ঝিনাইদহের শৈলকুপায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী উলফাত আরা তিন্নির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়েছে। মামলার পরে এখন পর্যন্ত ৪ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তাররা হলো- শেখপাড়া গ্রামের কনুর উদ্দিনের ছেলে আমিরুল, খলিল শেখের ছেলে নাইম ও লাবিবসহ আরও একজন। তবে মূল অভিযুক্ত জামিরুল ইসলাম পলাতক রয়েছে।
শুক্রবার রাতে নিহত তিন্নির মা হালিমা বেগম বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাটি করেন।
আরও পড়ুন- দুলাভাইয়ের নির্যাতনের পর ঘরে মিলল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর লাশ
নিহত তিন্নি শৈলকুপা উপজেলার শেখপাড়া গ্রামের মরহুম মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ আলীর ছোট মেয়ে। তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, তিন্নির মেজো বোন মিন্নি বনিবনা না হওয়া তার প্রথম স্বামী জামিরুল ইসলামকে কয়েকমাস আগে তালাক দেন। কিন্তু জামিরুল তিন্নির বোনকে তালাক দিতে রাজি ছিলেন না। তালাক দেয়ার ঘটনা নিয়ে তিন্নির সঙ্গেও মিন্নির সম্পর্কও ভালো ছিল না। কারণ মেজ বোন মিন্নির কর্মকাণ্ড তিন্নি ভালো ভাবে নিতেন না। এ নিয়ে দুই বোনের মাঝে প্রায়ই ঝগড়া হতো।
সূত্রটি জানিয়েছে, তিন্নি সব সময় পারিবারিক ঝামেলা এড়িয়ে চলতে চাইতেন। কিন্তু সম্প্রতি তিন্নির মেজ বোন গোপনে দ্বিতীয় বিয়ে করায় ক্ষেপে যান তার আগের স্বামী জামিরুল ইসলাম। দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে তিন্নির সঙ্গেও মিন্নির ঝগড়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জামিরুল প্রায়ই ওই বাড়িতে এসে ঝগড়া করতেন।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সাবেক স্ত্রী গোপনে দ্বিতীয় বিয়ে করায় জামিরুল প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে ওঠে। হয়তো ক্ষোভ থেকেই তিন্নির ওপর হামলা হয়েছে।
কিন্তু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে মিন্নির দ্বিতীয় স্বামী তিন্নিদের বাড়িতে বেড়াতে এলে জামিরুল ওই বাড়িতে হামলা চালায়। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে জামিরুল ও তার সহযোগীরা মিন্নি ও তার দ্বিতীয় স্বামীকে খুঁজতে ওই বাড়িতে ফের হামলা করে। ওই সময় তাদেরকে না পেয়ে মিন্নির ঘরে হামলা চালায় তারা। পরে জামিরুল লোকজন নিয়ে চলে গেলে বাড়ির লোকজন রাত ১১টার দিকে নিজ ঘর থেকে তিন্নির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে।
তিন্নির পরিবারের অভিযোগ, পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে তিন্নি লজ্জায় ও ক্ষোভে আত্মহত্যা করেছে। পরিকল্পিত ভাবে তিন্নিকে হত্যা করা হয়েছে। জামিরুল ঘটনার দিন সন্ধ্যার সময়ও তিন্নিকে ডেকে নিয়ে ক্ষতি করার হুমকি দিয়েছিল।
তবে অভিযুক্ত জামিরুল পলাতক থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তার পরিবারের দাবি, জামিরুলের সঙ্গে বিয়ে থাকা অবস্থায় তিন্নির মেজ বোন মিন্নি অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এ নিয়ে ঝগড়া বিবাদের জেরে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। কিছুদিন পরেই তিন্নির বোন মিন্নি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এ ব্যাপারটি মেনে নিতে পারছিল না জামিরুল। যে কারণে প্রায়ই জামিরুলের সঙ্গে মিন্নি ও তার পরিবারের ঝগড়া হতো। তিন্নির সঙ্গেও জামিরুলের একাধিকবার ঝগড়া ও কথা কাটাকাটি হয়েছে। জামিরুল হত্যা বা পাশবিক নির্যাতন করতেই পারে না। এটা মিথ্যা অভিযোগ।
এদিকে তিন্নি হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে খুলনা-কুষ্টিয়া মহাসড়কে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী অংশ নেন।
এ বিষয়ে শৈলকুপা থানার ওসি (তদন্ত) মহসিন হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, তিন্নির মৃত্যুটি রহস্যজনক। তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রকৃত কারণ বলা যাবে না। তবে তিন্নির মা আটজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৫-৬ জনের নামে শৈলকুপা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন। ওই মামলায় ৪ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মূল আসামি জামিরুল পলাতক রয়েছে।
টাইমস/এসএন