স্ত্রীকে বোন বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি দিলেন শিক্ষক

জামালপুরে এবার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে মুক্তিযোদ্ধা কোটার সুবিধা নিয়ে চাকরি পাইয়ে দিতে নিজের স্ত্রীকে বোন বানিয়েছেন এক স্কুল শিক্ষক। অভিযুক্ত স্কুল শিক্ষক আশরাফুল আলম শুধু নিজের স্ত্রীকেই বোন বানাননি। নিজের খালাতো বোনকেও নিজের আপন বোন হিসেবে দেখিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটার সুবিধা নিয়ে চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন। এ নিয়ে জামালপুরে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

শিক্ষক আশরাফুলের বাবা সহিদুর রহমান একজন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধা সহিদুর রহমান ও তাঁর ছেলে আশরাফুলের বাড়ি জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার রবিয়ার চর গ্রামে। আশরাফুল আলম স্থানীয় মাদারের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। তিনি নিজেও মুক্তিযোদ্ধা কোটায় শিক্ষকতার চাকরি পেয়েছেন।

নিজে চাকরি পাওয়ার পরে আশরাফুল তার স্ত্রী ও খালাতো বোনকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা কোটা ব্যবহার করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে চাকরি পাইয়ে দেন। এ কাজের জন্য তিনি তার বাবার মুক্তিযোদ্ধা সনদ ব্যবহার করেন। এ ক্ষেত্রে প্রতারক আশরাফুল নিজের স্ত্রী নাসরিন আক্তারকে বোন পরিচয় দেন। খালাতো বোন শাপলা আক্তারকেও নিজের আপন বোন হিসেবে পরিচয় দেন তিনি। আর এ কাজ হাসিল করতে তিনি বেঁছে নেন ভয়াবহ প্রতারণার।

আশরাফুলের স্ত্রী নাসরিন প্বার্শবর্তী খেয়ার চরে ও খালাতো বোন শাপলা আক্তার টুপকার চরে দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন।

এ ঘটনায় সম্প্রতি আশরাফুলের স্ত্রী নাসরিন আক্তার ও খালাতো বোন শাপলা আক্তারের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন উপজেলার নয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সরন মিয়া।

অভিযোগকারী সরন মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, আশরাফুল আলম চাকরি দেয়ার কথা বলে অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। আশরাফুল তার বাবার মুক্তিযোদ্ধা কোটার সনদ ব্যবহার করে এ প্রতারণা করে আসছে। ঘটনাটি ফাঁস হওয়ায় আশরাফুল এখন এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন।

এব্যাপারে বকশীগঞ্জের ইউএনও আ স ম জামশেদ খোন্দকার বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে জামালপুর শিক্ষা কার্যালয় থেকে পাওয়া কাগজপত্র অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, আশরাফুল, নাসরিন ও শাপলা ২০১৬ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে যোগদেন। তিনজনই জন্মসনদসহ বিভিন্ন কাগজপত্রে বাবা হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা সহিদুর রহমানের নাম উল্লেখ করেন।

এ বিষয়ে বক্তব্য নেয়ার জন্য নানা ভাবে চেষ্টা করেও আশরাফুলের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে আশরাফুলের খালাতো বোন শাপলা আক্তার বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় আমার চাকরি হয়েছে কিনা, আমি জানিনা। আশরাফুল ভাই আমার চাকরির ব্যাপারে যোগাযোগ করেছেন। তিনি আমার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকাও নিয়েছেন।

শাপলা আক্তার আরও বলেন, নাসরিন আক্তার আমার বোন না। নাসরিন আশরাফুলের স্ত্রী।

এ ব্যাপারে জামালপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক বলেন, ওই তিনজন মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নিয়েছেন। প্রতারণার অভিযোগ উঠায় এর আগেও এ নিয়ে তদন্ত হয়েছিল। কিন্তু তার ফলাফল কি হয়েছিল, তা আমার জানা নেই। সূত্র- প্রথম আলো

 

টাইমস/এসএন

Share this news on: