শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় একটি চুরির সালিশে গ্রামের মাতব্বরদের সিদ্ধান্তে কবিরাজের পড়া রুটি খেয়ে মাইনুল হাসান নামে এক কলেজ ছাত্র মৃত্যুমুখে পড়েছেন। স্বজনদের অভিযোগ, ওই ছাত্রকে রুটির সঙ্গে বিষ মিশিয়ে খাওয়ানো হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে উপজেলার নশাসন ইউনিয়নের ঢালীকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। অসুস্থ অবস্থায় ওই কলেজ ছাত্রকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বুধবার সকালে স্যার সলিমুল্লাহ্ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
অসুস্থ মাইনুল হাসান ওই গ্রামের মাস্টার ফজলুর রহমানের ছেলে। সে কুমিল্লা সরকারি পলিটেকনিকের মেকানিকাল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।
ভুক্তভোগীর পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি নড়িয়া উপজেলার নশাসন ইউনিয়নের ঢালীকান্দি গ্রামের আবদুর রব ঢালী তার বাড়ির সামনের খালে মাছ ধরার জন্য চায়না জাল পাতেন। পরদিন সকালে জাল তুলতে গেলে দেখেন সেটি চুরি হয়ে গেছে। এঘটনায় গত ২২ আগস্ট সকালে আবদুর রব গ্রামের লোকজন নিয়ে সালিশ করেন।
সালিশে স্থানীয় মেম্বার লাল মিয়া মাদবর, সাবেক মেম্বার দলিল উদ্দিন ঢালী, মজিবুর রহমান ঢালী, উত্তর নশাসন সিনিয়র মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবুল খায়ের ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ প্রায় আড়াই শতাধিক লোক উপস্থিত ছিলেন। সালিশে চোরকে ভয় দেখানোর জন্য সিদ্ধান্ত হয় যে, তিন দিনের মধ্যে চুরি হওয়া জাল ফেরত না দিলে গ্রামের লোকদের ফকিরের (কবিরাজ) পড়া রুটি খাওয়ানো হবে।
পরে ২৫ আগস্ট সকাল ৮টার দিকে আবদুর রব ঢালী, তার ছেলে হাবিবুর রহমান ঢালী, মোশারফ ঢালী ও আরিফুর রহমান ঢালী মিলে গ্রামের মাতব্বরদের না জানিয়ে ফকিরের পড়া আটা দিয়ে রুটি বানিয়ে এলাকার ৬০ জনকে খাওয়ান।
পূর্ব শত্রুতার জেরে পরিকল্পনা করে আবদুর রব ও তার ছেলেরা কলেজছাত্র মাইনুল হাসানকেও জোর করে সেই রুটি খাওয়ান। রুটি খেয়ে মাইনুল অসুস্থ হয়ে পড়ে। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো পরামর্শ দেন।
কিন্তু ঢাকায় না নিয়ে আবদুর রব ঢালী ও তার ছেলেরা মাইনুলকে ফকিরের পরামর্শে সুস্থ করার জন্য বাড়িতে নিয়ে যান। ফকিরের কথায় মাইনুলের মাথায় ১০১ কলস পানি ঢালেন। এক পর্যায়ে মাইনুল অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় পরিবার। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে মিডফোর্ড হাসাপাতালে পাঠান। ঘটনার পর থেকে আবদুর রব ঢালী ও তার ছেলেরা পলাতক রয়েছেন।
মাইনুলের বোন আয়শা আক্তার বলেন, আবদুর রব ঢালী ও তার ছেলে হাবিবুর রহমান ঢালী, মোশারফ ঢালী ও আরিফুর রহমান ঢালী মিলে আমার ভাইকে পূর্ব পরিকল্পনা করে রুটির সঙ্গে বিষ মিশিয়ে হত্যা করতে চেয়েছে। আমি দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আবদুর রব ঢালী বলেন, আমার জাল চুরি হয়েছে। চুরির বিষয় কেউ স্বীকার করে না। তাই ফকিরের পড়া আটা এনে রুটি বানিয়ে গ্রামের লোকদের খাইয়েছি। রুটি খেয়ে মাইনুল অসুস্থ হলো কেন জানি না।
নড়িয়া থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) প্রবীণ কুমার চত্রবর্তী বলেন, জাল চুরির ঘটনায় আবদুর রব ঢালী গ্রামের লোকদের ফকিরের পড়া রুটি খাওয়ায়। সেই রুটি খেয়ে এক কলেজছাত্র অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তদন্ত অব্যাহত আছে। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
টাইমস/এসই/এসএন