দুপুরের মধ্যে সব হলের প্রার্থীদের নিয়ে বসে আমরা সিদ্ধান্ত নেব ভোট বর্জন করব কি না। তা মধুর ক্যান্টিনে সাংবাদিক সম্মেলন করবো।
ছাত্রদলের এ প্রার্থীর অভিযোগ, সুফিয়া কামাল হলে ছাত্রদলের প্রার্থী ও ভোটারদের ঢুকতে দেয়া হয়নি। শুনেছি রাতেই সুফিয়া হলে ব্যালট ভর্তি করে রাখা হয়েছে। সেই অভিযোগ পেয়ে আমরা সেখানে গিয়েছিলাম।
সূর্যসেন হলের অনিয়মের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘সূর্য সেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাকসুদ কামাল নিজে ছাত্রদলের প্রার্থীদেরকে বের করে দিয়েছেন। সামগ্রিকভাবে যেসব অনিয়মের কথা শুনতে পাচ্ছি তাতে এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত ভোট না দেয়ার।
প্রশাসনের বিরুদ্ধে এ ছাত্রনেতা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি পবিত্র জায়গায় শিক্ষকরা বিবেকহীনভাবে নির্লজ্জের মতো সরকারের নির্দেশে ছাত্রলীগের হয়ে কাজ করছেন। কুয়েত মৈত্রী হলে উদ্ধার হওয়া বস্তাভর্তি জাল ব্যালট তার প্রমাণ।
এর আগে সকালে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দেয়ার অভিযোগ করেন মোস্তাফিজুর। এফ রহমান হল ও হাজী মোহাম্মদ মহসিন হলের ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ দেখে তিনি এ অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ভোটকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ ছাত্রলীগের হাতে। হলের ফটকে ছাত্রলীগের কর্মী-সমর্থকরা অবস্থান নিয়ে আছে। ছাত্রদলের প্রার্থীদের কেন্দ্রে ঢুকতে দিচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ গেটের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে থাকবে। কিন্তু পরিস্থিতি ঠিক তার উল্টো। আমরা দেখছি গোটা নির্বাচনের নিয়ন্ত্রণ ছাত্রলীগের হাতে।
ভোটকেন্দ্রে কৃত্রিম লাইন তৈরি করা হয়েছে জানিয়ে ছাত্রদলের এ ভিপি প্রার্থী বলেন, ভোটকেন্দ্রে কৃত্রিম একটি লাইন তৈরি করে রাখা হয়েছে। লাইনে যারা দাঁড়িয়েছেন তারা সাধারণ ভোটারদের প্রবেশ করতে দিচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, ২৮ বছর পর অনুষ্ঠেয় ডাকসু নির্বাচন শুরু হয়েছে সকাল ৮টায়। বেলা ২টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। এতে ৪৩ হাজার ২৫৬ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন। মোট ভোটারের মধ্যে ছাত্র ২৬ হাজার ৯৪৪ এবং ছাত্রী ১৬ হাজার ৩১২ জন।
ডাকসুতে ২৫ পদে নির্বাচন হচ্ছে। বিভিন্ন পদের মধ্যে আছে ভিপি, জিএস, এজিএস একটি করে ৩টি। আরও আছে- সম্পাদকীয় ৯টি এবং ১৩টি সদস্যপদ। এসব পদের জন্য বিভিন্ন প্যানেল ও স্বতন্ত্রসহ প্রার্থী ২২৯ জন। তাদের মধ্যে স্বতন্ত্রসহ ভিপি ২১, জিএস ১৪ জন।
ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিয়েছে ১৩টি প্যানেল। অন্যদিকে প্রত্যেক হল সংসদে ১৩টি পদে নির্বাচন হচ্ছে। এর মধ্যে ভিপি, জিএস, এজিএস একটি করে তিনটি। আরও আছে সম্পাদকীয় ৬, সদস্য ৪টি। হল সংসদ (১৮টি হল, ২৩৪ পদে) প্রার্থী ৫০৯ জন। হল সংসদ ও ডাকসু মিলিয়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে গড়ে ৩৮টি করে ভোট দিতে হবে। সুষ্ঠুভাবে ভোটের কাজ শেষ করতে রিটার্নিং অফিসারসহ (আরও) ৪২ জন কাজ করছেন।
টাইমস/টিআর/এইচইউ