সংসদে রাঙ্গাকে তুলোধুনো, জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহবান

নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করায় এবার জাতীয় সংসদে নিজ দল ও সরকারী দলের সাংসদরা তুলোধুনো করলো জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাকে। এসময় তাকে সংসদে দাঁড়িয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ারও দাবি জানিয়েছেন দল দুটির সিনিয়র নেতারা।

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় জাপার দুজনসহ সাতজন সাংসদ মসিউর রহমানের সমালোচনা করে বক্তব্য দেন। তবে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান এ সময় সংসদে উপস্থিত ছিলেন না। তার দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মসিউর রহমানের বক্তব্য সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত। জাপা এই বক্তব্য ধারণ করে না। তবে এ বক্তব্যের জন্য জাপা লজ্জিত ও দুঃখিত।

গত রোববার জাপার এক আলোচনা সভায় শহীদ নূর হোসেনকে ‘নেশাগ্রস্ত’ বলে মন্তব্য করেন মসিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘নূর হোসেন একটা অ্যাডিকটেড ছেলে। একটা ইয়াবাখোর, ফেনসিডিলখোর ছিল।’

নিজ দলের মহাসচিব মসিউর রহমানের বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেন জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ। তিনি বলেন, মসিউর রহমানের এই বক্তব্য জাতীয় পার্টির বক্তব্য নয়। এটা কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য হতে পারে না। ওই বক্তব্যের জন্য জাতীয় পার্টি লজ্জিত, দুঃখিত এবং অপমানিত বোধ করছে। যে যুবক গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিতে পারেন, তাঁর প্রতি জাপার সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রয়েছে।

মসিউর যুবদল করতেন দাবি করে ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘সে কোথায় আন্দোলন করেছে? কোথায় সংগ্রাম করেছে? জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সম্পর্কে সে কথা বলেছে। বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কথা বলার ধৃষ্টতা সে কোথায় পেল? প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্কে কথা বলেছে। গণতন্ত্রের ছবক দেয়। লেখাপড়া জানে না, আবার কাগজের মালা গলায় দিয়ে পরিবহনশ্রমিক হয়ে হঠাৎ করে বাড়ি–গাড়ির মালিক হয়ে গেছে।’

সরকারের প্রতি ইঙ্গিত করে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘একটা কথা আছে, বান্দরকে লাই দিলে গাছের মাথায় ওঠে। এই লাই আমরা দিইনি। এই সংসদ তাকে লাই দিয়েছে। কী ধরনের ব্যক্তিত্ব, যার অতীত নেই, বর্তমান নেই। কিছুই ছিল না। হঠাৎ করে তাকে মন্ত্রী বানানো হলো। আমরা তো তাজ্জব হয়ে গেলাম!’

মসিউর রহমানের বক্তব্যে ‘ঘৃণা’ প্রকাশ করে সরকারি দলের জ্যেষ্ঠ সাংসদ তোফায়েল আহমেদ বলেন, মসিউর রহমান কুৎসিত বক্তব্য দিয়েছেন। একজন সুস্থ মানুষ স্বাভাবিক অবস্থায় এই বক্তব্য দিতে পারেন না। তিনি বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়েও খারাপ মন্তব্য করেছেন। তার এই বক্তব্য সারা দেশের মানুষের হৃদয়ে ব্যথা দিয়েছে। সংসদে দাঁড়িয়ে তার ক্ষমা চাওয়া উচিত। তোফায়েল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট না হলে তিনি বিজয়ী হতে পারতেন কি না, তা বলতে চাই না।’

সরকারি দলের জ্যেষ্ঠ সাংসদ শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, কোনো সুস্থ লোক এ ধরনের কথা বলতে পারেন না। তার বক্তব্য গোটা জাতি, বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী, নূর হোসেনকে আঘাত করেছে। তার শুধু ক্ষমা চাইলে হবে না, জাপাকে এর ব্যাখ্যা দিতে হবে।

সরকারি দলের সাংসদ আমির হোসেন আমু বলেন, শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো এইচ এম এরশাদের কুকীর্তি ঢাকতে মসিউর রহমান অবান্তর কথা বলেছেন। নূর হোসেনকে যখন হত্যা করা হয়, তখন ফেনসিডিল, ইয়াবা—এসব শব্দের সঙ্গেও মানুষ পরিচিত ছিল না।’ প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে মসিউরের বক্তব্যের সমালোচনা করে আমু বলেন, যাঁর নেতৃত্বে প্রতিমন্ত্রী ছিলেন, তার বিরুদ্ধে এত বড় ধৃষ্টতা দেখাতে পারেন না। তাকে ক্ষমা চাইতে হবে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

জাতীয় পার্টির আরেক সাংসদ মুজিবুল হক বলেন, মসিউর রহমান এই বক্তব্য কেন দিয়েছেন, এই সংসদের সদস্য হিসেবে তিনি সংসদেই তার ব্যাখ্যা দেবেন।

গণফোরামের সাংসদ সুলতান মোহাম্মদ মনসুর বলেন, মসিউর রহমান এই বক্তব্য দিয়ে সংসদকে অবমাননা করেছেন।

তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি বলেন, মসিউর রহমান বক্তব্য প্রত্যাহার করে লাভ হবে না, তাকে সংসদে এসে ক্ষমা চাইতে হবে।

 

Share this news on: