করোনা: ঝিনাইদহে বিপাকে খেটে খাওয়া মানুষ

ঝিনাইদহ জেলা শহরের উপকণ্ঠে আব্দুল খালেকের বাড়ি। বাবুর্চির কাজ করেন তিনি। গেলো ১৫ দিন হলো কাজ নেই তার। ঘরে এক মুঠো খাবার নেই। পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে কাটছে তার দিন। জেলা শহরের চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডের চা বিক্রেতা সুমন। ভালভাবেই সংসার চলছিল তার। এখন দোকান বন্ধ। ঘরে বাজার নেই। নুরজাহানের বাড়ি কোরাপাড়া গ্রামে। দোকানে দোকানে পানি দেয় সে। এখন কাজ নেই। অভাব ঘিরে ধরেছে তাকে। পাগলাকানাই সড়কের আব্দুল খালেক চায়ের দোকানদার। দোকান বন্ধ তার। স্ত্রী অসুস্থ। খাবার জোগাড় করার ক্ষমতা নেই তার। রিকশাচালক হাসমতের একই হাল। ভেজা চোখে নিজেদের কথাগুলো বলছিলেন তারা।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সারাদেশে চলছে অঘোষিত লকডাউন। আর এতে বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর ও কেটে খাওয়া মানুষ। কাজ না পেয়ে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। সারাদেশের মতই একই অবস্থা ঝিনাইদহ জেলাতেও।

জেলার বিভিন্ন উপজেলা শহর সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, দিন-রাত মাইক যোগে ঘরে থাকার জন্য নির্দেশনা প্রচার করা হচ্ছে। ঝিনাইদহের দোকানপাট বন্ধ। ফাঁকা রাস্তা। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না। জেলা শহরের কয়েকটি ঔষধের দোকান খোলা রাখা হয়েছে। প্রধান প্রধান সড়কে সেনাবাহিনীর টহল অব্যাহত রয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে শত শত ছিন্নমূল মানুষ খাবারের অভাবে গুমরে ঘুমরে কাঁদছেন। বেশি বিপাকে পড়েছেন দিনমুজুর ও খেটে খাওয়া মানুষগুলো। একটু খাবারের সন্ধানে প্রশাসনসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সামনে ভিড় করছেন তারা। কেউ কেউ লোক লজ্জার ভয়ে হাত পাততে পারছেন না।

পাড়া মহল্লায় কর্মহীন অভাবগ্রস্ত মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ।

তিনি জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত চাল মজুদ রয়েছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন থেকে হতদরিদ্র মানুষের মাঝে চাল, ডাল, আলু, তেল, সাবান বিতরণ শুরু করা হয়েছে। প্যাকেট করে সেই চালের সাথে অন্যান্য সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্য মতে যা দেওয়া হচ্ছে তা অপ্রতুল।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ঝিনাইদহ জেলায় ১৮০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৭ লাখ টাকা বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় ১০ মেট্রিক টন চাল এবং ১ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য উপজেলায় প্রাথমিকভাবে ৫ মেট্রিকটন চাল এবং নগদ এক লাখ করে টাকা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে জেলার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সিভিল সার্জন ডাক্তার সেলিনা বেগম জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে কাউকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়নি। এখন পর্যন্ত জেলার ৬ উপজেলায় ৯৫৩ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩৩৬ জন বিদেশ ফেরত ব্যক্তি রয়েছেন। এছাড়া ইতোমধ্যে ৫১৩ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইন ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।

সোমবার দুপুরে শৈলকুপা উপজেলা প্রশাসন থেকে ৩০০ হতদরিদ্রদের মাঝে ১০ কেজি চাল, দুই কেজি ডালসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিতরণ করা হয়। এছাড়াও ঢাকার বিশ্বাস বিল্ডার্স নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান উপজেলা প্রশাসনের কাছে তিন শতাধিক প্যাকেট খাদ্য সামগ্রী হস্তান্তর করেছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটি পরিচালক নুর-এ আলম, হেলাল উদ্দিনসহ কর্মকর্তাগণ। অন্যদিকে ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল হাই নিজ নির্বাচনী এলাকায় (শৈলকুপা উপজেলা) হতদরিদ্রদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন।

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on:

সর্বশেষ