তৃতীয় ধাপেও আ.লীগের জয়জয়কার

তৃতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ২৫ জেলার ১১৭ উপজেলার বেশিরভাগেই জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।

রোববার দেশের ২৫ জেলার ১১৭টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়। কিন্তু আগের রাতে ভোট দেওয়ার অভিযোগে ভোট শুরুর দুই ঘণ্টা পর সকাল ১০টার দিকে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার পুরো নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন।

সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট চলে। রোববার বিকেল ৪টায় ভোট গ্রহণ শেষে গণনা শুরু হয়। এর পর একে একে বিভিন্ন উপজেলার ফলাফল ঘোষণা করেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা।

এর মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের ৭৭ জন প্রার্থী বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। অন্যদিকে দলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছেন ৩৭ জন। জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন একজন। নির্বাচনে সহিংসতার কারণে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার পাঁচটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করায় আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা স্থগিত রয়েছে। এ উপজেলায় নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মো. ছারওয়ার আলম এগিয়ে রয়েছেন।

আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান হলেন যারা

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে রাব্বুল হোসেন, শিবগঞ্জে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, নাচোলে আব্দুল কাদের ও গোমস্তাপুরে হুমায়ুন রেজা; রংপুর সদরে নাছিমা জামান ববি ও মিঠাপুকুরে জাকির হোসেন; চুয়াডাঙ্গা সদরে আসাদুল হক বিশ্বাস; মাগুরা সদরে আবু নাসির বাবলু; নড়াইল সদরে নিজাম উদ্দিন খান নিলু ও কালিয়ায় কৃষ্ণপদ ঘোষ; সাতক্ষীরা সদরে আসাদুজ্জামান বাবু, তালায় ঘোষ সনৎ কুমার, আশাশুনিতে এবিএম মোস্তাকিম, দেবহাটায় আবদুল গণি ও শ্যামনগরে এসএম আতাউল হক দোলন; কুষ্টিয়া সদরে আতাউর রহমান আতা (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়), দৌলতপুরে অ্যাডভোকেট এজাজ আহমেদ মামুন, মিরপুরে কামরুল আরেফিন, ভেড়ামারায় আক্তারুজ্জামান মিঠু, কুমারখালীতে আবদুল মান্নান খান, খোকসায় সদর উদ্দিন খান; মেহেরপুরের গাংনীতে এম এ খালেক; ঝিনাইদহ সদরে অ্যাডভোকেট আব্দুর রশিদ ও কালীগঞ্জে মো. জাহাঙ্গীর সিদ্দিক (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়);

বরিশালের উজিরপুরে আব্দুল মজিদ সিকদার বাচ্চু ও বাবুগঞ্জে কাজী ইমদাদুল হক দুলাল; ঝালকাঠি সদরে খান আরিফুর রহমান, রাজাপুরে মো. মনিরুজ্জামান, কাঁঠালিয়ায় মো. এমাদুল হক মনির ও নলছিটিতে সিদ্দিকুর রহমান (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়); কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে ইয়াছির মিয়া, ভৈরবে সায়দুল্লাহ মিয়া, পাকুন্দিয়ায় রফিকুল ইসলাম রেনু, করিমগঞ্জে নাসিরুল ইসলাম খান আওলাদ, ইটনায় কামরুল হাসান, অষ্টগ্রামে মো. শহীদুল ইসলাম জেমস ও মিঠামইনে আছিয়া আলম (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়); চাঁদপুর সদরে নূরুল ইসলাম, শাহরাস্তিতে ফরিদুল্লাহ চৌধুরী, ফরিদগঞ্জে জাহিদুল ইসলাম রোমান ও কচুয়ায় শাহজাহান শিশির; লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে মনির হোসেন চৌধুরী ও রায়পুরে মামুনুর রশিদ;

চট্টগ্রামের পটিয়ায় মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, বোয়ালখালীতে নূরুল আলম ও বাঁশখালীতে চৌধুরী মো. গালিব; কক্সবাজারের উখিয়ায় অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী; শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে এএসএম আব্দুল্লাহ হেল ওয়ারেজ নাঈম; মাদারীপুরের রাজৈরে মোতালেব মিয়া ও কালকিনিতে মীর গোলাম ফারুক (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়); মানিকগঞ্জের ঘিওরে হাবিবুর রহমান ও দৌলতপুরে নুরুল ইসলাম রাজা; নরসিংদীর শিবপুরে হারুনুর রশিদ খাঁন, মনোহরদীতে সাইফুল ইসলাম খাঁন বীরু ও বেলাবতে শমসের জামান ভূইয়া রিটন, গাজীপুরের কাপাসিয়ায় আমানত হোসেন খান ও কালীগঞ্জে মোয়াজ্জেম হোসেন (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়), রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে আবুল কালাম আজাদ ও গোয়ালন্দে মো. নুরুল ইসলাম (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়) চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

এর আগে শরীয়তপুরের ছয়টি উপজেলার মধ্যে পাঁচটি উপজেলায় নির্বাচনের আগে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এঁরা হলেন শরীয়তপুর সদর উপজেলায় আবুল হাসেম তপাদার, জাজিরা উপজেলায় মোবারক আলী শিকদার, নড়িয়া উপজেলায় একেএম ইসমাইল হক, ভেদরগঞ্জ উপজেলায় হুমায়ুন কবির মোল্যা ও ডামুড্যা উপজেলায় আলমগীর হোসেন মাঝি।

নির্বাচনের আগে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা এমএ কুদ্দুছ, দক্ষিণ উপজেলায় এইচএম গিয়াস উদ্দিন ও হাজীগঞ্জ উপজেলায় গাজী মো. মাইনুদ্দিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

বরিশালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন সদরে আলহাজ সাইদুর রহমান রিন্টু, বানারীপাড়ায় মো. গোলাম ফারুক, গৌরনদীতে সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরী, আগৈলঝাড়ায় আব্দুল রইচ সেরনিয়াবাত, মুলাদীতে তারিকুল ইসলাম মিঠু ও বাকেরগঞ্জে মোহাম্মদ শামসুল আলম চুন্নু। ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের আবুল কালাম আজাদ।

মেহেরপুর সদর উপজেলায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন অ্যাডভোকেট ইয়ারুল ইসলাম ও মুজিবনগরে জিয়া উদ্দিন বিশ্বাস। মানিকগঞ্জে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগের ইসরাফিল হোসেন, সাটুরিয়ায় আবদুল মজিদ, শিবালয়ে রেজাউর রহমান জানু ও হরিরামপুরে দেওয়ান সাইদুর রহমান।

৩২টিতে চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় আয়ুব হোসেন, দামুড়হুদায় আলী মুনছুর বাবু ও জীবননগরে হাফিজুর রহমান; মাগুরার শ্রীপুরে মাহমুদুল গণি শাহীন, মহম্মদপুরে আব্দুল্লাহেল কাফি ও শালিখায় অ্যাডভোকেট কামাল হোসেন; নড়াইলের লোহাগড়ায় শিকদার আব্দুল হান্নান রুনু; সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে সাঈদ মেহেদী ও কলারোয়ায় আমিনুল ইসলাম লাল্টু; ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুতে মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন, শৈলকূপার মোশারফ হোসেন; লক্ষ্মীপুর সদরে একেএম সালাহ উদ্দিন টিপু, রামগতিতে শরাফ উদ্দিন আজাদ সোহেল ও কমলনগরে মেজবাহ উদ্দিন আহম্মেদ বাপ্পী; বরিশালের হিজলায় বেলায়েত হোসেন ঢালী; নরসিংদীর রায়পুরায় সাইফুল আবদুস সাদেক; কিশোরগঞ্জ সদরে মামুন আল মাসুদ খান, হোসেনপুরে মোহাম্মদ সোহেল ও নিকলীতে রুহুল কুদ্দুছ ভুইয়া জনি; শেরপুরের শ্রীবরদীতে এডিএম শহীদুল ইসলাম ও নালিতাবাড়ীতে মোকসেদুর রহমান লেবু;

চট্টগ্রামের চন্দনাইশে আব্দুর জব্বার চৌধুরী; কক্সবাজারের পেকুয়ায় জাহাঙ্গীর আলম, মহেশখালীতে শরীফ বাদশা, রামুতে সোহেল সরওয়ার কাজল ও টেকনাফে নূরুল আলম; মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে মুশফিকুর রহমান হান্নান, শরীয়তপুরের গোসাইরহাটে ফজলুর রহমান, রাজবাড়ী সদরে ইমদাদুল হক বিশ্বাস ও পাংশায় ফরিদ হাসান ওদুদ, গাজীপুরের কালিয়াকৈরে কামাল উদ্দিন শিকদার ও শ্রীপুরে অ্যাডভোকেট শামসুল আলম প্রধান উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

স্বতন্ত্র পাঁচজন জয়ী

গোপালগঞ্জের পাঁচটি উপজেলা নির্বাচনে এবার দলীয় প্রতীক বরাদ্দ করেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। পাঁচটি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন তাঁরা। এঁরা হলেন সদরে শেখ লুৎফার রহমান বাচ্চু, কোটালীপাড়ায় বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাস, টুঙ্গিপাড়ায় মো. সোলায়মান বিশ্বাস, মুকসুদপুরে মো. কাদির হোসেন মিয়া ও কাশিয়ানিতে সুব্রত ঠাকুর হিল্টু।

জাতীয় পার্টির একজন বিজয়ী

কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলায় জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে মো. জহিরুল ইসলাম ভূইয়া শাহিন বিজয়ী হয়েছেন।

তৃতীয় ধাপে ১২৭টি উপজেলা পরিষদে ভোটের তফসিল ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আদালতের নির্দেশে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া ও চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার ভোট স্থগিত করা হয়। নরসিংদী সদর ও কক্সবাজার সদর উপজেলার ভোট চতুর্থ ধাপে স্থানান্তর করে ইসি। আর তিন পদের কোনো পদেই প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ছয়টি উপজেলা পরিষদে ভোট গ্রহণ করা হয়নি। এই উপজেলাগুলো হলো বরিশালের গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, মাদারীপুরের শিবচর, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ, নরসিংদীর পলাশ ও চট্টগ্রামের আনোয়ারা।

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ৫৫ জন

তৃতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে মোট ৫৫ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের ভেতরে ৩৩ জন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী, নয়জন ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও ১৩ জন নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী রয়েছেন। তৃতীয় ধাপে রংপুর সদর, গোপালগঞ্জ সদর, মানিকগঞ্জ সদর ও মেহেরপুর সদরে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হয়।

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
আ.লীগ নেতাকর্মীদের দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর Apr 26, 2024
img
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ চুয়েট, খোলা থাকবে হল Apr 26, 2024
img
প্রথমবার এশিয়া কাপে আম্পায়ারিং করবেন বাংলাদেশের জেসি Apr 26, 2024
img
গাজায় ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কারে লাগতে পারে ১৪ বছর : জাতিসংঘ Apr 26, 2024
img
বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী Apr 26, 2024
img
চলমান তাপপ্রবাহ রেকর্ড ভেঙেছে ৭৬ বছরের Apr 26, 2024
img
অলসতা কাটিয়ে সকালে ঘুম থেকে উঠতে করণীয় Apr 26, 2024
img
বাংলাদেশে চিকিৎসা সুবিধায় থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী Apr 26, 2024
img
চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি Apr 26, 2024
img
সেন্সর বোর্ডে আটকে গেল রায়হান রাফীর নতুন সিনেমা ‘অমীমাংসিত’ Apr 26, 2024