কৃত্রিম মিষ্টি বা ‘সুগার ফ্রি’ খাদ্য-পানীয় কতটা নিরাপদ?

ডায়াবেটিস কিংবা ওজন বৃদ্ধিসহ নানা কারণে আমাদের অনেকের চিনি এড়িয়ে চলতে হয়। বাজারে চিনির বিকল্প হিসেবে বেশ কিছু কৃত্রিম মিষ্টকারক রয়েছে, তাছাড়াও আছে নানান ‘সুগার ফ্রি পণ্য’।

বলা হয়ে থাকে, শিশু থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক লোকদের মধ্যে ওজন বৃদ্ধির হার বেড়ে যাওয়ার কারণে উনিশ শতকে কৃত্রিম মিষ্টকারক উদ্ভব ঘটেছিল।

এই কৃত্রিম মিষ্টকারক আমাদের চিনির আকাঙ্ক্ষা মেটাতে বা চিনির বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এই মিষ্টকারক কতটা স্বাস্থ্যকর তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে।

তবে অতিরিক্ত চিনি যে বিভিন্ন স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) বলছে, যারা দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছেন তাদের প্রতিদিন চিনি গ্রহণের পরিমাণ মোট গৃহীত ক্যালরির ১০% এর কম হওয়া উচিৎ।

চিনির নানা স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণে বাজারে দিন দিন ‘সুগার ফ্রি’ লো ক্যালোরির মিষ্টির জনপ্রিয়তা বাড়লেও এ নিয়ে অনেকের মনে নানা নেতিবাচক ধারণা রয়ে গেছে।

বলা হয়ে থাকে কৃত্রিম মিষ্টি থেকে গ্লুকোজ অসহিষ্ণুতা, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি এবং ওজন বাড়ানোর মতো নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এ কথাগুলি বহুল প্রচলিত হলেও বিজ্ঞান এখন পর্যন্ত এসব দাবি সমর্থন করে না।

প্রকৃতপক্ষে বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে- অনুমোদিত স্বল্প ক্যালরিযুক্ত মিষ্টির সঙ্গে ক্যান্সারের সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়নি। মার্কিন এফডিএ মানুষের ব্যবহারের জন্য অ্যাস্পার্টাম, সুক্রোলস এবং আরও ছয়টি স্বল্প-ক্যালোরি মিষ্টি অনুমোদন করেছে। এই সুইটেনারগুলি সাধারণভাবে নিরাপদ হিসেবে স্বীকৃত এবং এদেরকে জিআরএএস বিভাগে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে।

ম্যাক্স হেলথ কেয়ারের ইন্টারনাল মেডিসিনের পরিচালক ডা. মনিকা মহাজনের মতে, ‌ডায়াবেটিস রোগী বা যারা ওজন হ্রাস করতে চাইছেন তাদের জন্যে চিনির বিকল্পগুলি আসলে উপকারী। অ্যাসপার্টাম, সুক্রোলোস এবং স্টেভিয়ার মতো চিনির বিকল্প তৈরির মূল উপাদান সমূহ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিসিট্রেশন দ্বারা স্বীকৃত।

বিবর্তনের লম্বা পথ পরিভ্রমণ করে এসব মিষ্টি বিভিন্ন খাদ্যমান নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন পেয়েছে। চিনির বিকল্পগুলি মানুষের ব্যবহারের জন্য নিরাপদ এবং ইতিবাচক ফলাফল দিতে পারে। কারণ প্রতিটি কম ক্যালোরির মিষ্টিকে আইনি অনুমোদনের এবং প্রোটোকলের জন্য নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। ফলে কঠোরভাবে মান নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।

এ বিষয়ে ডক্টর রেবেকা লেপেজ গারকা বলেন, ‘আমরা জানি যে লো-ক্যালোরি সুইটেনারগুলি নিরাপদ, কারণ আইনি অনুমোদনের জন্য বিস্তৃত মূল্যায়ন করা হয়েছে।”

যারা ওজন হ্রাস করতে চাইছেন বা ডায়াবেটিস রোগী তারা নির্দ্বিধায় এসব চিনির বিকল্প গ্রহণ করতে পারেন। তবে, সতর্কতা হিসেবে আমাদের মনে রাখতে হবে- যে কোনো দ্রব্যের অতিরিক্ত ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। তথ্যসূত্র: এনডিটিভি

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on: