একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে সহিংসতায় নিহত ইসমাইল হোসেন হত্যা মামলার আট আসামীকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
সোমবার সকালে জামিন চেয়ে আত্মসমর্পণ করতে গেলে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা জজ আদালত-৩ এর বিচারক এমদাদুল হক রিপন তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। নিহত ইসমাইল দেওয়াড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন।
আসামীরা হলেন, অসীম রেজা (৩২), মোস্তাক আহম্মেদ ওরফে মেজরা (৩৫), শরীফ দুলাল ওরফে সেতু (৩৬), সাখাওয়াত হোসেন (৪০), মীর কাশিম ওরফে সাহেব (৪৮), মো. লাভলু (৫০), ভকত আলী (৪২) ও আমিনুল ইসলাম (৪৭)। গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের মালিগাছা ও ধরমপুর গ্রামে তাদের বাড়ি। এরা সবাই বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
জানা গেছে, রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের ৭নং পালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রে গত ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনী সহিংসতায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ইসমাইলকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এই হত্যা মামলার মোট ২২জন আসামীর মধ্যে ৮ জন আসামী সোমবার সকালে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিন আবেদনের জন্য আত্মসমর্পণ করে। এসময় আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ইসমাইল হত্যা মামলায় মোট ২২জন আসামীর মধ্যে এই ৮ আসামী হাইকোর্ট থেকে ১৪ দিনের আগাম জামিনে ছিলেন।
এ মামলায় এজাহারনামীয় আসামীর সংখ্যা ২২ জন। সম্প্রতি কয়েকদফায় ১৫ জনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। আর সোমবার আত্মসমর্পণ করে কারাগারে গেলেন আরও আট আসামী। এখন এ মামলায় মোট ২৩ জন আসামী কারাগারে গেলেন।
শুনানীর সময় বাদি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন পিপি মো: ইব্রাহিম হোসেন, এ্যাডভোকেট এজাজুল হক মানু। আর আসামী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন এ্যাডভোকেট শামসুল হক ও জুয়েল।
মামলাটির বাদীপক্ষের আইনজীবী এজাজুল হক মানু জানান, সোমবার যেসব আসামীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে তারা উচ্চ আদালত থেকে দুই সপ্তাহের অন্তবর্তীকালীন জামিনে ছিলেন। জামিনের মেয়াদ শেষে তারা নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এ সময় তাদের আইনজীবী জামিনের আবেদন করেন। তবে আদালত আবেদন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
নিহত ইসমাইল হোসেন দেওপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ওই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। গেল বছরের ৩০ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণের দিন বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা পালপুর ভোটকেন্দ্র দখলে নিতে গেলে বাধা দিতে যান ইসমাইল। এ সময় তাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করা হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় তার স্ত্রী বিজলা বেগম বাদী হয়ে গোদাগাড়ী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
রাজশাহী জলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মুস্তাক আহমেদ জানান, এই হত্যা ঘটনার তদন্ত শেষে মোট ২২জনকে আসামী করে মামলা করা হয়। মামলার পর এখন পর্যন্ত মোট ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। ৪ জন আসামী পলাতক থাকায় তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। মামলাটির তদন্তের স্বার্থে এই আট জন আসামীকে পর্যায়ক্রমে রিমান্ডের জন্য আবেদন করা হবে। পলাতকদের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
টাইমস/এইচইউ