প্রয়াত হুমায়ূনের স্ত্রী গুলতেকিনের দ্বিতীয় বিয়ে

প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের সাবেক স্ত্রী, কবি গুলতেকিন খান। তার সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদের বিয়ে হয় ১৯৭৩ সালে। এর ঠিক ৩০ বছর পর ২০০৩ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়।

সম্প্রতি কবি গুলতেকিন খান বিয়ে করেছেন অতিরিক্ত সচিব ও কবি আফতাব আহমেদকে। তিনি (আফতাব আহমদ) আগেও একবার বিয়ে করেছিলেন। সেই স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়েছে প্রায় ১০ বছর আগে।

আফতাব আহমদ হচ্ছেন অভিনেত্রী আয়েশা আখতারের ছেলে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র ছিলেন।

পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে, আফতাব আহমদের সঙ্গে গুলতেকিনের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব। অনেক আগে থেকে দুজন দুজনকে চেনেন। মূলত বেশ ভালো বন্ধুত্ব থেকেই তাদের প্রেম হয়। সেখান থেকেই বিয়ে।

তবে এ ব্যাপারে জানতে গুলতেকিনের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

ফাইল

জানা যায়, দুই সপ্তাহ আগে ঢাকায় ছোট পরিসরে গুলতেকিনের বাসায় তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের পর গুলতেকিন আমেরিকায় গেছেন। দুই সপ্তাহ পর ফিরে বন্ধু-বান্ধব সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠান করবেন।

এদিকে গুলতেকিনের বিয়ের সত্যতা নিশ্চিত করতে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি তার ছেলে নুহাশ হুমায়ূনকে। 

তবে কবি আফতাব আহমেদের ঘনিষ্ট একজন তাদের বিয়ের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনিও একজন সরকারি কর্মকর্তা। তিনি গুলতেকিন ও আফতাব আহমেদকে ট্যাগ করে ফেসবুকে লিখেছেন,

Congratulations Aftab Ahmed sir and Gultekin Khan...Love and respect..

যার অর্থ: শুভেচ্ছা, আফতাব আহমেদ স্যার ও গুলতেকিন খান। দুজনের প্রতি ভালোবাসা আর সম্মান।

একসময় গুলতেকিন জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের জন্য নিজের জীবনটাই বিলিয়ে দিয়েছিলেন। তার ইচ্ছা ছিল তিনি ডাক্তার হবেন, তবে হুমায়ুন আহমেদকে বিয়ে করে তিনি তার (হুমায়ূন আহমেদ) সাফল্য দেখার অপেক্ষায় নিজের ভবিষ্যতের কথাই ভুলে গিয়েছিলেন। হুমায়ূন আহমেদের সাথে বিয়ের পর তার নাম হয়ে যায় গুলতেকিন আহমেদ।

ফাইল

গুলতেকিনের পরিবারের সাথে রেস্টুরেন্টে আফতাব আহমেদ (ছবিটি ২০১৭ সালে তোলা)

এরপর হুমায়ূন আহমেদ শাওনকে বিয়ে করার আগে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। তারপর সন্তানদের নিয়েই জীবন কাটছিল গুলতেকিনের। কখনো আমেরিকা, কখনো ঢাকায়। নিয়মিত কবিতাও লিখছিলেন। এরপর গত ৭/৮ বছর ধরে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব কবি আফতাব আহমেদের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। বন্ধুত্ব ধীরে ধীরে গভীর সখ্যতা থেকে প্রেমে গড়ায়। নিয়মিত সন্তানদের নিয়েও আফতাব আহমেদের সঙ্গে তার সুন্দর সময় কাটতে থাকে। এরপর একসময় নিজের অজান্তে তাকে ভালোবেসে ফেলেন গুলতেকিন।

এদিকে ২৫ অক্টোবর গুলতেকিন তার ফেসবুক পেজে যৌথ ঘোষণা শিরোনামে ‘এবার বাতাস উঠুক তুফান ছুটুক’ স্ট্যাটাস দেন। এতে তার প্রিয়জনরা তাকে অভিনন্দিত করেন এবং তার ভালোবাসাময় জীবনের শুভ কামনা করে অসংখ্য মন্তব্য করেন।

ফাইল

এরপর ৫ নভেম্বর আফতাব আহমেদ তার ফেসবুকে ইংরেজিতে একটি স্ট্যাটাস দেন। যার অর্থ ছিল এমন, ‘তিনি আমাকে তার সামনে বসালেন এবং আমার হাতে হাত রেখে বললেন’, ‘প্রত্যেকেরই মৃত্যুর স্বাদ পেতে হবে। কিন্তু আমি তোমাকে ছেড়ে যেতে চাই না। আমি নিঃশ্বাস নিতে চাই। তবে নিশ্চিত নই ভবিষ্যৎ কোন নিয়তিতে গাঁথা।’

আফতাব আহমেদ জবাবে বললেন, আমি চেষ্টা করব তোমাকে বাঁচাতে কিন্তু তোমাকে বিয়ে করা ছাড়া এটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’ এ সময় একটু বিরতি নিয়ে গুলতেকিন বললেন, তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে? এবং আমি অনুমান করতে পারি, আমরা দুজনেই কোনো কারণ ছাড়া এক সঙ্গে হতে পারব না।

ফাইল

প্রসঙ্গত, ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের তরুণ শিক্ষক হুমায়ূন আহমেদকে কিশোরী গুলতেকিন প্রেমে পড়ে বিয়ে করেছিলেন। তাদের বিচ্ছেদ হয় ২০০৩ সালে। তাদের ঘরে এক পুত্রসহ তিন কন্যা সন্তান রয়েছেন। ২০১২ সালে হুমায়ূন আহমেদ তুমুল জনপ্রিয়তা নিয়ে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে ইন্তেকাল করেন।

এর আগে, ২০০৫ সালে হুমায়ূন আহমেদ শাওনকে বিয়ে করলেও আর বিয়ের পিঁড়িতে বসেননি স্ত্রী গুলতেকিন আহমেদ। তার বয়স এখন ৫৬ বছর। এখন তিনি নিয়মিত কবিতা লেখায় মনোযোগী।

 

টাইমস/জেকে

Share this news on: