রংপুরে সর্বোচ্চ রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিতে শহরের অলিগলি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। শনিবার রাত থেকে শুরু হওয়া মুষলধারে বৃষ্টিতে রংপুর নগরীর বেশিরভাগ এলাকায় হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে গেছে। বাড়ি-ঘরে পানি প্রবেশ করায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
রংপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শনিবার রাত ১০টা থেকে রোববার সকাল ১০টা পর্যন্ত ৪৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা গত একশ বছরেও হয়নি। এমন বৈরী আবহাওয়া ও বৃষ্টিপাত আরও দু’একদিন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নগরীর নিচু এলাকার বেশিরভাগ রাস্তা ৩-৪ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। নগরীর বাবু খাঁ ও কামার পাড়া, জুম্ম্পাড়া, কেরানীপাড়া, আলমনগর, হনুমান তলা, মুন্সিপাড়া, গনেশপুর, বাবুখা, কামারপাড়া, বাস টার্মিনাল, নগরীর শালবন, মিস্ত্রিপাড়া, কামাল কাছনা মাহিগজ্ঞ, কলাবাড়ি দর্শনা, মর্ডান মোড়, মুলাটোল মেডিক্যাল পাকার মাথা জলকর নিউ জুম্মাপাড়া, খটখটিয়াসহ অন্তত ৫০টি মহল্লার প্রধান সড়কসহ বাড়ি-ঘর তলিয়ে গেছে এবং আশে-পাশের নিচু এলাকার বাড়িতে পানি প্রবেশ করায় হাজার হাজার পরিবার বাড়ি ঘর ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।
রাত থেকে অবিরাম বৃষ্টিতে বাড়ির ভেতরে পানি ঢুকে পড়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয়রা। বিভিন্ন স্থানে ভারি বর্ষণে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বিদুৎ সংযোগ। জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া মানুষজন সহসাই পাচ্ছে না যাতায়াতের বাহন। মিললেও গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।
জানা গেছে, রাতভর অবিরাম বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের একমাত্র অবলম্বন শ্যামা সুন্দরী ও কেডি ক্যানেল। ভেঙে পড়েছে নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থা। নিষ্কাশন সুযোগ না থাকায় পানিতেই চলছে যাতায়াত। নগরবাসী বলছেন ২৫-৩০ বছরেও এমন বৃষ্টিপাত দেখেননি। ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যাতেও এমন জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়নি।
এদিকে জেলার তিস্তা, করতোয়া, ঘাঘট, যমুনেশ্বরী নদী বিধৌত নিম্নাঞ্চলে আবারও দেখা দিয়েছে বন্যা। তিস্তার ডালিয়া ও কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ভারি বর্ষণ ও আর বজ্রপাতে জেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কৃষি জমি, ফসল আর পুকুর-বিল তলিয়েছে পানিতে।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, বৃষ্টি আরও দু’একদিন অব্যাহত থাকতে পারে। এভাবে বৃষ্টিপাত হলে নগরীর বেশির ভাগ এলাকা তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সূত্র জানিয়েছে, নগরীর পানি নিষ্কাশনের অন্যতম শ্যামা সুন্দরী ক্যানেল বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মানুষজন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তবে ক্যানেলের পানি কমে আসলে ড্রেনেজ ব্যবস্থার মাধ্যমে পানিবন্দি এলাকাগুলো থেকে পানি নেমে যাবে।
টাইমস/এইচইউ