‘খয়রাতি আনন্দবাজারের’ ধৃষ্টতা, বাংলাদেশে ক্ষোভ!

করোনা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে বাণিজ্যিক সুবিধা দিতে যাচ্ছে চীন। ভারত ও চীনের মধ্যে সীমান্ত সংঘাতের এই আলোচিত সময়ে বাংলাদেশকে দেয়া চীনা সুবিধা মোটেই সহ্য হচ্ছে না ভারতের। ভারত সরকার এ নিয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও দেশটির গণমাধ্যমে এনিয়ে ভালো মতোই হিংসা ছড়ানো হচ্ছে। 

সম্প্রতি বাংলাদেশের রপ্তানী পণ্যে চীনের শুল্কমুক্ত সুবিধাকে ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার তাদের প্রতিবেদনে ‘খয়রাতি’ বলে উল্লেখ করেছে। যা সম্পূর্ণ শিষ্ঠাচার ও সংবাদমাধ্যমের নীতি বহির্ভূত। আনন্দবাজার পত্রিকাসহ ভারতের বেশকিছু বিতর্কিত গণমাধ্যমে বিষয়টিকে আরও কুৎসিত ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। কারণ বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য সম্পর্ককে কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছেনা কট্টর হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকারের নেতৃত্বাধীন ভারত। সেই সঙ্গে আনন্দবাজারের এই অপকর্মের মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতীয়দের প্রকৃত গোপন রুপ যে প্রকাশ হয়ে গেছে তা নিশ্চিত করে বলা যেতেই পারে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, এটা কোনো ভাবেই ওয়েলকাম করার মত নয়। আমার মনে হয় চীনের এগিয়ে আসার কারণে তারা (ভারত) খুব আপসেট। এছাড়া এটা ভারতীয় একটা সংবাদ মাধ্যমের বক্তব্য, ভারত সরকারের নয়। কাজেই আনন্দবাজারের নিউজ আমলে নেয়া ও তার প্রতিবাদ করার মত জায়গায় বাংলাদেশ এখন আর নেই।

এদিকে আনন্দবাজারের বিতর্কিত মন্তব্যের পর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে তীব্র প্রতিবাদ ও ভারত বিরোধী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশীরা।

সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল তার ফেসবুকে প্রতিবাদ জানিয়ে লিখেছেন, আনন্দবাজার পত্রিকার ধৃষ্টতা, পত্রিকাটির ২০ জুনের অনলাইন সংস্করণে ‘লাদাখের পর ঢাকাকে পাশে টানছে বেজিং’ শিরোনামের খবরের প্রথম লাইন: ‘বাণিজ্যিক লগ্নি আর খয়রাতির টাকা ছড়িয়ে বাংলাদেশকে পাশে পাওয়ার চেষ্টা নতুন নয় চীনের’। বাংলাদেশের জন্য আনন্দবাজারের অপমানকর এই বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। ঢাকা থেকে যে নিজস্ব সংবাদদাতা এই খবর আনন্দবাজারে পাঠিয়েছেন তার সম্পর্কেও ব্যবস্থা নিতে হবে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ ও সম্মানজনক। কিন্তু আনন্দবাজার পত্রিকার এই আচরণ বিপরীতমুখী। গ্রহণযোগ্য নয়।

এছাড়া গাজী টেলিভিশন (জিটিভি) এডিটর-ইন চিফ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা লিখেছেন, কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার সাংবাদিকতাকে খোদ কলকাতাতেই ‘বাজারি সাংবাদিকতা’ বলা হয়। এবার কি তারা খয়রাতি সাংবাদিকতা শুরু করলো? চীন নাকি খয়রাতি সাহায্য ছড়াচ্ছে বাংলাদেশের জন্য!!! সাংবাদিকতার সামান্য নীতি-নৈতিকতা মানলে একটা রিপোর্টে এমন মন্তব্য আসতে পারে না। রিপোর্টটি আবার গেছে ঢাকা থেকে, যিনি নিশ্চয়ই বাংলাদেশের নাগরিক!

তিনি আরও লিখেছেন, কিছু লোকের আবার ভারত নিয়ে চুলকানি শুরু হবে। এখানে ভারতের দোষ কোথায়? এটা একটা পত্রিকার ভাষ্য। ভারত অবশ্যই বাংলাদেশের আন্তরিক বন্ধু, যা প্রমাণিত। আর এই বন্ধুত্ব এখন প্রতিষ্ঠিত।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাজী আনিস তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, আনন্দবাজার পত্রিকা আমি পড়ি না। সিরিয়াসলি। অনেক বিজ্ঞ আর শিক্ষকরা সুসাংবাদিকতার উদাহরণ হিসেবে কথায় কথায় আনন্দবাজারকে টেনে আনেন। কিন্তু আমি সেই বিজ্ঞদের মতো হতে পারিনি। আমি দেখি ‘সাংবাদিকতা’ হয়েছে কিনা। সেটা অজোপাড়ার কোনও অঞ্চলের গণমাধ্যম হলেও। জনপ্রিয়তাই সবকিছু নয়। ছন্দে বন্দে মন্দে দ্বন্দ্বে লেখাই সাংবাদিকতার মাপকাঠি নয়।

 

টাইমস/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ