অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীকে বিয়ে করলেন ৬৫ বছরের বৃদ্ধ!

কুমিল্লার লালমাই উপজেলার পেরুল এলাকার রিকশাচালক সামছুল (৬৫)। ওই এলাকার ৮ম শ্রেণি পড়ুয়া এক ছাত্রীর বাবা রাজধানীতে চাকরি করেন। সেই সুবাধে ওই ছাত্রীর পরিবারের গ্রাম্য অভিভাবক হিসেবে তাদের পরিবারের দেখভাল করতেন রিকশাচালক সামছুল। রিকশায় করে তিনি নিয়মিত মেয়েটিকে স্কুলে আনা-নেওয়া করতেন। প্রায়ই ওই বাড়িতে থাকতেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়রা প্রশ্ন তুললে প্রাপ্তবয়স্ক হলে মেয়েটির সঙ্গে নিজের ছেলে মনিরের বিয়ে দেওয়ার কথা এলাকায় প্রচার করেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে উঠেছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। অনেকে আবার তাদেরকে ‍“বাবা-মেয়ে” বলেও আখ্যায়িত করার চেষ্টা করেছেন।

এরই মধ্যে রোববার (১০ মে) ১৩ বছর বয়সী মেয়েটিকে নিয়ে উধাও হয়ে যান সামছুল হক। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মেয়েটির পরিবার ও এলাকাবাসীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ১১ মে স্থানীয় পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান লোক পাঠিয়ে তাদেরকে ইউপি কার্যালয়ে হাজির করেন।

এসময় জিজ্ঞাসাবাদে ওই বৃ্দ্ধ জানান, মেয়েটিকে তিনি বিয়ে করেছেন। ৮ম শ্রেণি পড়ুয়া ওই ছাত্রীকে প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে প্রমাণ করতে প্রাথমিক শিক্ষা সনদ, জন্মনিবন্ধন সনদ ও বিয়ের কাবিননামা উপস্থাপন করেন তিনি। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার সনদ ও জন্মনিবন্ধনে মেয়েটির জন্মতারিখ উল্লেখ রয়েছে ০২-০২-২০০২। মেয়েটি যখন ক্লাস ফাইভে পড়ত তখন থেকেই তাদের মধ্যে প্রেম ছিল বলেও দাবি করেন সামছুল।

তবে ওই ছাত্রীর স্বজনদের অভিযোগ, পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকার সুবাদে ২০০৮ সালে নিবন্ধিত জন্মসনদে সামছুল হক মেয়েটির বয়স বাড়িয়ে নিবন্ধন করেছিলেন তিনি।

তবে অষ্টম শ্রেণির ওই ছাত্রী নিজেকে প্রাপ্তবয়স্ক (১৮) দাবি করে স্বেচ্ছায়ই সামছুলকে বিয়ে করেছে বলেও জানিয়েছে।

বিয়ের কাবিননামা সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ মে কুমিল্লা সিটি কর্পোশেনের ৭নং ওয়ার্ড এর নিকাহ রেজিস্ট্রার মুজিবুর রহমান সরকারের কার্যালয়ে ৫ লাখ টাকা দেনমোহরে (বই নম্বর ৫৪, পৃষ্ঠা ২৮, ক্রমিক নম্বর ৪৪০) তাদের বিয়ে রেজিস্ট্রি হয়। কাবিনামায় সামছুল হকের জন্মতারিখ ০৩-০১-১৯৫৫।

এ বিষয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান ডালিম বলেন, জন্মসনদে বয়স বাড়িয়ে ও প্রলোভন দেখিয়ে ৬৫ বছরের এক বৃদ্ধ ১৩ বছরের কিশোরীকে বিয়ে করেছেন। এটি শিশু নির্যাতনের অপরাধ। মেয়েটির জীবন রক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের পদক্ষেপ কামনা করছি।

পেরুল দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান এজিএম শফিকুর রহমান বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে আমি উভয়কে আমার অফিসে ডাকি। বর ৬৫ বছরের বৃদ্ধ, কনের ১৮ বছর হয়নি। তবে তাদের উপস্থাপিত জন্মনিবন্ধন ও শিক্ষা সনদ অনুযায়ী কনে প্রাপ্তবয়স্ক। মেয়েটিকে বারবার অনুরোধ করলেও সে পরিবারের কাছে ফিরে যেতে রাজি হয়নি।

লালমাই থানার ওসি মোহাম্মদ আইয়ুব বলেন, “আমরা ফেসবুকের মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। বাল্য বিয়ে দণ্ডনীয় অপরাধ। স্থানীয়রা আগে জানালে ব্যবস্থা নেওয়া যেতো।

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on: