ক’দিন আগে মায়ের বুকের দুধ পান করা শিশুকন্যা ধর্ষণের শিকার!

“থানায় আনার পর চেয়ারের ওপর প্রায় নিঃসাড় অবস্থায় পড়ে ছিলো ৫/৬ বছরের পুতুলের মতো ছোট্ট মেয়েটি। ঈষৎ মেলা চোখজোড়ায় অভিব্যক্তিহীন ভাসাভাসা দৃষ্টি। অন্যদিকে আত্মজার দুর্ভাগ্যের উপাখ্যান বর্ণনা করতে গিয়ে ঘনঘন চোখ মুছতে থাকেন মালেকা বেগম। তার যে সর্বনাশ ঘটে গেছে। ক’দিন আগেও যেই মেয়েকে বুকের দুধ পান করিয়েছেন, সেই শিশুকন্যাই ধর্ষণের শিকার হয়েছে। কান্নার দমকে বারবার রুদ্ধ হয়ে আসে মাঝবয়েসী নারীর কণ্ঠ। আমাদের প্রশ্নের জবাব দেন আর থেকে থেকে হাহাকার করে ওঠেন "আমার সোনার চানের এতবড় সর্বনাশ যে করছে, তাকে দুনিয়ায় ও পরকালে আল্লাহ তার বিচার করুক"।

সোমবার বিকালে নিজের ফেসবুকে একটি পোস্ট এই কথাগুলো লিখেছেন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. আনোয়ার হোসেন শামীম। রাঙ্গুনিয়ায় ৬ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের ও অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়ে ফেসবুকে পোস্টটি করেন তিনি।

বাংলাদেশে টাইমস- এর পাঠকদের জন্য তার স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হল।

ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, “শিশুশ্রেণির ছাত্রী ছোট্ট মিনু আক্তার (ছদ্মনাম)। পুরুষ ও নারীর পার্থক্য ঠিকমতো বুঝে ওঠার আগেই মানবরূপী এক পশুর লালসার শিকার হতে হয়েছে যাকে। প্রতিদিনকার রুটিনমতো খেলতে গিয়েছিলো বাড়ির পার্শ্বস্থিত বাগানে। আর সেখানেই তার ওপর কেয়ারটেকার খালেকের লোলুপ দৃষ্টি। বিস্কুট খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে মেয়েটিকে তিনি নিয়ে যান বাগানের নির্জন প্রান্তে। তারপর...। দুর্বল দুটি হাতের বাঁধা এবং মর্মবিদারক অনেকগুলো আর্তচিৎকারকে উপেক্ষা করে মানুষরূপী এক হায়েনার নির্মমতা। জেনে অবাক হবেন, ধর্ষক খালেকের একমাত্র মেয়ের বয়সও কিন্তু কাকতালীয়ভাবে মিনুরই সমান। ৬ বছর। মেয়েটির ওপর জান্তব অত্যাচারে মেতে ওঠার সময় একবারও কি একই বয়সী নিজের মেয়ের প্রতিচ্ছবিটি ভেসে ওঠেনি তার মানসপটে!!

মালেকা বেগমের ফরিয়াদ অনুযায়ী এই অপরাধে পরকালে কি কি বিচার হবে, আমার জানা নেই। ধর্মীয় গ্রন্থে নিশ্চয়ই এ সম্পর্কে সবিস্তার বর্ণনা দেওয়া আছে। কিন্তু চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের সম্মানিত অভিভাবক, পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক, পিপিএম স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী দুনিয়ায় বিচারের বন্দোবস্ত আমরা ইতোমধ্যে করে ফেলেছি। ধর্ষিতার ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অনতিবিলম্বে আমাদের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন ধর্ষক আব্দুল খালেক (৩৫)। আমাদের কাছে প্রাথমিকভাবে এবং পরবর্তীতে বিজ্ঞ আদালতের নিকটও ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে অপরাধ স্বীকার করেছেন তিনি। আশা করি, এবার আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তিই নিশ্চিত হবে তার।

খালেককে গ্রেপ্তার করার পর জিজ্ঞাসাবাদে বের হয়ে আসে আরো ভয়ঙ্কর ঘটনা। এর আগেও একাধিক শিশুর দিকে লোলুপ হাত বাড়িয়েছিলেন তিনি। এক শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে একবার তাকে জুতাপেটাও হজম করতে হয়। তার বক্তব্যের অসামঞ্জস্যতায় আরো অনেক জঘন্য ঘটনা আড়াল করার চেষ্টার লক্ষণও ফুটে উঠে। সবদিক বিবেচনায় আমার মনে হয়েছে, আব্দুল খালেক বিকৃত রুচিসম্পন্ন, শিশুদের প্রতি বিকৃত যৌনতায় আসক্ত একজন ক্রমিক শিশুধর্ষক। স্থানীয় ইউপি সদস্য এবং জনসাধারণের সাথে কথা বলেও তার চরিত্রের এই জঘন্য দিকের প্রমাণ মেলে। জানতে চেয়েছিলাম, এই প্রায় দুগ্ধপোষ্য শিশুর মধ্যে তিনি কি আকর্ষণ খুঁজে পেয়েছেন! "আমার তাকে ভাল লাগতো" খালেকের নির্বিকার জবাব।

সাধারণত দেখা যায়, একেকটা শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটার পর ধর্ষকের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে বিভিন্ন পক্ষের মিটিং, মিছিল, মানববন্ধন ইত্যাদি ইত্যাদি। একসময় হয়তো পত্রিকার পাতায় বড় অক্ষরের শিরোনাম তৈরি করে আসামি গ্রেপ্তার হন। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ, আমরা কোন মিছিল, সমাবেশ বা বড় শিরোনামের অপেক্ষা করিনি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘৃণ্য এই অপরাধীকে আইনের আওতায় এনেছি। কিন্তু তবুও প্রশ্ন থেকে যায়, এরপর ? আবারো অন্য কোন মিনুর দুর্ভাগ্যের উপাখ্যান? আবারো পুলিশ, উকিল, আদালতের কর্মযজ্ঞ। মিছিল, মিটিং, সমাবেশ। তারপর কোন এক কুক্ষণে আরো এক নিষ্পাপ মিনু, আরেক অমানুষ খালেক...! সকলের প্রতি অনুরোধ থাকবে- আপনার কন্যাশিশু কোথায় যাচ্ছে, কে তার সাথে কথা বলছে, কে ভিন্ন উদ্দেশ্যে কোলে নিচ্ছে, এ বিষয়গুলো একটু ভালমতো লক্ষ রাখুন। বয়স কমপক্ষে ১২ হবার আগ পর্যন্ত যতটা সম্ভব তাকে চোখে চোখে রাখুন। আব্দুল খালেকেরা কিন্তু সবজায়গায়, সব সমাজেই ঘাপটি মেরে লুকিয়ে আছেন।

প্রজাপতির ন্যায় উড়ে বেড়ানো শিশুদের দেখা আমার পছন্দের দৃশ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম। আর অপছন্দ করি, কিলবিল করতে থাকা শূয়োপোকার চাইতেও বেশি ঘৃণা করি এসব খালেককে। বিকৃত রুচির, মনোবিকারগ্রস্ত খালেকদেরকে। শিশু ধর্ষণের মতো অমানবিক, বর্বরোচিত কাজের এটাই হোক শেষ ঘটনা।”

উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় ৬ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে আবদুল খালেক (৩৫) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার দুপুরে উপজেলার শিলক থেকে ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের পর বিকালে আদালতে প্রেরণ করা হয়। আসামি আদালতে ধর্ষণের ঘটনা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

গ্রেপ্তার আবদুল খালেকের বাড়ি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের গাবতল এলাকায়। তিনি পদুয়া ইউনিয়নের নারিশ্চা এলাকায় মো. হাসান নামে এক ব্যক্তির বাগানে কেয়ারটেকার হিসেবে চাকরি করতেন। এর আগেও একাধিক শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এক শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে একবার তাকে জুতাপেটাও করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সরকারের ধারাবাহিকতার কারণে এত উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে : কাদের May 18, 2024
img
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবল ঝড়ে সাতজনের প্রাণহানি May 18, 2024
img
রাঙামাটিতে দুর্বৃত্তের গুলিতে ইউপিডিএফ কর্মীসহ নিহত ২ May 18, 2024
img
সৌদিতে চলতি বছরে প্রথম বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু May 18, 2024
img
ঢাকায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, জনজীবনে স্বস্তি May 18, 2024
img
ওজন কমাতে চাইলে যে ৪ ফল খাবেন May 18, 2024
img
৮০ কিমি বেগে ঝড়ের আভাস, নদীবন্দরে ২ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত May 18, 2024
img
গাজায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদে লড়াই করতে প্রস্তুত ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা May 18, 2024
img
ডেঙ্গুতে প্রাণ গেল আরও একজনের, চলতি বছরে ৩৩ May 17, 2024
img
গত ৪৪ বছরে সবচেয়ে সাহসী রাজনীতিকের নাম শেখ হাসিনা : ওবায়দুল কাদের May 17, 2024