রেলপথকে আরো জনমুখী করতে ৪৩টি উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে রয়েছে রেলকে সার্ক করিডোরের সঙ্গে সংযুক্ত করণ প্রকল্প। প্রায় ২ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪৪ কোটি টাকার এসব প্রকল্প আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ বাস্তবায়ন করার কথা রয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর রেলের উন্নয়নের জন্য প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৩টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এসব প্রকল্পের অনেকগুলোই বাস্তবায়িত হয়েছে এবং বেশ কিছু চলমান রয়েছে।
রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বাংলাদেশ টাইমসকে বলেন, বর্তমান সরকার যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে রেলকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে বাজেটে বরাদ্দও বাড়িয়েছে। পাশাপাশি রেলের উন্নয়নে এডিবি, ভারত, চীন, জাইকাসহ বেশ কয়েকটি দাতা সংস্থাও সহায়তার হাত বাড়িতে দিয়েছে। তারা বাংলাদেশের রেলের উন্নয়নে সহজ শর্তে ঋণ দিতে রাজি হয়েছে। তবে তাদের শর্ত হলো এ প্রকল্পগুলোয় স্বচ্ছতা বজায় রাখা।
রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, পূর্বাঞ্চল এবং পশ্চিমাঞ্চলের লেভেল ক্রসিং গেটগুলোর মান উন্নয়নের কাজ চলছে। এছাড়া রাজধানী ঢাকার চারদিকে বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণের জন্য সমীক্ষা কার্যক্রম, পশ্চিমাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প গুলোর সমীক্ষার পাশাপাশি রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য সিগন্যালিংসহ রেল লাইন সংস্কার সহ আরো বেশকিছু প্রকল্পের কাজ চলছে।
রেল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রেলওয়ের লোকোমোটিভ, ক্যারেজ ও ওয়াগনগুলো রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত এবং নির্মাণ করার লক্ষ্যে নীলফামারীর সৈয়দপুর, দিনাজপুরের পার্বতীপুর ও চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে প্রতিষ্ঠিত রেল কারখানাগুলোতে লোকবল সঙ্কট, বাজেট স্বল্পতা, প্রয়োজনীয় কাঁচামালের অভাব, পুরনো যন্ত্রপাতি এবং আধুনিক মেশিনারিজের অভাবে স্থবিরতা বিরাজ করছে।
বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ের বহরে ২৫৮টি রেল রয়েছে। লোকোমোটিভ- এর গতিশীলতা ধরে রাখতে এবং আয়ুষ্কাল ঠিক রাখার জন্য প্রতি ছয় বছর পর পর বাংলাদেশ রেলওয়ের সব ধরনের লোকোমোটিভে বড় ধরণের মেরামত করার প্রয়োজন হয়।
লোকবল ঘাটতি, বাজেট স্বল্পতা, আধুনিক মেশিনারীজ এবং প্রয়োজনীয় কাঁচামালের স্বল্পতার কারণে বাংলাদেশ রেলওয়ের কারখানাগুলোর উৎপাদন কার্যক্ষমতা দিন দিন কমছে। কারখানাগুলো তার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছে না। সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় যাত্রীবাহী মিটার গেজ গাড়ী প্রতিমাসে ৪৫টা, ব্রড গেজ গাড়ী ৩০টা এবং মালবাহী গাড়ী দৈনিক ৭টা মেরামতের কথা থাকলেও পর্যাপ্ত লোকবল, প্রয়োজনীয় কাঁচামালের অভাব এবং নিম্নমানের মালামাল সরবরাহ করার কারণে উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে।
পশ্চিমাঞ্চলের মোট যাত্রীবাহী গাড়ির সিডিউল হালনাগাদ রাখার জন্য প্রতি বছর বিজি (মিটার গেজ) ১৮০টি এবং এমজি (ব্রডগেজ) ১৭৬টি গাড়ী মেরামত করা প্রয়োজন হলেও প্রতি বছর বিজি (মিটার গেজ) ১৫৬টি এবং এমজি (ব্রডগেজ) ১১০টি গাড়ী সিডিউল করা সম্ভব হয়। একই অবস্থা পাহাড়তলী রেলওয়ে কারখানাও।
জানা গেছে, ১৯৬৯-৭০ সালে যেখানে রেলওয়েতে জনবল ছিল প্রায় ৫৬ হাজার, বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২৫ হাজারের। গত পাঁচ বছরে বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় দেড়শ স্টেশন। অন্যদিকে বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় পৌনে ৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ। খাদ্য ও জ্বালানি তেল পরিবহন করত, এমন প্রায় ৫২টি লাইনেও সাম্প্রতিক সময়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
রেলমন্ত্রী মোঃ নূরুল ইসলাম সুজন বাংলাদেশ টাইমসকে বলেন, মহাপরিকল্পনার আওতায় স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে তিন ধরনের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে কোনো কোনোটির কাজ আগামী ৫ বছরের মধ্যে সম্পন্ন হবে। আবার কোনো কোনো প্রকল্প শেষ হতে আরো কিছু সময় লাগবে।
মন্ত্রী বলেন, এ মাস্টারপ্ল্যান পুরোপুরি শেষ করা কঠিন। তবে এ কাজটি সম্পন্ন হলে দেশের রেলওয়ে নজির সৃষ্টি করবে। প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ট্রান্স-এশিয়ান রেল রুটেও বাংলাদেশ যুক্ত হবে। ফলে যোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হবে। বৃদ্ধি পাবে আয়ও। বিশ্বের উন্নত দেশের মত এ দেশেও যাত্রীরা রেলের মাধ্যমে সর্বাধিক ও সর্বাধুনিক সুবিধা পাবেন বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
রেলমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, পরিকল্পনাটি রেলওয়ে সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি যাচাই-বাছাই করার পরে গত বছরের ৩০ জুন পরিকল্পনা কমিশনের ট্রান্সপোর্ট সেক্টর কো-অর্ডিনেশন (টিএসসি) কর্তৃক অনুমোদিত হয়। ৫ বছর মেয়াদী ৪টি পর্যায়ে এ প্রকল্পটি শেষ হবে।
এ বিষয়ে রেলের মহাপরিচালক মোঃ শামছুজ্জামান বাংলাদেশ টাইমসকে বলেন, আমরা দেশের রেল বিভাগকে চাঙ্গা করতে চাচ্ছি। কারণ প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে এভাবেই নির্দেশ দিয়েছেন। সেই জন্য মিয়ানমার ও ভারতের অনেকগুলো রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। তা ছাড়া দেশের প্রায় প্রতিটি জেলা শহরের সাথে যোগাযোগ স্থাপন এ প্ল্যানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
টাইমস/টিআর/এমএস