ঝিনাইদহের তিন পৌরসভায় শুরু হয়নি খোলা বাজারে চাল বিক্রি

সাত বছর আগে স্বামী মারা গেছে আসমা বেগমের। একমাত্র মেয়ে স্কুলে পড়ে। তরকারি বিক্রি করে সংসার চলছিল তার। মোটরগাড়িতে কাজ করার সময় একটি হাত বিকল হয়ে গেছে পলাশে, বস্তিতে তার বসবাস। সুমির মা বাসাবাড়িতে কাজ করে সংসার চলছিল তার। মোটরগাড়ি পেশা ছেড়ে চা বিক্রি করে সংসার নির্বাহ করে আসছিল সুমন। 

এদের সবাই ঝিনাইদহের বাসিন্দা। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে কার্যত অচল দেশ। এমন অবস্থা তাদের সবার আয়ের পথ বন্ধ। পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করছেন তারা। কেউ কেউ সরকারি বেসরকারি ত্রাণ পাওয়ার আশায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এক শ্রেণীর মানুষ মুখ ফুটে অভাবের কথা বলতেও পারছেনা। এনজিওর ঋণের বোঝা নিয়ে অসংখ্য মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। অনেকেই পেশা ছাড়ছে।

এমন পরিস্থিতিতে খোলাবাজারে সরকারি চাল বিক্রি করা হলে কিছুটা হলেও শান্তনা ছিল তাদের। কিন্তু ঝিনাইদহের ৬ পৌরসভার মধ্যে ৩টিতে খোলা বাজারে (বিশেষ ওএমএস) ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি শুরু হয়েছে। বাকি তিন পৌরসভা হরিণাকুন্ডু, শৈলকুপা এবং মহেশপুরে তালিকা তৈরী নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার কারণে চাল বিক্রি শুরু করা যায়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তারা।

শৈলকুপা উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা হাসান মিয়া জানান, পৌরসভা থেকে সময়মত তালিকা দেওয়া হয়নি। কয়েক দিন আগে ২৪০০ জনের তালিকা পাওয়া গেছে। যাচাই বাছাই করে কার্ড লেখার কাজ চলছে।

মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) সুজন সরকার ও উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা আশাদুল হক জানান, মহেশপুর পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে মঙ্গলবার পর্যন্ত মাত্র ৬টির তালিকা পেয়েছেন তারা। পৌরসভার মেয়রের কাছ থেকে বাকি ওয়ার্ড গুলোর তালিকা পাওয়ার পরে চাল বিক্রি শুরু করা হবে বলে জানান তারা। মহেশপুর পৌরসভার এক হাজার আটশত জনকে কার্ড দেওয়া হবে।

হরিণাকুন্ডু উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দা নাফিস সুলতানা বলেন, পৌরসভার পক্ষ থেকে পাঠানো এক হাজার আটশত জনের নামের তালিকা যাচাই বাছাই করা হচ্ছে।

হরিণাকুন্ডু উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হুসাইন বলেন, দুই একদিনের মধ্যে চাল বিক্রি শুরু করা হবে।

অভিযোগ রয়েছে, ঝিনাইদহ সদর পৌরসভা এলাকার ৫ নং ওয়ার্ডে প্রভাবশালী ও বিত্তবান শ্রেণীর নাম তালিকায় রয়েছে। অথচ নিম্ন আয়ের ও নিম্ন মধ্যবিত্ত অনেকের নামই তালিকায় নেই। এমনকি একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তি বিশেষ ওএমএস চালের কার্ড পেয়েছেন। সদর পৌরসভায় কর্মরত এক কর্মচারির নিকট আত্মীয়দের নাম ওএমএস তালিকায় রয়েছে। যারা সম্পদশালী এবং বিত্তবান।

ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর পৌরসভার মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু জানান, ইতিমধ্যে একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তিসহ বিত্তবানদের নাম বাদ দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে এবং কয়েকটি কার্ড জব্দ করা হয়েছে।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ সদর পৌরসভায় প্রথম বার ৪ হাজার ৮০০ জনের কাছে ওএমএস চাল বিক্রি করা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে জন প্রতি ২০ কেজি করে ৮ হাজার ৪’শ জনের কাছে বিশেষ ওএমএস চাল বিক্রি করা হবে। পর্যায়ক্রমে অধিক সংখ্যক মানুষের কাছে ওএমএস চাল বিক্রির মাধ্যমে চলমান পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীরা।

 

টাইমস/মিজানুর/এইচইউ

Share this news on: