জমজমাট সাদুল্যাপুরের আমনের চারা বিক্রির হাট, উচ্চ মূল্যে দিশেহারা কৃষক

বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর জমে উঠেছে গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার আমন ধানের চারা বিক্রির হাট। কিন্তু আমন চারার উচ্চ মূল্যে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। বাজার নিয়ন্ত্রণে কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বিক্রেতারা ইচ্ছেমত নিচ্ছেন আমন চারার মূল্য। পাশাপাশি ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের নিকট থেকেই টোল আদায় করা হচ্ছে হাটে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত আশপাশের কয়েক উপজেলার কৃষক আমন ধানের চারা কিনতে সাদুল্যাপুর আসেন। তাই অতি মুনাফার আশায় বর্তমানে স্থানীয় অনেক কৃষকই তাদের পূর্বে রোপনকৃত আমন ধানের চারা বীজতলা থেকে তুলে এনে হাটে বিক্রি করছেন।

কৃষি বিভাগ বলছে, উচ্চ মূল্যে আমন ধানের চারা ক্রয় করে রোপন করলে তাতে খুব বেশি লাভবান হওয়া যাবেনা। তারা পরামর্শ দিচ্ছেন স্বল্প খরচে অন্য ফসল ফলানোর।

জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে দফায় দফায় দীর্ঘ মেয়াদী বন্যায় গাইবান্ধা জেলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে ফুলছড়ি, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জ এবং গাইবান্ধা সদর উপজেলায়। ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় প্রান্তিক কৃষকের সংখ্যা অনেক বেশি। বন্যার পানি নামতে শুরু করায়, কৃষকরা কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমন ধান রোপণের প্রতি বেশি ঝুঁকে পড়েছেন। তাই জেলার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা আমন ধানের চারা সংগ্রহের জন্য ছুটছেন বিভিন্ন হাটে-বাজারে।



এদিকে বন্যার পর থেকেই সাদুল্যাপুরে প্রতিদিন আমন ধানের চারা বিক্রির বিশাল হাট বসতে শুরু করেছে। সাদুল্যাপুর থানার প্রাচীর এবং হাইস্কুল মাঠ ঘেঁষে বসা বিশাল হাটে প্রতিদিন আমন ধানের চারা কিনতে আসেন শতশত কৃষক। বর্তমানে এই হাটটি জেলার মধ্যে ‘আমন ধানের চারা’ বিক্রির সবচেয়ে বড় হাট বলে দাবি করা হচ্ছে। আশপাশের অনেক জেলা-উপজেলা থেকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা এই হাটে আমন ধানের চারা ক্রয়ের জন্য আসেন। আর এই সুযোগে সাদুল্যাপুর হাটে বৃদ্ধি পেয়েছে আমান ধানের চারা বিক্রির মৌসুমি পাইকারদের আনাগোনা।

সাদুল্যাপুর হাটের ধানের চারা ক্রয়-বিক্রয়ের পাইকার জাহিদুল ইসলাম বলেন, অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে এবার সর্বাধিক মূল্যে ধানের চারা বিক্রি হচ্ছে। প্রতি পন (স্থানীয়ভাবে ২০ গণ্ডা বা ৮০ মোটা) ধানের চারা বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায়। বন্যার আগে এই ধানের চারাই বিক্রি হয়েছে মাত্র ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ক্রেতার সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। যার কারণে বর্তমান বাজারে হঠাৎ করেই বৃদ্ধি পেয়েছে আমন ধানের চারার বিক্রয় মূল্য।

সাদুল্যাপুর হাটে আমন ধানের চারা ক্রয় করতে আসা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক জাফরুল ইসলাম বলেন, এমনিতে উচ্চ মূল্যে কৃষকরা দুঃশ্চিন্তায়, তার উপর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের নিকট থেকেই টোল বাবদ টাকা নেওয়া হচ্ছে। কোন নিয়মনীতি না মেনেই ইচ্ছেমত নেওয়া হচ্ছে টোলের টাকা। হাট ইজারাদারের লোক এই টোলের টাকা নিচ্ছেন বলে তিনি জানান। তাই ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরাও টোলের টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

সাদুল্যাপুর হাটের সাব ইজারাদার (চারা বিক্রির) তাজুল ইসলাম জানান, ইতোপূর্বে এই হাটে এত বেশি পরিমাণে আমন ধানের চারা বিক্রি হয়নি। বন্যার কারণে ব্যাপক হারে বেড়েছে আমন ধানের চারা বিক্রি। দূরদূরান্ত থেকে কৃষকরা আমন ধানের চারা সংগ্রহের জন্য এই হাটে আসেন। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অবধি চলে আমন ধানের চারা বেচাকেনা।

অতিরিক্ত উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম বসুনিয়া জানান এবার সাদুল্যাপুর উপজেলায় আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১৫ হাজার ৫০৫ হেক্টর জমিতে। সেই অনুযায়ী ১১ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চারা বপন করা হয়েছে। বন্যায় ক্ষতি হলেও কৃষকদের সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কৃষকদের উৎসাহ দিয়ে সরকারী ব্যবস্থাপনায় ১০ একর জমিতে ‘কমিউনিটি বীজতলা’ বানানো হয়েছে। এর সঙ্গে ১২ বেড ভাসমান বীজতলা এবং ১৬ বিঘা জমিতে ট্রে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় এসব বীজতলার আমন চারা কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে।

আরেক অতিরিক্ত উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, এই উপজেলার কৃষকদের জন্য আমন ধানের চারার সংকট হবেনা। এখানে বন্যায় ক্ষতি হলেও কৃষকদের জন্য দ্রুত পুষিয়ে নেওয়া ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু অন্যান্য স্থান থেকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা এখানে আমান ধানের চারা ক্রয় করতে আসায় বাজারে বৃদ্ধি পেয়েছে আমন চারার মূল্য। এতে এক শ্রেণীর মুনাফা লোভী ব্যবসায়ীরা উচ্চ মূল্যে বিক্রি করছে আমন ধানের চারা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খাজানুর রহমান বলেন, কিছু ধান রয়েছে ভাদ্র মাসের শেষ সময় পর্যন্ত রোপণ করা যায়। তাই বন্যার পরপরই কৃষকদের উঁচু জমিতে সেই সব ধানের বীজতলা তৈরির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এতে কৃষকরা কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবে। আর হাট থেকে উচ্চ মূল্যে আমন ধানের চারা ক্রয় করে জমিতে রোপণ করলে তাতে কৃষকদের খুব একটা লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বরং বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকদের আগাম জাতের ভুট্টা, সরিষা এবং শাক-সবজি চাষের জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এতে কৃষকরা বেশ লাভবান হতে পারবে।

 

টাইমস/এসই/এইচইউ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিকে কনডেম সেলে রাখা যাবে না: হাইকোর্ট May 13, 2024
img
সন্ত্রাস করলে আবারও বিএনপিকেই পালাতে হবে : কাদের May 13, 2024
img
আজ থেকে শুরু এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জ, আবেদন করবেন যেভাবে May 13, 2024
img
লোকসভা নির্বাচনে চতুর্থ ধাপের ভোটগ্রহণ শুরু May 13, 2024
img
সৌদি আরব পৌঁছেছেন ৯ হাজার ৪৮৪ হজযাত্রী May 13, 2024
img
‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণ ৫ বছরেই হবে’ May 13, 2024
img
কবে, কোথায় আর কীভাবে শুরু হয়েছিল মা দিবস উদযাপন May 12, 2024
img
সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে সদস্য সংগ্রহ করছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী May 12, 2024
img
মা দিবসে মেয়েকে প্রকাশ্যে আনলেন পরীমণি May 12, 2024
img
বাংলাদেশকে পরাজয়ের স্বাদ দিয়ে হোয়াইটওয়াশ আটকাল জিম্বাবুয়ে May 12, 2024