পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বেনিনে একটি সামরিক অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার পর সেটি ঠেকিয়ে দিয়েছে সরকারের অনুগত সৈন্যরা। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে জানান প্রেসিডেন্ট প্যাট্টিস টালন।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, রোববার ৭ ডিসেম্বর সকালে একদল সৈন্য রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন দখল করে সংবিধান স্থগিতের ঘোষণা দেয়।
এ ঘটনার পর প্যাট্টিস টালন বলেন, “আমি আমাদের সেনাবাহিনী ও এর নেতৃত্বের প্রশংসা করতে চাই, যারা দায়িত্ববোধ ও জাতির প্রতি অনুগত থেকেছেন।”
তিনি বলেন, সৈন্যদের একটি দল ক্ষমতা গ্রহণের ঘোষণা দেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তারা ওই বিদ্রোহ নস্যাৎ করে দিয়েছে।
পরে দুপুরের দিকে বেনিনের সবচেয়ে বড় শহর কোটোনুতে বড় ধরনের বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে বিমান হামলার কারণে এটি হয়েছে। এই ঘটনায় কোনো হতাহত হয়েছে কি-না তা এখনো জানা যায়নি।
ফ্লাইট ট্র্যাকিং ডেটা অনুযায়ী, বিস্ফোরণের আগে প্রতিবেশী নাইজেরিয়া থেকে তিনটি বিমান বেনিনের আকাশসীমায় প্রবেশ করে ও পরে আবার ফিরে যায়।
ক্যু বা অভ্যুত্থানের পরিকল্পনাকারীদের জাতীয় টেলিভিশন ও একটি সামরিক ক্যাম্প থেকে সরিয়ে দিতে সহায়তার জন্য তাদের যুদ্ধ বিমান বেনিনের আকাশসীমায় প্রবেশ করেছিলো বলে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্টের একজন মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন।
রোববার বেনিনে অভ্যুত্থান চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার আগেও পশ্চিম আফ্রিকায় একের পর অভ্যুত্থান হয়েছে। এর ফলে ওই অঞ্চলে নিরাপত্তা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
তবে প্রেসিডেন্ট টালনের বিরুদ্ধে তার সমালোচকদের দমনের অভিযোগ উঠেছে। বেনিনের পূর্ব দিকের বড় প্রতিবেশী হলো নাইজেরিয়া। তারা অভ্যুত্থান প্রচেষ্টাকে ‘গণতন্ত্রের ওপর সরাসরি আঘাত’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
বেনিনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, অনুগত সৈন্যরা বিদ্রোহীদের শেষ ঘাঁটিও উচ্ছেদ করেছেন। এই বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তি হবেই। আমি আবারো আশ্বস্ত করতে চাই, পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছে এবং আপনাদের শান্তিপূর্ণভাবে কাজে ফিরে যাবার আহবান জানাচ্ছি”।
সরকারের মুখপাত্র উইলফ্রাইড লিয়ান্দ্রে হাউংবেডজি জানিয়েছেন, অভ্যুত্থান প্রচেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১২ জন সরকারি টিভি স্টেশন ভাঙচুর করেছেন। এর মধ্যে আগেই বরখাস্ত হওয়া একজন সৈন্যও রয়েছেন।
এদিকে প্রেসিডেন্ট এই ঘটনার ভুক্তভোগী এবং যারা এখনো আটক রয়েছেন তাদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
ফরাসি ও রুশ দূতাবাস তাদের নাগরিকদের ঘরেই থাকার অনুরোধ করেছেন। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস প্রেসিডেন্সিয়াল কম্পাউন্ডের আশেপাশে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
উত্তর বেনিনে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অব্যাহত অবনতি নিয়ে লে. কর্নেল প্যাসকেল টিগরির নেতৃত্বে বিদ্রোহীরা প্রেসিডেন্টের সমালোচনা করেছেন। তারা স্বাস্থ্যসেবায় দুর্নীতি করা, কিডনি ডায়ালাইসিসে সরকারি বরাদ্দ বাতিল ও কর বৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক কার্যক্রম সংক্ষিপ্ত করার তীব্র সমালোচনা করেছেন।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সমর্থকরা টালনের প্রশংসা করেন। তবে বিরোধীদের মত দমনের জন্য তিনি সমালোচিত।
টিকে/