ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়তে চান শিক্ষক আফতাব উদ্দিন

ময়মনসিংহ জেলার একজন খ্যাতিমান শিক্ষক মোঃ আফতাব উদ্দিন মোল্লা। দীর্ঘদিনের শিক্ষকতা জীবনে পালন করেছেন ময়মনসিংহ মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব। এছাড়াও ১৯৮৯ সালে ময়মনসিংহ টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সমন্বয়কারী এবং বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ময়মনসিংহ জেলা শাখার সভাপতির ও সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

এবার অবসর জীবনে ভালুকা উপজেলার ২ নং মেদুয়ারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চাইছেন নিজেকে, বদলে দিতে চাইছেন এলাকাবাসীর ভবিষ্যত। কি তার সেই পরিকল্পনা, কেন তিনি লড়তে চাইছেন আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে, সেই সব কথাই উঠে এসেছে বাংলাদেশ টাইমসের সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে। সাক্ষাতকার নিয়েছেন নাবিল জাহাঙ্গীর। 

বাংলাদেশ টাইমস: আপনি সারাজীবন শিক্ষকতা করেছেন, শিক্ষক হিসেবে আপনার অনেক অর্জন, কিন্তু হঠাৎ করে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে লড়তে চাইছেন কেন?

আফতাব উদ্দিন মোল্লা: বিষয়টা আসলে হঠাৎ করে বলা যায় না। কারণ মানুষের সেবা করাটা একজন মানুষ হিসেবে আমি আমার সব থেকে বড় দায়িত্ব বলে মনে করি। ধর্মীয় দিক থেকেও যদি আপনি দেখতে যান, তাহলেও কিন্তু এর থেকে বড় পুণ্যের কাজ আর হয় না। শিক্ষক হিসেবেও আমি সেই দায়িত্বটাই পালন করার চেষ্টা করেছি।

পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সেবায়, আমার এলাকাবাসীর সেবায়, সব সময় নিয়জিত ছিলাম। এছাড়াও ছাত্র জীবন থেকে আমি নিবেদিত ভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে সক্রিয় ভাবে দায়িত্ব পালন করেছি। ২০০১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত জেলা কমিটির উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য ছিলাম। বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন সম্মানিত সদস্য হিসেবে আছি। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে লড়াকু ভূমিকা পালন করেছি, জামাত-বিএনপি বিরোধী আন্দোলনেও সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল।

তবে এতদিন শিক্ষকতা নিয়ে আমাকে অনেক বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। যেহেতু অতি সম্প্রতি শিক্ষকতা পেশা থেকে অবসর নিয়েছি তাই পুরোটা সময় মানুষের সেবায় ব্যয় করার একটা সুযোগ আছে, আমি সেটা কাজে লাগাতে চাই।

এখন আমার এলাকাবাসী, বিশেষ করে এলাকার শিক্ষিত সমাজ চায় শেখ হাসিনার বাংলাদেশে গ্রামগুলিতেও শহরের মতো আধুনিক নাগরিক সেবা নিশ্চিত হবে। তারা মনে করে একজন সৎ, নিষ্ঠাবান, শিক্ষিত এবং চৌকশ ব্যক্তি যদি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে তাহলে সেটা সম্ভব হবে। কারণ অযোগ্য ব্যক্তির নেতৃত্বে উন্নয়ন সম্ভব না। সেকারণে সবার অনুরোধে আমি আসন্ন ২নং মেদুয়ারী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি।

বাংলাদেশ টাইমস: মেদুয়ারী ইউনিয়নকে আধুনিক করে গড়ে তুলতে আপনার পরিকল্পনা কি?

আফতাব উদ্দিন মোল্লা: ভালুকা থানার মধ্যে আমার ইউনিয়নে সব থেকে কম রাস্তা বা রাস্তা-ঘাট নাই বললেই চলে। এই কথা আমি বিভিন্ন জায়গায় বলেছি, এমপি সাহেবকে জানিয়েছি, কিন্তু বর্তমান চেয়ারম্যানের সদিচ্ছা কিংবা দক্ষতার অভাবে সেটা হচ্ছে না। এই ইউনিয়নে ‘কডু মার্কেট থেকে জামাইবাড়ি’ পর্যন্ত যে রাস্তাটা আছে, সেটাই একমাত্র পাকা সড়ক। ভালুকার মাটিতে একটু বৃষ্টি হলেই চলাচলে খুব অসুবিধা দেখা দেয়, জন দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়।

ইতিমধ্যে অবশ্য এলাকায় বেশ কয়েকটি শিল্প-কারখানা হয়েছে, কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা আশানুরূপ না হওয়ায় অন্যান্য অনেক প্রতিষ্ঠান ইচ্ছা থাকলেও এখানে তাদের শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে পারছে না। আবার যেহেতু শিল্প-কারখানা আছে রাস্তায় মানুষের চলাচল এবং যান চলাচল বেড়ে গেছে, সেই সোথে ভাল রাস্তা না থাকায় দুর্ভোগও রাড়ছে। অন্যদিকে রাস্তা-ঘাট যদি ভাল থাকে, আরও বেশি শিল্প-কারখানা গড়ে উঠবে, আমার এলাকায় অর্থনীতি আরও বেগবান হবে। তাই আমি মনে করি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সার্বিক উন্নয়নের প্রধান শর্ত।

বাংলাদেশ টাইমস: বর্তমান প্রেক্ষাপটে যোগাযোগ ব্যবস্থা ছাড়া আপনার ইউনিয়নের অন্যান্য প্রধান সমস্যা কোনগুলি?

আফতাব উদ্দিন মোল্লা: করোনাকালীন সময়ে বাংলাদেশে যে কয়টা ইউনিয়ন কলঙ্কিত হয়েছে, আমার এলাকা তার মধ্যে অন্যতম। এটা আমাদের জন্য লজ্জার। মহামারীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গরীব দুঃখীদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বা ত্রাণ সামগ্রী দিয়েছেন। কিন্তু আমাদের বর্তমান চেয়ারম্যানের ব্যক্তি স্বার্থের কারণে সেগুলি সাধারণ মানুষের কাছে সঠিক ভাবে পৌছায় নাই। উনার নিন্দা করা আমার উদ্দেশ্য নয়, কিন্তু উনার বিরুদ্ধে চাল আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হয়েছিল, এখন অবশ্য জামিনে আছেন। তো আমি মনে করি ইউনিয়ন পরিষদকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে, যাতে তৃণমূল পর্যায়ে সুযোগ সুবিধাগুলি সঠিক ভাবে পৌঁছানো যায়। আমি সেই সময় নিজের উদ্যোগে প্রায় হাজার খানেক লোকের খাবারের ব্যবস্থা করেছি, চাল-ডাল দেয়ার চেষ্টা করেছি।

এছাড়াও দেখেন মিল-কারখানা হওয়ার দরকার আছে সেটা ঠিক, কিন্তু যদি সেগুলির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিক না থাকে তাহলে সেটা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এইসব কারখানাগুলির বিষাক্ত বর্জ্যের কারণে আমাদের কৃষি জমির ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমি আরও মিল-কারখানা সৃষ্টির সুযোগ যেমন করব, ঠিক তেমনি কিন্তু পরিবেশ রক্ষার ব্যাপারেও দায়িত্বশীল পদক্ষেপ নেব। সরকারের যে নীতিমালা আছে সে নীতিমালা মেনে কারখানা চালাতে হবে, বর্জ্য দিয়ে কৃষি জমির ক্ষতি করতে দেয়া হবে না। পরিবেশের ক্ষতি করা যাবে না, এটা খুব সহজ হিসাব, পরিবেশ ধ্বংস হয়ে গেলে তো আমাদেরও অস্তিত্ব থাকবে না।

নেশা বর্তমানে সব জায়গাতেই একটা বড় সমস্যা। আমার ইউনিয়নের যুব সমাজকে রক্ষা করতে হলে ব্যাপক হারে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। মসজিদের ইমাম, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি, স্কুলের শিক্ষক এবং অভিভাবকদের সাথে নিয়মিত সভা করার পরিকল্পনা আছে। যাতে করে সর্বস্তরে সচেতনতা ছড়িয়ে দেয়া যায়, যাতে সন্তান নেশাগ্রস্ত হলে অভিভাবকগণ তার লক্ষণগুলি বুঝতে পারে, যাতে প্রাথমিক পর্যায়েই এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। তারপরেও ইউনিয়নের যারা ইতিমধ্যে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে বা ভবিষ্যতে এই মরণ ব্যাধির শিকারে পরিণত হবে, আমি সকল ভাবে তাদেরকে সহায়তা করবো যাতে তারা এর থেকে বেড়িয়ে আসতে পারে।

অনেক সময় দেখা যায় অর্থের অভাবে একটা ছাত্র তার পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারছে না, সেক্ষেত্রে তাকে কিভাবে স্বাবলম্বী করে তোলা যায়, আমি মনে করি সেই দায়িত্বটাও কিন্তু চেয়ারম্যানকে নিতে হবে।

বাংলাদেশ টাইমস: আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া বা নির্বাচনে জয়ী হওয়ার ব্যাপারে আপনি কতটা আত্মবিশ্বাসী?

আফতাব উদ্দিন মোল্লা: আমাদের জননেত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে বিচক্ষণতার সাথে দেশ এবং দল পরিচালনা করছেন, তাতে আমি মনোনয়ন প্রাপ্তির ব্যাপারে অত্যন্ত আশাবাদী। তিনি যোগ্য প্রার্থীকেই মনোনয়ন প্রদান করবেন। আমি মনে করি যোগ্যতা, জনপ্রিয়তা, সক্রিয় ভাবে দলীয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ কিংবা নিঃস্বার্থ জনসেবা এইসব বিষয়ে আমি এগিয়ে আছি। তাই আমি শতভাগ আশা রাখি।

আমি যদি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে পারি তাহলে ব্যাপক ভোটে জয় লাভ করবে ইনশাআল্লাহ। আমি গর্ব করে বলতে পারি যে আমি নির্বাচন করলে ভোটাররাও আরও বেশি কেন্দ্রমুখী হবে। ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় ২৩ হাজার, সেখানে সব মিলিয়ে ১৫ হাজার ভোট আসি পাবো ইনশাআল্লাহ।

নিঃস্বার্থ জনসেবার জন্য আমাদের পরিবারের সুনাম রয়েছে। আমার বাবা মরহুম ডাঃ নূর হোসেন মোল্লা বিপুল ভোটে ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা করেছেন। আমার চাচারও জনসেবার খ্যাতি রয়েছে। এখন এলাকার মানুষ বলতেসে যে, একজন শিক্ষিত ব্যক্তি হিসেবে আপনার এগিয়ে আসা উচিত, আপনি চেয়ারম্যান হলে এলাকার উন্নয়ন হবে।

কেউ কোনোদিন বলতে পারবে না যে আমি কারো দুই টাকা আত্মসাৎ করেছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আদর্শ করেই আমি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। তিনি তার জীবন, যৌবন, পরিবার কিংবা নিজের দিকে না তাকিয়ে বাংলার মানুষকে ভালবেসেছেন। একজন ব্যক্তি মানুষকে এত ভালবাসতে পারেন, সেটা আমাকে সব সময় অনুপ্রেরণা যোগায়। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আমিও নিজেকে মানুষের সেবায় বিলিয়ে দেয়ার চেষ্টাই সর্বদা করে এসেছি। এছাড়া এই বয়সে এসে আমার আর কিছু চাওয়ার কিংবা পাওয়ার নেই। আমি আগেও বলেছি যে মানুষের সেবা করার থেকে বড় পুণ্য আর কিছু হয় না।

বাংলাদেশ টাইমস: আমাদের সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।

আফতাব উদ্দিন মোল্লা: আপনাকেও ধন্যবাদ। 

 

টাইমস/এনজে/এসএন

Share this news on: