ক্ষমতার অপব্যবহার করে কথিত বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজিয়ে একের পর এক নিরীহি কাশ্মীরীকে হত্যা করা হয়েছে বলে স্বীকার করেছে ভারতের সেনাবাহিনী। যদিও এধরণের স্বীকারোক্তি বিরল।
যদিও কাশ্মীরের স্থানীয় অধিবাসীদের ওপর ভারতীয় সেনাবাহিনীর অমানবিক নির্যাতন ও বেআইনি হত্যাকান্ড নতুন নয়। বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজিয়ে পরিকল্পিত ভাবে হত্যাকান্ড, ধর্ষণসহ স্পর্শকাতর নানা অভিযোগ ভারতীয় বাহিনীর ওপর। এসব নিয়ে বহুদিন ধরে কাশ্মীর উপত্যকা থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে। কিন্তু বরাবর ভারত সরকার ও দেশটির সেনাবাহিনী কাশ্মীরীদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিল।
কিন্তু এবার ভারতীয় বাহিনী এসব নিয়ে মুখ খুলেছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গত জুলাইয়ে করোনাভাইরাসের কারণে চলা লকডাউনের মধ্যে তিন কাশ্মীরি শ্রমিককে হত্যার সময় ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে। তবে মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, শুধু একটি ঘটনাই নয়, প্রত্যেকটি ঘটনায় ভারতীয় বাহিনীর আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ রয়েছে। তারা সুবিধা পাওয়ার জন্য নিরীহ মানুষকে হত্যা করে।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, গত ১৮ জুলাই ভারতীয় সেনাবাহিনী শোপিয়ানের আমশিপোরা গ্রামে অজ্ঞাত তিন ‘বিদ্রোহীকে’ হত্যা করা হয়। কিন্তু পরে তদন্ত করে দেখা গেছে, তারা রাজৌরি জেলার বাসিন্দা ছিলেন। আরও ওই তিনজনকে সাজানো বন্দুকযুদ্ধের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছিল।
ওই ঘটনায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল রাজেশ কালিয়া বিবৃতিতে বলেছেন, সেনা কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুসারে আমশিপোরা অভিযানের বিষয়ে তদন্ত শেষ হয়েছে। তদন্তে প্রাথমিকভাবে বেশ কিছু প্রমাণ মিলেছে। যাতে মনে হয়েছে, অভিযানের সময় সশস্ত্র বাহিনী বিশেষ ক্ষমতা আইনের (এএফএসপিএ) অধীনে প্রয়োগ করা ক্ষমতার মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
কর্নেল রাজেশ বলেন, তদন্তে প্রাথমিক প্রমাণ এটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, আমশিপোরা অভিযানে নিহত তিন অপ্রমাণিত দোষী হলেন ইমতিয়াজ আহমেদ, আবরার আহমেদ ও মোহাম্মদ ইবরার। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তারা রাজৌরি থেকে ফিরছিলেন। তাদের ডিএনএ প্রতিবেদন আসার অপেক্ষায় রয়েছে। সন্ত্রাস বা এ সম্পর্কিত কর্মকান্ডে তাদের কোনো যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে ওই ঘটনার পর কাশ্মীর ও ভারত জুড়ে বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে মানুষ ফুঁসে উঠে। উপত্যকায় ভারতীয় সেনাদের কর্মকান্ড নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। ওই সময় নিহত ইবরারের চাচাতো ভাই নসিব খাতানা জানান, নিহতরা সবাই একে অপরের চাচাতো ভাই। তারা কাজের উদ্দেশ্যে রাজৌরি থেকে শোপিয়ান গিয়েছিলেন।
এদিকে শুক্রবার ভারতীয় সেনাবাহিনী বেআইনি হত্যাকান্ডের দায় স্বীকারের প্রতিক্রিয়া নসিব খাতানা বলেন, তারা ১৭ জুলাই শোপিয়ান পৌঁছায় এবং ওই রাতেই শেষবার তাদের সঙ্গে কথা হয়েছিল আমাদের। এটা লকডাউনের সময় ছিল, তাই আমরা ভেবেছিলাম তাদের হয়তো কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তবে তাদের কোনও খবর ছিল না। পরে আমরা নিহত তিনজনের ছবি দেখার পর অভিযোগ দায়ের করি। তাদের সন্ত্রাসী বলে দাবি করেছিল সেনাবাহিনী। নিরপরাধ মানুষদের সঙ্গে তারা আর কত অন্যায় করতে পারে?
কাশ্মীরে কর্মরত মানবাধিকার কর্মীদের দাবি, উপত্যকায় ভারতীয় সেনারা আর্থিক সুবিধা ও মেডেলের জন্য বেসামরিক লোকদের হত্যা করে। নিরীহ মানুষদের হত্যা করে সেনারা নিহতদের ‘বিদ্রোহী’ বলে চালিয়ে দেয়। এটা ভারতীয় সেনাদের কাছে যেন কোনো ব্যাপারই না।
টাইমস/এসএন