অনিয়মিত অভিবাসীদের স্বেচ্ছায় নিজ দেশে ফিরে যেতে উৎসাহ যোগাতে আর্থিক সহায়তার পরিমাণ বাড়িয়েছে ইউরোপের দেশ ফ্রান্স। কোনো অভিবাসী স্বেচ্ছায় নিজ দেশে ফিরে গেলে তাকে সর্বোচ্চ সাড়ে তিন হাজার ইউরো সহায়তা দেবে দেশটি।
দেশটির সরকার অভিবাসীদের স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনে সহায়তার পরিমাণ বাড়িয়ে একটি সরকারি গেজেট প্রকাশ করেছে। ইংলিশ চ্যানেলে অভিবাসীবাহী নৌকা থামাতে ফ্রান্সের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে যুক্তরাজ্য। তারই ধারাবাহিকতায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফরাসি প্রশাসন।
গেজেটে বলা হয়েছে, অনিয়মিত অভিবাসীদের মধ্যে যাদের ফ্রান্স ছাড়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে বা ওকিউটিএফ নোটিশ জারি করা হয়েছে, তাদের জন্য এককালীন সহায়তার সর্বোচ্চ সীমা এক হাজার ২০০ ইউরো থেকে বাড়িয়ে দুই হাজার ২০০ ইউরো করা হয়েছে।
এছাড়া যেসব দেশের নাগরিকরা অনিয়মিত উপায়ে সমুদ্রপথে যুক্তরাজ্যে পৌঁছানো অভিবাসীদের মধ্যে শীর্ষে আছেন; তারাও নিজ দেশ ফিরে গেলে ফ্রান্সের কাছ থেকে দুই হাজার ২০০ ইউরো করে পাবেন।
ফরাসি ইমিগ্রেশন এবং ইন্টিগ্রেশন দপ্তর (অফি) সাধারণত এই অর্থ প্রদান করে থাকে। পাশাপাশি বিমান টিকেটও পেয়ে থাকেন স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা। বিশেষ ক্ষেত্রে আগের আড়াই হাজার ইউরোর সীমা বাড়িয়ে, এখন তা সাড়ে তিন হাজার ইউরো করা হয়েছে।
এই গ্রীষ্মে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে সই হওয়া ‘ওয়ান ইন ওয়ান আউট’ চুক্তির আওতায় যাদের যুক্তরাজ্য থেকে ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো হয়েছে, সেসব অভিবাসীরাও এই সুবিধা নিতে পারবেন।
• স্বেচ্ছায় ফিরেছেন অন্তত সাত হাজার অভিবাসী
অফি (ফ্রেঞ্চ ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ইন্টিগ্রেশন অফিস) ২০২৪ সালে মোট ছয় হাজার ৯০৮ জন অভিবাসীকে স্বেচ্ছা প্রত্যাবর্তনে সহায়তা দিয়েছে। যা ২০২৩ সালের তুলনায় দুই দশমিক ৩৬ শতাংশ বেশি। এই অভিবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিলেন জর্জিয়া ও আলবেনিয়ার নাগরিক (অন্তত এক হাজার ৮০০ জন) এবং আলজেরিয়া, মরক্কো ও তিউনিশিয়া মিলে ছিলেন আরও অন্তত ১ হাজার জন।
২০২৪ সালে মোট ২৩টি দেশ ফ্রান্সের স্বেচ্ছা প্রত্যাবর্তন (এআরভি) উদ্যোগের আওতায় ছিল। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, আর্থিক সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে ওকিউটিএফ নোটিশ কবে জারি হয়েছে বা কতদিন পার হয়েছে, সেসব আর বিবেচনায় নেওয়া হবে না। যদিও আগে এই সহায়তা ছিল সময়ভিত্তিক অর্থাৎ নোটিশের তারিখ থেকে অফিতে আবেদন জমা দেওয়ার সময়ের ব্যবধান অনুযায়ী পরিমাণ কমে যেত।
‘ওয়ান ইন ওয়ান আউট’ চুক্তি অনুযায়ী, ছোট নৌকায় ইংল্যান্ডে পৌঁছানো অভিবাসীদের ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো হবে এবং বিনিময়ে ফ্রান্সে অবস্থানরত নির্দিষ্ট সংখ্যক অভিবাসীকে যুক্তরাজ্য গ্রহণ করবে। তবে বিভিন্ন এনজিও ও যুক্তরাজ্যের বিরোধীদলগুলোর সমালোচনার মুখে এই উদ্যোগ এখনও তেমন কার্যকর হয়নি। কেউ কেউ এই চুক্তির ভবিষ্যত নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
জীবনের ঝুঁকি থাকার পরেও চলতি বছর এখন পর্যন্ত চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন ৩৯ হাজারের বেশি মানুষ। এই সংখ্যা ২০২৪ সালের পুরো বছরের মোট সংখ্যাকেও ইতোমধ্যে ছাড়িয়ে গেছে। ইনফোমাইগ্রেন্টস।
টিজে/টিকে