জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনুর পক্ষে লড়বেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না। রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ যান এই প্রবীণ আইনজীবী। এদিন ট্রাইব্যুনালে মামলাটির ‘আনুষ্ঠানিক অভিযোগ’ দাখিলের দিন ধার্য ছিল।
কার্যতালিকা অনুসারে বিষয়টি শুনানিতে উঠলে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম ট্রাইব্যুনালকে জানান, গত ২৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২-এ ইনুর বিরুদ্ধে মামলার ‘আনুষ্ঠানিক অভিযোগ’ দাখিল করা হয়। আগামীকাল সোমবার মামলাটির বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।
সোমবার ট্রাইব্যুনালে ইনুর পক্ষে আইনজীবী পান্না উকালতনামা দাখিল করবেন বলে দেশের একটি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন তার সহযোগী আইনজীবী নাজমুস সাকিব। পরে ট্রাইব্যুনাল থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পান্না।
মানবতাবিরোধী অপরাধের আরেক মামলায় গত ২৪ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণের সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তিনজনের ফোনালাপের চারটি ফোনকল রেকর্ড বাজিয়ে শোনানো হয়। এর মধ্যে দুটি ছিল শেখ হাসিনা ও হাসানুল হক ইনুর মধ্যে।
এক সাংবাদিক এ বিষয়ে জেড আই খান পান্নার কাছে জানতে চান। জবাবে পান্না বলেন, ‘তিনি জুলাই আন্দোলনকারীদের ধরার কথা বলেছেন। পাশাপাশি এও বলেছেন, অ্যারেস্ট করা হোক, একদিন রেখে ছেড়ে দেওয়া হোক এবং কোনো প্রকারে যাতে গুলি চালানো না হয়।
সাউন্ড গ্রেনেড দিয়ে যাতে ভয় দেখানো হয়। এর মানে এই নয় যে তিনি হত্যা করতে উৎসাহিত করেছেন। সরকারে যেই, সেই এই কাজ করবে। ক্ষমতায় যারা থাকে, তারা টিকে থাকার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে। এটা দেইখা আসছি।
সারা পৃথিবীতেও তাই।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হত্যাযজ্ঞে (জুলাইয়ের) যদি অপরাধী হয়, অবশ্যই পারিশমেন্ট হওয়া উচিত। যেকোনো হত্যায় একটাও যদি হয়- সেটায় যে অপরাধী, তার পানিশমেন্ট হবে। কিন্তু প্রমাণ করতে হবে। গায়ের জোরে না।’
জেড আই খান পান্না বলেন, ‘ঘাটতি তো এভরি হোয়ার (সবখানে) আছে। আমার তো কোনো গ্যারানিন্ট নাই যে, এখান থেকে আমি সেইফলি বাসায় যেতে পারবো। বাসায় ঘুমাইতে পারবো এই গ্যারান্টিটা নাই।’ উদাহরণ হিসেবে গত ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধান নিয়ে মঞ্চ ৭১-এর অনুষ্ঠানে হামলা এবং পরে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার না করে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন ও সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলমকে গ্রেপ্তারের কথা বলেন।
এই আইনজীবী বলেন, ‘যারা অ্যাটাক করল, মব করল, তাদের কারো বিরুদ্ধে মামলা হইল না; মামলা হইল যারা ভিকটিম, তাঁদের বিরুদ্ধে। সো, এই অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রতি আমার শ্রদ্ধা থাকবে কোত্থেকে?’ তখন এক সাংবাদিক জানতে চান, আপনি কি বলছেন রাষ্ট্রযন্ত্র সঠিকভাবে চলছে না? জবাবে পান্না বলেন, ‘সঠিকভাবে না, বেঠিকভাবে চলতেছে। উল্টাভাবে চলতেছে।’
ওই সাংবাদিক আবার প্রশ্ন করেন, এখানকার (ট্রাইব্যুনালের) বিচার ব্যবস্থাটা? জবাবে এই আইনজীবী বলেন, ‘এটা কি রাষ্ট্রের বাইরে? এটা কি বাংলাদেশের বাইরে?’ হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিভিন্ন পর্যায়ে উস্কানি, ষড়যন্ত্র, হত্যা, আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার ও নিপীড়নমূলক কৌশলে সমর্থনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের আটটি অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনিই মামলার একমাত্র আসামি। সোমবার এই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখাতে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ রয়েছে।
এসএস/এসএন