আবারও ট্রাফিক উন্নয়নে রাস্তায় নেমেছে পুলিশ

নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর ট্রাফিক উন্নয়নের ঘোষণা দিয়ে রাস্তায় নেমেছিল পুলিশ। একের পর এক কর্মসূচি পালন করায় অনেকটা সফলতাও পায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। বিশেষ করে মোটরসাইকেল যাত্রীদের হেলম্যাট পরিধান সবার নজর কেড়েছিল। ওই সফলতাকে কাজি লাগিয়ে আবারও ট্রাফিক সপ্তাহ ঘোষণা করা হয়েছে।

এ ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার রাজধানীর গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে নতুন কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি। এ সময় তিনি যাত্রী ও চালকের মাঝে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণসহ বিভিন্ন গাড়ীতে সচেতনতামূলক স্টিকার লাগাতেও দেখা গেছে।

ঢাকা মহানগরীর ট্রাফিক শৃঙ্খলা উন্নয়নে ‘ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ-২০১৯’ নামের ওই কর্মসূচির উদ্বোধনকালে ডিএমপি কমিশনার মোঃ. আছাদুজ্জামান মিয়াসহ ডিএমপি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ‘ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ’ মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়ে চলবে ১৫ দিন। অর্থাৎ ১৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত।

ডিএমপি সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগরীর ট্রাফিক শৃঙ্খলা উন্নয়নে পুলিশের পাশাপাশি বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট, রোভার স্কাউট, বিএনসিসি ও বাংলাদেশ গার্ল গাইডের সদস্যরাও কাজ করবে।

এ ব্যাপারে ডিএমপি কমিশনার মোঃ. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, আগামী ১৫ দিন পালন করা হবে ‘ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ-২০১৯’। গত বছর ঢাকা মহানগর পুলিশ ৩ দফায় ট্রাফিক শৃঙ্খলা কার্যক্রম পালন করেছে। বিএনসিসি, রোভার স্কাউট, রেড ক্রিসেন্টসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে নিরলসভাবে কাজ করেছে। গৃহীত কার্যক্রমে সড়কে বেশ কিছু দিকে উন্নতি হয়েছে। তবে যানজট নিয়ে জনগণের প্রত্যাশা আশানুরূপ পূরণ হয়নি। আমরা ঢাকা মহানগরে ১৩০টি বাস স্টপেজ চিহ্নিত করেছি, এগুলো সিটি কর্পোরেশন বাস স্টপেজ হিসেবে তৈরি করছে। সেই সাথে ফুটওভার ব্রিজ ও ফুটপাত সংস্কারের কাজ চলছে। ঢাকা মহানগরীতে অনেক বড় বড় উন্নয়নমূলক কাজ চলছে ফলে রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এক্ষেত্রে যানজট সহনীয় পর্যায়ে রাখতে আমরা দিন-রাত কাজ করছি।

তিনি আরও বলেন, ‘ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ’ পালনে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি ট্রাফিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, ট্রাফিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সচেতনতা সৃষ্টি করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। এই সময়টায় ঢাকা মহানগরে ৫৭টি স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে ট্রাফিক বিভাগ তাদের কার্যক্রম চালাবে। এসময় রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা ট্রাফিক পুলিশকে সহযোগিতা করবে। প্রয়োজন হলে পরবর্তীতে রোভার স্কাউট ও বিএনসিসিকে সংযুক্ত করা হবে। সড়কে যানজটের জন্য কিছু সমস্যা সমাধান করা জরুরী। তার মধ্যে ভৌতকাঠামোর উন্নয়ন, ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা সংস্করণ, রাস্তা যত্রতত্র খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করা। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা আইন না মানা। দেশের সুনাগরিক হিসেবে ট্রাফিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে তা মেনে চলুন। ‘ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ’ শেষ নয়। আমরা বছর জুড়ে ট্রাফিক শৃঙ্খলা আনয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম চালাবো। চলমান কার্যক্রম শেষে আমরা ফুটপাত দখল মুক্ত করে চলাচলের উপযোগী করতে কাজ করব। ‘ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ’ সফল করতে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।

ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ উদ্বোধনকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, যানজট মুক্ত নগরী গড়তে আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ নিরলসভাবে কাজ করছে। সকলে ট্রাফিক শৃঙ্খলা মেনে চললে যানজট হ্রাস পাবে। আমাদের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে এখন মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী উভয়ই হেলমেট ব্যবহার করছে। যা আগে হত না। এটা আমাদের একটি সাফল্য। গতবছর সড়কে বাস চালকের দায়িত্বহীন ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ী চালানোর ফলে কোমলমতি দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। যা ছিল অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এই ঘটনার পরবর্তী সময়ে আমরা সড়কের বিশৃঙ্খলা দূর করতে এই জিরো পয়েন্টে বিশেষ ট্রাফিক সপ্তাহ উদ্বোধন করেছিলাম। আজও এখান থেকে ‘ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ’ উদ্বোধন করা হচ্ছে। সর্বক্ষেত্রে আপনারা ট্রাফিক আইন মেনে চলুন।

এদিকে, এমন কর্মসূচি ঘোষণা করার পর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক সচেতনতামূলক লিফলেট, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন, গাইড বই বিতরণ করা হয়েছে।

পুলিশের এমন কর্যক্রমকে সাধুবাদ জানিয়েছেন রাজধানীবাসীও। আবুল হোসেন নামের এক পথচারী বাংলাদেশ টাইমসকে বলেন, ‘পুলিশের এই কর্মসূচিগুলো সাধারণ মানুষ অনেক ভালোভাবে গ্রহণ করে। কর্মসূচিগুলো অব্যাহত থাকলে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

 

টাইমস/ কেআরএস/এইচইউ

Share this news on: