জুলাই গণহত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় একটি অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আটটি গ্রাউন্ডে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করেছে প্রসিকিউশন।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে এ আপিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। ট্রাইব্যুনালের ঘোষিত যেকোনো রায়ের বিরুদ্ধে ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হয়। তবে এর আগেই আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।
আপিলে আনা আটটি গ্রাউন্ড হলো-
>> আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন-১৯৭৩ এ যে শাস্তির কথা বলা আছে, তার প্রথমেই ডেথ পেনাল্টি (মৃত্যুদণ্ড) দিয়ে বর্ণনা রয়েছে।
এরপর গ্রাভিটি অব দ্য অফেন্সের (অপরাধের ভয়াবহতা) কথা বলা আছে। যেহেতু আইনে একটি শাস্তি প্রেসক্রাইভ (বিধান) উল্লেখ রয়েছে, এজন্য সব চার্জেই ডেথ পেনাল্টি পাওয়ার যোগ্য।
>> জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তা ভায়োলেশন অব সিরিয়াস হিউম্যান রাইটস (গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন)। সেখানে হেনিয়াস অফেন্স (নিষ্ঠুরতম অপরাধ) হয়েছে, যার শাস্তি একমাত্র মৃত্যুদণ্ডই হওয়া উচিত।
>> নিরস্র-নিরীহ মানুষের ওপর স্কেল অব অ্যাটাক হয়েছে, তার ব্যাপকতা ছিল মারাত্মক। এর কারণে মৃত্যুদণ্ড ছাড়া অন্য কোনো শাস্তি দেওয়া আইনত সঠিক হয়নি।
>> গ্রাভিটি অব দ্য অফেন্স তথা আইন অনুযায়ী এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড একমাত্র শাস্তি হওয়া উচিত।
>> শুধুমাত্র আসামির অধিকার দেখলেই হবে না। এখানে রাইটস অব দি ভিকটিমস এবং সোসাইটির রেজনেবল এক্সপেক্টেশনটাও দেখতে হবে।একটা সমাজ এ ধরনের অপরাধের কি ধরনের শাস্তি প্রত্যাশা করে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ প্রবণতা বন্ধ করার জন্য আদালতে কি ধরনের শাস্তিপ্রাপ্ত হলে বা প্রদত্ত হলে সমাজ এ ধরনের অপরাধ থেকে মুক্ত হবে। সেই সোশ্যাল এক্সপেক্টেশনটাও আদালতের দেখা উচিত ছিল।অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ড দেওয়া উচিত ছিল।
>> আসামিরা জেনেছেন যে তাদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে মামলা চলছে। সাজা হচ্ছে। আপিলের মেয়াদও ৩০ দিন। এসব জেনেই তারা নিজেদের পলাতক রেখেছেন। পলাতক থেকে বিভিন্ন ট্রায়ালে বাধা দেওয়ার জন্য বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছেন। এ ধরনের আচরণের ক্ষেত্রে তাদের শাস্তি কমানোর কোনো সুযোগ নেই।
>> আসামিদের সরাসরি আদেশ বা নির্দেশে যে ধরনের হত্যাযজ্ঞ হয়েছে, তা পৈশাচিক। তাদের নির্দেশে সারাদেশে ১৪০০ এর অধিক মানুষ শহীদ ও ২৫ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন।
>> চার্জ-১ এ আবু সাঈদ, যিনি জুলাই অভ্যুত্থানের পাইওনিয়র (অগ্রদূত) ছিলেন। আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ডেও তারা জড়িত। অতএব চার্জ-১ এ তাদের জন্য মৃত্যুদণ্ডই ছিল ন্যায়বিচার।
>> প্রসিকিউটর তামিম বলেন, গত ১৭ নভেম্বর পুনর্গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম রায় ঘোষণা হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাজা পেয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
এর মধ্যে একটি অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও আরেকটিতে মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। তবে আমৃত্যু দণ্ড বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ডে পরিণত করতে আমরা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আজ আপিল করেছি। আপিলের ৬০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির বিধান রয়েছে। আশা করছি এর মধ্যেই এই আপিলটি নিষ্পত্তি হবে।
এমআর/টিকে