মাস্ক না দিয়েই তুলে নিয়েছে প্রকল্পের সোয়া ৮ কোটি টাকা

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস’ (ইআরপিপি) প্রকল্পের আওতায় মাস্ক সরবরাহকারী সিম করপোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়েছে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। ওই প্রকল্পের অধীনে স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের জন্য সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহের কথা থাকলেও নিম্নমানের এন-৯৫ মাস্ক কিনেছিল সিম করপোরেশন। এমনকি এখনও কোনও মাস্ক সরবরাহ না করেই প্রতিষ্ঠানটি প্রকল্পের ৯০ শতাংশ অর্থ তুলে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুর থেকে রাজধানীর মহাখালী ডিওএইচএস এলাকার ১ নম্বর সড়কে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আক্তারুজ্জামানের নেতৃত্বে পরিচালিত এ অভিযানে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আক্তারুজ্জামান বলেন, একটি প্রজেক্টে এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহের কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি নকল মাস্ক ক্রয় করেছে। তবে তারা এখনও কোনও মাস্ক সরবরাহ করেনি। সিম কর্পোরেশনের মালিকের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা জানান, বিশ্বব্যাংকের একটি প্রকল্পের আওতায় সরবরাহের জন্য নিম্নমানের নকল এন-৯৫ মাস্ক ক্রয় করেছে সিম করপোরেশন। অভিযানকালে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে প্রায় দুই লাখ ১০ হাজার পিস নকল এন-৯৫ মাস্ক পাওয়া গেছে। নকল মাস্কগুলোর মোড়কে সিভিল গ্রেড লেখা রয়েছে, অথচ এগুলো স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের ব্যবহারের জন্য সরবরাহের কথা।

জানা গেছে, মাস্কের বাক্সের গায়ে লেখা এফডিএ, সিই সার্টিফাইড। কিন্তু এফডিএর ওয়েবসাইটে এই কোম্পানির নামই নেই। মাস্কে পাঁচটি লেয়ার বা স্তর থাকার কথা থাকলেও আছে চারটি, তাও একেবারে পাতলা। এসব মাস্ক আমদানিতে ওষুধ প্রশাসনের অনুমতিও নেয়া হয়নি। সরকারি কেনাকাটায় তিনটি কমিটির সুপারিশ প্রয়োজন হলেও এ ক্ষেত্রে কমিটিই করা হয়নি।

জানা গেছে, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই ইআরপিপি প্রকল্পে দুই লাখ ১০ হাজার পিস কেএন-৯৫ মাস্ক সরবরাহ করেছে সিম করপোরেশন। দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করার জন্য প্রকল্পের আওতায় প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি করা হয় গত ১৮ এপ্রিল। তবে তাদের মাস্কের মান যাচাই প্রক্রিয়াতে ছিল না কোনো স্বচ্ছতা।

এছাড়া মাস্কের পাশাপাশি এক হাজার ৫৫০টি ইনফ্রারেড থার্মোমিটারসহ প্রকল্পের সঙ্গে তাদের চুক্তির মোট মূল্য ছিল ৯ কোটি ২০ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এরই মধ্যে তাদের প্রকল্প খাত থেকে পরিশোধ করা হয়েছে আট কোটি ২৮ লাখ ৫৪ হাজার টাকা, যা মোট চুক্তির টাকার ৯০ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের ১১শ কোটি টাকার ইআরপি প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে এরই মধ্যে সরিয়ে দেয়া হয়েছে প্রকল্প প্রধান ডা. ইকবাল কবীরকে। তার সময়েই এসব দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন নতুন প্রকল্প প্রধান।

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on: