দেশে মোট রেলক্রসিংয়ের ৮২ ভাগই অরক্ষিত। আবার, রেল দুর্ঘটনার ৮৩ শতাংশরই প্রাণ যাচ্ছে ঝুঁকিপূণ এসব ক্রসিংয়ে। মরণফাঁদ এসব রেলক্রসিংয়ে প্রাণহানি ঘটলেও রেল কর্তৃপক্ষ দায় নিতে চায় না।
নীলফামারি জেলায় প্রতিমাসেই মৃত্যু ঘটছে রেলক্রসিংয়ে। গত ১২মাসে ১৩জন মারা গেছে এই মরনফাঁদে। এ জেলায় ১২টি অরক্ষিত রেলক্রসিং থাকায় প্রতিনিয়ত ঘটছে দূর্ঘটনা।
রেল আর সড়কের সংযোগস্থলকে বলা হয় লেভেল ক্রসিং। রেলওয়ের তথ্য বলছে, সারাদেশে এমন ৮২ শতাংশ ক্রসিংয়ে নেই গেটম্যান। নেই কোনো গেট কিংবা লোহার প্রতিবন্ধক।
রেল পুলিশের কাছে ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল দুর্ঘটনার তথ্য পাওয়া যায়। এ ছয় বছরে রেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ১৭৫ জন। এর মধ্যে ১৪৫ জনই প্রাণ হারিয়েছেন রেলক্রসিংয়ে। ২০২০ সালে মারা গেছে ৩৪ জন। এর মধ্যে ৩৩ জনেরই মৃত্যু হয়েছে রেলক্রসিংয়ে। এ হিসাবে রেললাইনে কাটা পড়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
বাংলাদেশ রেলওয়ের সর্বশেষ তথ্য বলছে, দেশে রেল ক্রসিং রয়েছে আড়াই হাজার। এগুলোর মধ্যে অনুমোদন নেই ১ হাজার ৩২১টির। অনুমোদনহীন ক্রসিংয়ের বেশির ভাগই এলজিইডির সড়কে। আরও আছে পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি করপোরেশন এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের সড়কে।
অনুমোদনহীন রেলক্রসিং কার দায়িত্বে থাকবে—এ নিয়ে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে চলছে টানাহেঁচড়া। দায় নিতে রাজী নন স্বয়ং রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনও। তিনি বলেন, 'স্থানীয় সরকার যদি রাস্তা করেন, তাহলে স্থানীয় সরকার এর দায়িত্ব নিবে। যদি পৌরসভা করে তাহলে পৌরসভা দায়িত্ব নিবে। আপনি কেন একজনের দায়িত্ব অন্যজনের কাছে চাপাবেন।'
রেললাইনের ওপর দিয়ে যাওয়া সড়কে উড়ালপথ নির্মাণ এবং ক্রসিংয়ে পথরোধকের জন্য গেটম্যানের পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তির কথা বললেন এই গবেষক।
বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ সাইফুন নেওয়াজ বলেন, 'রেল কতৃপক্ষ আর সড়ক কতৃপক্ষের মধ্যের সম্নতা দূর করতে হবে। এর পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে আমরা সিগনাল ও সাইরেন দু'টাই সচল করতে হবে। যাতে ট্রেন আসার সময় এই দু'টি সচলভাবে কাজ করে। তাহলেই গাড়ি চালকরা সতর্ক হতে পারবে।'
রেলওয়ে এবং সড়কের উন্নয়নে একের পর এক প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। এসব খাতে বাড়ছে সরকারের ব্যয়। কিন্তু মানুষের জীবন রক্ষায় সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে নেই সমন্বিত উদ্যোগ। ফলে রেলক্রসিংয়ে থামছে না মৃত্যুর মিছিল।